১৬ বছর স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকার পরে ধর্ষণের অভিযোগ নয়: সুপ্রিম কোর্ট  

শুধু বিয়ের প্রতিশ্রুতি পূরণ না করলেই তা ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হয় না।

 টানা ১৬ বছর ধরে স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকার পরে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা যায় না। এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা ফৌজদারি মামলা খারিজ করে দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৬ বছর ধরে এক মহিলার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। বিচারপতি বিক্রম নাথ ও সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ জানিয়েছে, শুধু বিয়ের প্রতিশ্রুতি পূরণ না করলেই তা ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হয় না।

ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, যদি স্পষ্ট প্রমাণ না থাকে যে সম্পর্কের শুরু থেকেই অভিযুক্তের বিয়ের ইচ্ছে ছিল না, তাহলে এই অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। আদালত আরও জানিয়েছে, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এই সম্পর্ক স্বেচ্ছায় চলেছে। তাই এখানে জোর বা প্রতারণার কোনও জায়গা নেই। এমনকি প্রমাণও নেই। একজন পুরুষের বিরুদ্ধে মিথ্যে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৬ বছরের দীর্ঘ সম্পর্কের থেকেও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছিলেন ওই মহিলা। তবে এই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত ফৌজদারি কার্যক্রম খারিজ করে দিয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ওই মহিলা একজন উচ্চশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত মহিলা হয়েও দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এমন সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। অথচ কখনও কোনও সন্দেহ প্রকাশ করেননি।শুধুমাত্র অভিযুক্ত অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করার পরেই তিনি অভিযোগ দায়ের করেন।বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, সেই মহিলা একজন শিক্ষিত ও স্বনির্ভর প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা। তা সত্ত্বেও ১৬ বছর ধরে কোনও আপত্তি না জানিয়ে অভিযুক্তের দাবি মেনে চলেছেন, এটি বিশ্বাস করা কঠিন।

এই মামলার সূত্রপাত ২০২২ সালে। যখন সেই মহিলা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে এফআইআর দায়ের করেন এবং সেই বছরই পুলিশ চার্জশিট জমা দেয়। অভিযোগকারিণীর দাবি, ২০০৬ সালে অভিযুক্ত চুপিসারে তার বাড়িতে ঢুকে জোর করে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। অভিযুক্ত তার আবেদনে জানান, অভিযোগকারিণী তার সঙ্গে স্বেচ্ছায় ও সম্মতিসূচক দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কে ছিলেন।

হাইকোর্টের রায় খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, অভিযুক্ত ও অভিযোগকারিণীর মধ্যে ১৬ বছরের সম্পর্ক ছিল সম্পূর্ণ পারস্পরিক সম্মতিতে। শুধু তাই নয়, তারা একসঙ্গে থাকতেন। বেঞ্চ জানিয়েছে, ১৬ বছর ধরে বারবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার পরেও শুধুমাত্র বিয়ের অপেক্ষা করেছেন, এই দাবি একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তার বক্তব্যে প্রচুর অসঙ্গতি রয়েছে এবং তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বিচারপতিরা আরও জানান, ১৬ বছরের সম্পর্কের মধ্যে অভিযোগকারিণী নিজেকে বহুবার অভিযুক্তের স্ত্রী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এই দীর্ঘ সময় ধরে তারা স্বামী-স্ত্রীর মতোই একসঙ্গে থেকেছেন। এতদিন পরে এসে এফআইআর দায়ের করাটা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।