Friday, August 22, 2025

কেন্দ্রীয় কর-রাজস্বের প্রাপ্য বৃদ্ধির দাবি! ষোড়শ অর্থ কমিশনের কাছে সওয়াল মুখ্যমন্ত্রীর

Date:

Share post:

রাজ্য থেকে সংগ্রহ করা কেন্দ্রীয় কর এবং রাজস্বে প্রাপ্য অংশ বাড়ানোর জন্য ষোড়শ অর্থ কমিশনের কাছে দাবি জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নবান্নে ষোড়শ অর্থ কমিশনের সভাপতি অরবিন্দ পানাগরিয়া সহ অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে একাধিক যুক্তি দিয়ে জোরালো ভাবে এই দাবি জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বকেয়ার প্রসঙ্গ তুলে অর্থ কমিশনের কাছে হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। বৈঠকের পর কমিশনের সদস্যরা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানে অরবিন্দ পানাগারিয়া জানান, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ ক্রমে রাজ্যগুলি বর্তমানে কেন্দ্রীয় করের ৪১ শতাংশ পেয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গ সহ অনেক রাজ্যই তা বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে। নিজের দাবির স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের জনঘনত্ব অনেক বেশি। দ্রুত গতিতে নগরায়ন হচ্ছে। এইসব বিষয়গুলিকে সামনে রেখে রাজ্যের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে কেন্দ্রীয় করে রাজ্যের অংশীদারিত্ব বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেন।

এদিকে ষোড়শ অর্থ কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার মত প্রকল্পে রাজ্যের বঞ্চনা ইস্যুতে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী দফতর ও প্রকল্প ধরে ধরে তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান কিভাবে বাংলাকে বঞ্চনা করা হচ্ছে। অর্থ কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা আর্থিক শৃঙ্খলা মেনে চলি। এক লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে পাইনি, বহুবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। রাজ্য থেকে প্রতিনিধিরাও গিয়েছিল তা সত্ত্বেও পাওয়া যায়নি। সোশ্যাল সিকিউরিটি স্কিম–যা অন্য কোন রাজ্য করেনি তা আমরা করেছি। তাতেও আমাদের কোন টাকা দেওয়া হচ্ছে না। কন্যাশ্রী, খাদ্য সাথী প্রকল্প জন্য ১৪ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়নি। বন্যা নিয়ন্ত্রণে কোন অর্থ দেওয়া হয়নি। সুন্দরবনের জন্য কোন অর্থ দেওয়া হয়নি আজ পর্যন্ত।”

অন্যদিকে অর্থ কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে নদী ভাঙ্গন সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিন বলেন উত্তর ভারতে l যে সমস্ত নদীগুলো আছে সেগুলোর ধাক্কাতে আমাদের এইখানকার নদীর জল বেড়ে যায়। জি এস টি থেকে যে কর নেয়া হয় তার চল্লিশ শতাংশ আমাদের ফেরত দেওয়া হয়। আমরা চাই ৫০ শতাংশ। বাংলা কৃষিতে এক নম্বর। আলু চাষে দু’নম্বর। সবজি উৎপাদনে এক নম্বর। রাস্তা করার টাকা এখনো দেয়া হয়নি। আমরা নিজেদের টাকাতেই রাস্তা করছি। ১০০ দিনের কাজের টাকাও দেয়া হয়নি। যে এই ১০০ দিনের কাজের টাকা আমরা কর্মশ্রী প্রকল্প নাম দিয়ে টাকা দিচ্ছি এবং কাজ হচ্ছে। আবাস যোজনার কিছুই দেয়া হয়নি। গঙ্গার ভাঙ্গন মোকাবিলা করছি তবুও কেন্দ্রীয় সরকারের কোন সাহায্য পাচ্ছি না। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া হলো না গঙ্গাসাগর মেলাকে। আমরা ওখানে ব্রিজ তৈরি করব। আদিবাসীদের সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি এখানে হয়েছে অথচ। অথচ কোন অর্থই দেওয়া হয়নি।কেন্দ্রের সব নির্দেশ মানার পরেও শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণেই রাজ্যের মানুষ কে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন এক একটা প্রকল্পের কাজ দেখার জন্য একাধিকবার কেন্দ্রিয় দল রাজ্যে এসেছে, তারপরেও বরাদ্দ ছাড়া হয় নি। এমনকি গত কয়েক বছরে একাধিকবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে রাজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেন্দ্রের সাহায্য মেলেনি বলেও জানান তিনি। একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনা প্রভৃতি নিয়ে মন্ত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরেও কোনো টাকা দেওয়া হয় নি। উল্টে শুধুমাত্র নামকরণের অজুহাত দিয়ে টাকা আটকে রাখা হয়েছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।

এখনও পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়নি। এর মধ্যেই ষোড়শ অর্থ কমিশনের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে দেখে সেখানকার আর্থিক দাবিদাওয়া সংক্রান্ত বিষয়গুলি বুঝে নিতে চাইছেন। সেই কারণেই বুধবার রাজ্য সফরে এসে কমিশনের সদস্যরা সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদেরও বৈঠকে ছিলেন।নবান্নে বৈঠকের আগে অর্থ কমিশনের সদস্যরা বণিক সমাজ পঞ্চায়েত পৌরসভার মতো স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন। আগামী মে মাস পর্যন্ত ষোড়শ অর্থ কমিশন বিভিন্ন রাজ্য পরিদর্শন করে সরকার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের মতামত নেবেন। তারপর কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নিজেদের সুপারিশ জমা করবেন।

অর্থ কমিশন বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদানের পরিমাণ, কর ও রাজস্বের সুষম বন্টন নিয়ে সুপারিশ করে। ফলে ষোড়শ অর্থ কমিশনের রাজ্য সফর যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আর সে কথা মাথায় রেখেই একঝাঁক মন্ত্রী নিয়ে বুধবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীরা ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন মুখ্যসচিব, অর্থ সচিব, মুখ্যমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা প্রমুখ।

আরও পড়ুন- উদ্বেগজনক! বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বাড়লেও ঊর্ধ্বমুখী বাঘ মৃত্যুর গ্রাফ

spot_img

Related articles

শুক্র-শনিতে অতি ভারী বৃষ্টির কমলা সতর্কতা, বন্ধ হতে পারে চারধাম যাত্রা!

রাত পেরিয়ে সকালেও কমল না দুর্যোগ। উত্তরাখণ্ডের অতি ভারী বৃষ্টির ব্যাহত চারধাম যাত্রা (Char Dham Yatra)। বৃহস্পতিবার একাধিক...

ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগে ৫ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

ভোটার লিস্টে (Voter list) অনিয়মের অভিযোগে ৫ আধিকারিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিল রাজ্য। ২ জন ডব্লুবিসিএস অফিসার-সহ ৪...

গৃহস্থের বাড়িতে চুরির দায়ে ধৃত বিজেপি মণ্ডল সভাপতির ভাই সহ ৪ 

বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগ এক গৃহস্থের বাড়িতে চুরি ও লুটপাটের ঘটনায় পুলিশের জালে বিজেপির মণ্ডল সভাপতির ভাই-সহ...

সোনা জয়ী অভিনবকে শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর

এশিয়ান শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ জুনিয়র (Asian Shooting Championship) এয়ার রাইফেল বিভাগে বাংলার অভিনব সাউয়ের (Abhinaba Shaw)। তাঁর এই সাফল্যই...