বস্তুবাদী-ভোগবাদই কি ডুবিয়েছে দে পরিবারকে? পরিস্থিতি থেকে বাঁচতেই চরম সিদ্ধান্ত

একধিক দর্শন রয়েছে ভারতীয় আধ্যাত্মিকতায়। সেখানে যেমন ত্যাগের পথ আছে, তেমন আছে চূড়ান্ত ভোগবাদের কথা। আর ভারতীয় দর্শনের একটি বস্তুবাদী শাখা হল চার্বাক দর্শন। এটি বস্তুবাদী দর্শন। পারলৌকিক নয়, ইহজাগতিক সুখ ভোগই মানুষের একমাত্র কাম্য বলে চার্বাকরা মনে করত। ট্যাংরার দে পরিবারও (Pranay De-Prasun De) কি এই দর্শনেই বিশ্বাসী? তাঁদের আয়-ব্যয় ও জীবনশৈলী (Life Style) দেখে উঠছে এই প্রশ্ন। বাজারে দে-ভাইয়ের ঋণের পরিমাণ ১০ কোটির আশেপাশে বলে সূত্রের খবর। কিন্তু তার পরেও একের পর এক বিলাসবহুল গাড়ি, বিদেশ ভ্রমণ কিছুই থেমে থাকেনি। তবে, এর জন্য ঋণের বোঝা বাড়লেও কর্মচারীদের বেতন একপয়সা বাকি রাখেননি তাঁরা।

চার্বাক দর্শনের প্রবর্তক বলে ধরা হয় গুরু বৃহস্পতিকে। এই দর্শন কোনও প্রকার প্রত্যাদেশে বিশ্বাসী করে না।  এই দর্শন অনুযায়ী ‘প্রমাণ’ই যথার্থ জ্ঞানের উৎস। ভারতীয় দর্শনের একটি বস্তুবাদী শাখা হল চার্বাক দর্শন। ইহজাগতিক সুখ ভোগই মানুষের একমাত্র কাম্য বলে মনে করত চার্বাকরা। ট্যাংরার দে পরিবারও কি সেটাই মনে করত! তাঁদের ট্যাংরা “প্রোটেকটিভ লেদার গ্লাভস’-এর কারখানা তৈরি করেছিলেন প্রণয়-প্রসূনের বাবা প্রদীপকুমার দে। লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বন্ধু ছিলেন তিনি। ট্যাংরা অঞ্চলের CPIM নেতাদের সঙ্গে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা ছিল প্রদীপ দের। চামড়ার গ্লাভস ও অন্যান্য সামগ্রী তৈরি করে বিদেশে রফতানি ও দেশের বিভিন্ন শহরে সরবরাহ করতেন তিনি। কোভিডের সময়ে তাঁর মৃত্যুর পরে দুই পুত্র প্রণয় ও প্রসূন (Pranay De-Prasun De) মিলেই ব্যবসা চালাতেন। কারখানায় দুই শিফটে কমপক্ষে ৫০ জন করেন। সেই সময় থেকেই তাঁদের বিলাসিতা বেড়ে যায়। গত ছমাসের মধ্যে ৩বার গাড়ি বদল করেন। স্ত্রীদের দামি গাড়ি উপহার দেন। সপরিবারের একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণ করেন। বাড়িতে প্রায়ই চলত পার্টি। সম্প্রতি এলাকার এক প্রোমোটারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রোমোটিংয়ের ব্যবসা শুরু করেন দে ব্রাদার্স।
আরও খবর: বিহারে দশমের বোর্ড পরীক্ষায় ধুন্ধুমার, টুকলিতে বাধা দেওয়ায় গুলিতে মৃত এক ছাত্র

২০২০-র লকডাউনের সময় থেকেই ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। রফতানির কমে। এর মধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ হয়। ফলে রফতানি বন্ধ হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণও নেন দুইভাই। ক্রমশ আর্থিক চাপ বাড়তে থাকে। প্রতি মাসে মোটা টাকা ঋণ মেটাতে হত। পাওনাদারদের লাখ লাখ টাকার চেক বাউন্স হচ্ছিল। তাও বেলাগাম জীবন যাপন করেছিলেন প্রসূন-প্রণয়রা। জলের মতো টাকা খরচ করতেন। এমনকী ধার নিয়েও বিলাসিতা করতেন। তার জন্য ঋণ নিতেন। সেই ঋণ মেটাতে আবার ঋণ নিতেন। ফলে ক্রমশ আর্থিক সঙ্কটে ভুগতে শুরু করেন তাঁরা। পুলিশ সূত্রে খবর, ঋণদাতা সংস্থারও বিপুল চাপ ছিল দে পরিবারের উপর। সেই কারণেই কি পরিবারের তিনজনকে খুন করে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত, না কি সমবেত হয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েও ‘সফল’ হতে পারেনি দে পরিবার? উঠছে প্রশ্ন।