কায়দা করে ভাইকে দিয়ে কাজ হাসিল প্রণয়ের! নজরে মোটিভ

প্রণয়ের আরও যুক্তি, তিনি আধ‌্যাত্মিক জগতের মানুষ।

নাটকের শেষ নেই!তিন তিনটে জ্বলজ্যান্ত প্রাণ কেড়ে নিয়েছেন।নিজে পাপের ভাগিদার না হওয়ার জন্য কায়দা করে নিজের ভাইকে দিয়ে কাজ হাসিল করিয়েছেন। আর এখন এনআরএস হাসপাতালের বেডে শুয়ে ট‌্যাংরার অভিজাত দে পরিবারের বড় ছেলে প্রণয় বলছেন, কোনও পাপ করিনি। ভাই প্রসূনকে বলেছি ওর মেয়ে ও বাড়ির দুই বউকে মুক্তি দিতে। প্রসূন যা করেছে, তাকে খুন বলা যায় না। সে তিনজনকে মুক্তি দিয়ে পুণ্যের কাজই করেছে। আবার সাফাই দিচ্ছেন, আমি মানসিকভাবে দুর্বল, তাই নিজের হাতে এই কাজ না করে প্রসূনকে দিয়ে করিয়েছি।

প্রণয়ের আরও যুক্তি, তিনি আধ‌্যাত্মিক জগতের মানুষ। তারা সবাই নাকি ‘পবিত্র পায়েস’ খেয়ে আত্মহত‌্যার ছক কষেছিলেন। তাই বাড়িতে যারা ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছে, তাদের সবাইকে মুক্তি দেওয়ার কথা মাথায় আসে। অথচ তিনি মানসিকভাবে দুর্বল বলে সেই মুক্তির দায়িত্ব নিতে পারেন নি। ভাই প্রসূনের মগজধোলাই করতে বোঝান যে, এই হত‌্যায় কোনও পাপ নেই। বরং কারোকে মুক্তি দিলে পুণ‌্য অর্জন হয়।

আর প্রসূনও দাদার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে প্রথমে নিজের মেয়ে প্রিয়ংবদার মুখে বালিশচাপা দিয়ে  খুন করে। এর পর কাগজ কাটার ধারালো ছুরি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা প্রণয়ের স্ত্রী সুদেষ্ণার হাতের শিরা ও গলা কেটে খুন করে। তারপর কীর্তিমান নিজের স্ত্রী রোমির হাতের শিরা ও গলা কেটেও খুন করে। তার পর সে প্রতীপের হাত কাটে।কিন্থু ঘুম ভেঙে যাওয়ায় প্রতীপ কাঁদতে শুরু করে। প্রণয় ভাই প্রসূনকে বারণ করে প্রতীপকে খুন করতে।পুলিশ বলছে, এই বয়ানই বলে দিচ্ছে যে এখন লেন্টিমেন্টালের নাটক করলেও, আদতে পরিকল্পনামাফিক প্রসূনকে দায়ে কায়দা করে কাজ হাসিল করেছেন প্রণয়। এই ব‌্যাপারে আরও তথ‌্য পেতে দুই ভাইকে জেরা করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

আসলে সপ্তাহখানেক ধরে খবরের শিরোনামে ট্যাংরা কাণ্ড। তদন্ত যত এগোচ্ছে তত প্রকাশ্যে আসছে নানান চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশের দাবি, প্রণয়ই ভাই প্রসূন কে বলেছিলেন, তাদের দুই স্ত্রী ও ভাইঝিকে খুন করে মুক্তি দিতে।আর প্রসূন আবেগ উসকে দিতে আরও এক কদম এগিয়ে পুলিশের জেরার মধ্যে কেঁদে চলেছেন। তাতে যে চিঁড়ে ভিজবে না, তা বোধ হয় তার জানা নেই। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, প্রসূনের ভেঙে পড়ে স্বীকারোক্তি দেওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি প্রণয়ের নাবালক ছেলে প্রতীপের সঙ্গেও পুলিশ কথা বলেছে। আপাতত সে সুস্থ। কিন্তু নাবালকের দায়িত্ব কেউ না নিতে না চাওয়ায়, আইন মেনে তাকে হোমে রাখার জন‌্যও পুলিশ প্রস্তুতি নিচ্ছে। জানা গিয়েছে বৃহস্পতিবার এনআরএসে নাবালককে দেখতে যেতে পারে শিশু কমিশন।

ইতিমধ্যেই মৃতদের চূড়ান্ত ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কলকাতা পুলিশের হাতে এসে পৌঁছেছে । পুলিশে দাবি, রিপোর্টে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, কিশোরী প্রিয়ংবদা-র মৃত্যু হয়েছে ‘মেকানিক‌্যাল অ‌্যাসফিক্সিয়া’বা শ্বাসরোধের কারণে। সেক্ষেত্রে মেয়েটিকে বালিশ চাপা দিয়েই মারা হয়েছে। বালিশটি ইতিমধ্যেই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা উদ্ধার করেছেন। রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশ প্রণয় ও প্রসূন দে-কে জেরা করে। সেই জেরাতে পুলিশকে দুই ভাই জানিয়েছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি কিশোরী প্রিয়ংবদাকে ওযুধ মেশানো পায়েস খাওয়ানো হলেও তার মৃত্যু হয়নি। এরপরই অন্য পন্থা নেওয়া হয়। প্রসূন নাকি দাদা প্রণয়কে জানান যে, তার মেয়ে ও বাড়ির দুই স্ত্রীর শরীরে প্রাণ রয়েছে। এরপরই হাতের শিরা এবং গলা কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুই ভাই যতই আবেগ দিয়ে নজর অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করুন না কেন, পুরোটাই যে পরিকল্পনা মাফিক হয়েছে, প্রাথমিকভাবে বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত পুলিশ।