জগন্নাথ মন্দিরের কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে দিঘায় এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। আজ, বুধবার বেলা বারোটা নাগাদ নবনির্মিত মন্দির ও তার সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখবেন মুখ্যমন্ত্রী। দ্রুততার সঙ্গে এগোচ্ছে মন্দির নির্মাণের কাজ। পরিকল্পনামাফিক কাজ কতদূর এগোল সেটাই তিনি সরেজমিনে খতিয়ে দেখবেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শও দেবেন। মঙ্গলবার দুপুরের কিছু পরে দিঘায় পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। হেলিপ্যাড সংলগ্ন অঞ্চলে তাঁকে দেখার জন্য জমায়েত হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁর জন্য ৮ থেকে ৮০ সকলের ছিল উচ্ছ্বাস ও উন্মাদনা। আর হেলিকপ্টার দিঘার মাটি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানান মহিলারা। হেলিকপ্টার গ্রাউন্ডের বাইরে তাঁকে একবার দেখার জন্য, ছোঁয়ার জন্য ছিল আকুলতা। মুখ্যমন্ত্রীও কাউকে নিরাশ করেননি। গাড়িতে না উঠে তিনি হাঁটতে শুরু করেন জনতার মাঝে। তাঁদের ভিড়ে মিশে যান। সকলেই তাঁকে ছুঁতে চাইছেন। সঙ্গে ফটাফট ছবি উঠছে মোবাইলে। কেউ-বা করছেন সেলফির আবদার। সবকিছু সামলে এগিয়ে চলেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee)।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই দিঘা সফরে শুধু নির্মীয়মাণ জগন্নাথ মন্দির ঘুরে দেখাই নয়, মন্দির ও তার সংলগ্ন অংশের কোথায় কী ধরনের নির্মাণ হচ্ছে, কত দিনে তা শেষ হবে, কী ধরনের জিনিস ব্যবহার করা হচ্ছে নির্মাণকাজে— সবই তিনি যাচাই করবেন। দিঘার বুকে এই ধরনের এক বিরাট কর্মযজ্ঞ যা আগামী দিনে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিতে চলেছে, তার নির্মাণকাজ নিখুঁত হোক এটাই চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জগন্নাথ মন্দিরের নির্মাণ সম্পন্ন হলে বদলে যাবে দিঘা, বদলে যাবে পূর্ব মেদিনীপুর। একই সঙ্গে সমুদ্র ও জগন্নাথদেবের দর্শন— দুই-ই হবে। পর্যটনের মানচিত্রে আরও বেশি করে নিজেদের ধার ও ভার বাড়াতে সক্ষম হবে দিঘা। আর সেই সঙ্গে আসবে শক্ত অর্থনৈতিক কাঠামো। সবদিক মাথায় রেখেই তাই একেবারে পরিকল্পনামাফিক কাজে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতায় থাকলেও প্রতিমুহূর্তের কাজের আপডেট তিনি নিয়ে থাকেন। এবার একেবারে সরেজমিনে পরিদর্শন।

আরও পড়ুন- নির্বাচন জিততে হবে, কাঁথি সমবায় নিয়ে বৈঠক

২০২২-এর মে মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই মন্দির তৈরির কাজ শুরু হয়। যদিও তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছিল ২০১৯ সালে। প্রায় ২০ একর জায়গা জুড়ে তৈরি হচ্ছে বিশালাকার এই জগন্নাথ মন্দির। একেবারে পুরীর মন্দিরের আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরকে। তবে আকার ও আয়তনে তা পুরীর মন্দির এবং তার সংলগ্ন অঞ্চলকেও ছাপিয়ে যাবে। এই মন্দির তৈরির পাথর আনা হয়েছে সুদূর রাজস্থান থেকে। মঙ্গলবার বিকেলে দিঘার নির্মীয়মাণ জগন্নাথ মন্দিরের ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা। বিশাল এলাকা জুড়ে চলছে কর্মযজ্ঞ। তত্ত্বাবধানে রয়েছেন হিডকোর আধিকারিকেরা।
বঙ্গবাসীর রথ দেখা ও কলা বেচা দুই একসঙ্গে হবে এবার দিঘায় এলে। পুরীর মতো এখানেও জগন্নাথদর্শনে তৃপ্ত হবেন পর্যটকেরা। বাংলা ও দেশের পর্যটন মানচিত্রে নতুন পালক যোগ করবে এই জগন্নাথ মন্দির। দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা এসে সমুদ্র এবং জগন্নাথ দর্শন দুই-ই করতে পারবেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই এখানে বাড়বে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান। হোটেল এবং পরিবহণ ব্যবস্থা বিপুল লাভের মুখ দেখবে। এমনিতেই সারা বছর দিঘায় পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। এই মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ হলে সেই ভিড় আরও কয়েকগুণ বাড়বে বলেই আশাবাদী এখানকার ব্যবসায়ীরা। আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন আগামী বছর রথযাত্রা এখান থেকেই চালু হবে। এই অনুযায়ী কাজ চলছে। তবে এবার সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী এই মন্দির নিয়ে নতুন কী নির্দেশ দেন সেদিকে নজর থাকবে। তবে দিঘার মতো জায়গায় এই বিশাল-আকার জগন্নাথ মন্দির তৈরির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মানুষজন।
