বাংলাদেশে কুখ্যাত ‘আয়নাঘর’-এ মিলল বৈদ্যুতিক ‘শক’ দেওয়ার চেয়ার!

কুখ্যাত ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত শেখ হাসিনা সরকারের টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত তিনটি গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে তিনি নির্যাতনের বিভিন্ন যন্ত্র, আটকে রাখা ব্যক্তিদের বিভিন্ন লেখা, সাংকেতিক চিহ্ন দেখতে পান।এদের মধ্যে ঢাকার আগারগাঁওয়ের একটি গোপন টর্চার সেল পরিদর্শনের সময় সেখানে বন্দিদের নির্যাতনের জন্য ব্যবহৃত একটি ধাতব চেয়ার দেখতে পান। এই চেয়ারে বসিয়ে আয়নাঘরের বন্দিদের নির্যাতন করা হতো।কারও কারও মতে ওই চেয়ারে বসিয়েই বন্দিদের বৈদ্যুতিক ‘শক’ দেওয়া হত। তাছাড়া বন্দিশালাটিতে রয়েছে অসংখ্য খুপরি ঘর। সেই ঘরগুলির আয়তন এতই ছোট যে, সেখানে আলো-বাতাস পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। ইউনূস বলেন, একজন বলছিলেন খুপরির মধ্যে রাখা হয়েছে। এর থেকে তো মুরগির খাঁচাও বড় হয়। বছরের পর বছর এ ভাবে রাখা হয়েছে।

বুধবার ইউনূস রাজধানীর কচুক্ষেত, উত্তরা, আগারগাঁও এলাকায় বিগত সরকারের তিনটি গোপন কারাগার পরিদর্শন করেন।তার সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, গুম তদন্ত কমিশনের সদস্য, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, বিভিন্ন সময় আয়নাঘরে আটকে রাখা হয়েছিল প্রাণে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন ভুক্তভোগী ছিলেন।বিগত বছরগুলোয় শেখ হাসিনার সরকার ভিন্নমতের মানুষকে বিচার বহির্ভূতভাবে এসব গোপন বন্দিশালায় আটকে রেখেছিল এবং নির্যাতন করে। গোপন এসব কারাগার ভুক্তভোগীসহ দেশবাসীর কাছে ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত।

পরিদর্শনকালে রাজধানীর কচুক্ষেত, উত্তরা, আগারগাঁও এলাকার এসব গোপন বন্দিশালায় ছোট ছোট খুপরির মতো কক্ষ দেখা যায়। যেখানে বন্দিদের অমানবিকভাবে থাকতে দেওয়া হত। এসব কক্ষের দেওয়ালে লেখা কালেমা, সাংকেতিক চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়।বিভিন্ন সময় বন্দিদের আটকে রাখা ও নির্যাতনের প্রমাণ মুছে দিতে কক্ষের দেওয়াল ভাঙা, নতুন করে রঙ করা, কাঠামোগত পরিবর্তন করার চিহ্ন দেখা যায়।

শুধু তাই নয়, ওই আয়নাঘরে একটি লোহার চেয়ার দেখানো হয় সমস্ত সদস্যদের। যেখানে অপরাধীদের বসিয়ে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হতো বলে অভিযোগ। চলত আরও মারাত্মক অইভিজগ। সে দেশের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী পদে শেখ হাসিনা থাকাকালীন ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬০৫ জনকে এই ‘আয়নাঘরে’ গোপনে বন্দি করে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

এখানেই শেষ নয়, এই আয়নাঘর-কে নিয়ে আছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযোগ, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩৪৪ জন ব্যক্তিকে গুম করে দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ৪০ জন ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ৬৬ জনকে সরকারি হেফাজতে গ্রেফতার অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে।