সঞ্জয় ‘দোষী’ সাব্যস্ত হতেই বিচারককে ধন্যবাদ নির্যাতিতার বাবার, কেঁদে ফেললেন এজলাসেই

দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয়কে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police)।

আরজি কর হাসপাতালে (RG Kar Medical College and Hospital) চিকিৎসক তরুণীর ধর্ষণ খুনের পাঁচ মাস নয়দিন পর মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে (Sanjay Rai) ‘দোষী’ সাব্যস্ত করল শিয়ালদহ আদালত (Sealdah Court)। সাজা ঘোষণা হবে আগামী সোমবার বেলা সাড়ে বারোটায়। এদিন বিচারক অনির্বাণ দাস (Anirban das) রায়দানের পর করার পরই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নির্যাতিতার বাবা। কিছুটা থমকে দাঁড়ান বিচারক। তাঁর দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নির্যাতিতার বাবা বলেন, “আপনার উপর যে আস্থা রেখেছিলাম, তার পূর্ণ মর্যাদা রেখেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই।” সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (BNS)৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের পর মৃত্যু) এবং ১০৩ (১) (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। বিচারক এদিন জানান, সঞ্জয়ের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, সর্বনিম্ন আমৃত্যু কারাবাস। ২০ জানুয়ারি কী হয় এখন সেদিকেই তাকিয়ে গোটা বাংলা।তবে এদিনের রায়ে যে সন্তুষ্ট নির্যাতিতার পরিবার তা চিকিৎসক তরুণীর বাবার কথায় স্পষ্ট।

গত ৯ অগাস্ট ভোররাতে যেভাবে কর্তব্যরত অবস্থায় খুন হতে হয়েছিল চিকিৎসক তরুণীকে তাঁর প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল আপামর বাংলা। দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয়কে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police)। পাঁচমাসের বেশি সময় ধরে তদন্ত করার পর যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিবিআই তাতেও সঞ্জয়কেই ‘অপরাধী’ বলা হয়েছে। এদিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ রায় ঘোষণা করে বিচারক দাস সঞ্জয়ের উদ্দেশে বলেন, “সিবিআই এবং সাক্ষীদের বয়ানের ভিত্তিতে যা মনে হয়েছে তাতে দোষী সাব্যস্ত করব আপনাকে। আপনার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড।” এরপরই সঞ্জয় নিজেকে নির্দোষ বলে দাবী করেন। বিচারক বলেন সোমবার তাঁর কথা শোনার পর সাজা ঘোষণা হবে। তখন আদালতে উপস্থিত ছিলেন নির্যাতিতার মা- বাবা। মেয়ের উপর হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদে পথে নেমেছিল সাধারণ মানুষ থেকে সেলেব্রেটি প্রত্যেকেই। এতদিনে অভয়ার দোষী শাস্তি পেতে চলেছে, তাই নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না মৃতার বাবা। আদালতের বাইরে বেরিয়ে তিনি বলেন, “বিচারককে ধন্যবাদ জানানোর ক্ষমতা নেই। উনি যে ভাবে বিষয়টি দেখেছেন, তাতে কৃতজ্ঞ। আমার মেয়ে তো আর কোনও দিন ফিরে আসবে না। সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ সাজা চাইছি। এতে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। তাই মৃত্যুদণ্ডই চাইছি। আর যারা এই ঘটনায় যুক্ত, তাঁদের সাজা চাইছি। ”

শিয়ালদহ আদালতে সিবিআই-এর আইনজীবীর পক্ষে যে তথ্য প্রমাণ পেশ হয় তার ভিত্তিতেই শনিবার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক অনির্বাণ দাস। সিবিআইয়ের পক্ষে আইনজীবী পার্থসারথি দত্ত (Partha Sarathi Dutta)জানান, ‘সব তথ্য প্রমাণ পেশ করেছি। তাতেই নিশ্চিত হয়ে সিভিক ভলেন্টিয়ারকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। রায় শোনার পর সঞ্জয় দাবি করে সে নির্দোষ, ঠিক যেমন এর আগেও একাধিকবার সে করেছে।’ নির্যাতিতার পক্ষে আইনজীবী অমর্ত্য দে দাবি করেন, প্রথম থেকেই সঞ্জয় বলতে থাকে অনেকে জড়িয়ে। আমি সবকিছু বলব। ৩৫১ বিএনএসএস-এ যখন জবানবন্দি নেওয়া হয় তখন বিচারক ১০৪টি প্রশ্ন তুলে ধরেন। তখন এমন কিছু সে বলতে পারেনি যেটা ও এতদিন ধরে বলে আসছিল। ওর বা ওর আইনজীবীর তরফ থেকে এমন কোনও তথ্য প্রমাণ আসেনি যা প্রমাণ করে আরও অনেকে জড়িত। সে বলে আমি নির্দোষ। কিন্তু সেটা সে প্রমাণ করতে পারেনি। সেই সঙ্গে আইনজীবী দাবি করেন এই ঘটনায় তাঁরা সর্বোচ্চ সাজা চাইছেন।