নারীসঙ্গ-সেক্স টয়-মদের বোতল, চণ্ডীতলা থানার আইসির কর্মকাণ্ডে অবাক পুলিশকর্মীরাই

তদন্তে নানান চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে

হাওড়ার চণ্ডীতলা থানার ভারপ্রাপ্ত আইসি জয়ন্ত পালের কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর রীতিমতো চাঞ্চল্য। বুধবার রাতে তিনি নিজের সার্ভিস রিভালবারে গুলিবিদ্ধ হন।এরপরই তদন্ত করতে গিয়ে প্রকাশ্যে আসে যে নিত্যদিন তিনি নাকি নারীসঙ্গে আসক্ত ছিলেন। পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি ব্যক্তিগত চারচাকা গাড়ি নিয়ে ঘুরতেন। সেই গাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছে সেক্স টয় ও মদের বোতল।বুধবার রাত ১২টা নাগাদ নেতাজি সুভাষ রোডের ঘোষপাড়ার একটি পেট্রল পাম্পের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে হাওড়া গ্রামীণ পুলিশের আধিকারিক জয়ন্ত পালকে রাস্তায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। তাকে উদ্ধার করে আন্দুল রোডের পাশে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।এরপরই তদন্তে নানান চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে ।

জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ হাওড়ার সাঁকরাইলের পোদরা এলাকায় একটি পার্লারে যান জয়ন্ত। পার্লারটি তারই তরুণী বান্ধবী ইতি দাম ওরফে টিনার। আরও জানা গিয়েছে, হাওড়ার সাঁকরাইলের বাসিন্দা ওই তরুনী একটি পানশালার কর্মী। বেশ কয়েক মাস ধরেই তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় জড়িয়েছিলেন চণ্ডীতলার ভারপ্রাপ্ত আইসি জয়ন্ত পাল। ওই চারচাকা গাড়িতে বান্ধবীকে নিয়ে প্রথমে তিনি একটি ফ্ল্যাটে যান । ওই ফ্ল্যাটটি নাকি জয়ন্তবাবু ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি মাঝে মধ্যেই সেখানে আসতেন। সেখান থেকে তারা যান হাওড়ার একটি শপিং মলে। সেখানে বান্ধবীকে প্রায় ২৩ হাজার টাকার জিনিসপত্র কিনে দেন তিনি । তখন থেকেই তাদের মধ্যে বচসা চলছিল । রাত পৌনে বারোটা নাগাদ একটি ব্যক্তিগত চারচাকা গাড়িতে চেপে নৈশবিহারে বেরনোর পর সেই ঝামেলা আরও বাড়ে । ক্রমে বচসা হাতাহাতিতে গড়ায় । আর তারপরই জয়ন্তের সার্ভিস রিভালবার থেকে গুলি চলে ।

গাড়িতে তারা ছাড়াও শিবপুরের বাসিন্দা দুই যুবক ও বেলঘরিয়ার এক রূপান্তরকামীও ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়ি করে চারজন পুলিশ কর্মী ওই রাস্তা ধরে আসছিলেন। আচমকাই গাড়ির ভিতর জয়ন্ত পালকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। প্রশ্ন, জয়ন্তর সঙ্গে থাকা ‘রহস্যময়ী’ মহিলাকে নিয়ে কোনও ঝামেলার কারণেই কিএই ঘটনা? আহত পুলিশকর্মীর বাঁ হাতে গুলি লেগেছে বলে জানা গিয়েছে।

গুলি চলার খবর পেয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই ঘটনাস্থলে যায় হাওড়া সিটি পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে গুলির খোল, একটি গাড়িও আটক করেছে তাঁরা। ওই মহিলাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অনুমান, তাঁর সঙ্গেই কারও কোনও বচসা থেকে এই ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্ত পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে তাঁর ঠিক কী সম্পর্ক, সেটাও জানার চেষ্টায় পুলিশ।

জয়ন্তবাবুর বান্ধবী সহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ । যদিও তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় । বর্তমানে হাওড়ার ব্যাঁটরা ও শিবপুর থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে । কিন্তু ওই পুলিশ আধিকারিকের এহেন কর্মকাণ্ড নিয়ে এখন একাধিক প্রশ্ন উঠছে । প্রথমতঃ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই বেআইনিভাবে নিজের থানা এলাকার বাইরে গিয়েছিলেন তিনি । দ্বিতীয়তঃ সরকারি গাড়ির পরিবর্তে অন্য একটি বেসরকারি গাড়িতে পুলিশ স্টিকার লাগিয়ে তিনি ভ্রমণে গিয়েছিলেন । এখন এই ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া কোন দিয়ে যায়, সেটাই দেখার বিষয় ।