সঙ্গীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে আপনজন হারানোর বেদনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)। প্রথা মেনে শিল্পীকে গান স্যালুট (Gun Salute) দেওয়া হয় রবীন্দ্র সদনে (Rabindra Sadan)। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়াত শিল্পীর স্ত্রীকে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি বারবার স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন তিনি। ব্যক্ত করেন, শিল্পীর মৃত্যুর পরে তাঁর এইটুকুই সান্ত্বনা যে তিনি যাওয়ার আগে সাড়া দিয়ে গিয়েছিলেন।

শনিবার বেলা ১১টা নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় (Pratul Mukhapadhyay)। বেলা ২টো থেকে বিকাল প্রায় ৫টা পর্যন্ত তাঁকে রবীন্দ্র সদনে (Rabindra Sadan) শায়িত রাখা হয় শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। বিশিষ্ট শিল্পীদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী, সাংসদরাও। বিকালে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিল্পীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি শিল্পীর স্ত্রী সর্বাণী মুখোপাধ্যায়কে নিজে হাতে জল খাইয়ে দেন তিনি।
এদিন শ্রদ্ধা জানাতে এসে স্মৃতিমেদুর মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রতুলদা আগেও একবার অসুস্থ হয়েছেন। তখন আমি পিজি হাসপাতালে বসে, বললাম গানটা হবে? বললেন হ্যাঁ হবে। এত প্রাণখোলা মানুষ ছিলেন। গান গাইলেন। ভালো হলেন। বাড়িতে ফিরে গেলেন।

সাম্প্রতিক স্মৃতি মনে করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওনার সঙ্গে আবার আমার দেখা, তখনও সুস্থ ছিলেন। যখন অবস্থার অবনতি হয়ে ওনাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। আমি শুনি উনি তিনদিন ধরে কোনও রেসপন্ড করছেন না। আমি যখন গিয়ে প্রতুলদা বলে ডাকলাম প্রতুলদা শুনলেন। দুটো চোখ খুললেন। ওনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। খুব কষ্ট হচ্ছিল বুঝতে পারছিলাম। আমরা অনেক বললাম, আপনাকে তো ভালো হতে হবে। আবার গান গাইতে হবে। তখন সেই ওনার স্বভাবত দুটো হাত তুললেন। কিছু বোঝাবার চেষ্টা করলেন। তারপর আমি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ওনার আঙুল গুলো টিপে দিলাম। কথা বললাম।

শেষ যাত্রায় এসএসকেএম হাসপাতালে (SSKM Hospital) প্রতিদিন প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের খোঁজ নিতেন মুখ্যমন্ত্রী। চিকিৎসকদের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করেছেন। তাঁরা সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যেভাবে তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁকে সেই সংক্রমণ থেকে সরিয়ে আনা গেল না। কাল মধ্যরাতে ওনার প্রেসার হঠাৎ নেমে যায়। তখন থেকেই চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন আর শেষরক্ষা হবে না।

সেই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন শিল্পী পিছনে যাঁকে ফেলে গেলেন, সেই সর্বাণী মুখোপাধ্যায়ের কথা। তিনি বলেন, প্রতুলদার সঙ্গে বৌদির সম্পর্ক ভাষায় বলা যাবে না। প্রতুলদা শেষের দিকে খাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। বৌদি নিজে না খেয়ে ছিলেন। সেদিন চোখ খোলার পর আমি বললাম বৌদি তুমি খাও। তুমি একবার দেখে এসো প্রতুলদা চোখ খুলেছে। দেখে রাখব একথা বলার দুঃসাহস আমার নেই। আমরা সবসময় যোগাযোগ রাখব।

তবে শনিবার প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে স্বজন হারানোর বেদনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেহ ভঙ্গিমায়। তিনি জানান, আমার এখনও খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি নিজেকে সামলাতেই পারছি না। এই সম্পর্ক, অতিপরিচিত কেউ চলে গেলে আমি তাঁর মৃত্যু মুখ দেখি না। কিন্তু প্রতুলদার ক্ষেত্রে না এসে থাকতে পারলাম না। এই টটুকু স্বান্তনা যাবার আগে সাড়া দিয়ে গিয়েছিলেন। এদিন রবীন্দ্র সদনে (Rabindra Sadan) গান স্যালুট সম্মাননা শেষে শিল্পীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে (SSKM Hospital)। সেখানেই মরণোত্তর দেহ ও চক্ষুদানে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন।
