শো-কজের জবাবে সন্তুষ্ট নয় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি, হুমায়ুনকে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ

বিতর্কিত মন্তব্যের জের। ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে (Humayun Kabir) শো-কজ করে বিধানসভার পরিষদীয় দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। শনিবার তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে শো-কজের জবাব দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দুপাতার সেই জবাবে সন্তুষ্ট নয় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। ফলে ভরতপুরের বিধায়ককে সশরীরে মঙ্গলবার কমিটির সামনে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

বারবার বেলাগাম মন্তব্য করায় ভরতপুরের বিধায়কের উপরে ক্ষুব্ধ তৃণমূলের (TMC) শীর্ষ নেতৃত্ব। বিরোধী দলনেতার সংখ্যালঘু-বিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে হুমায়ূন বলেন, “আমার কাছে আগে আমার জাতি, তার পর দল। আমার জাতিকে আক্রমণ করলে আমি চুপ থাকব না।“ এই মন্তব্য দল অনুমোদন করেনি। গত বৃহস্পতিবার, তাঁকে শোকজ করেন বিধানসভায় পরিষদীয় মন্ত্রী তথা বিধানসভার তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় (Shobhandev Chatterjee)।

নিজের মন্তব্যে বরাবরই অনড় হুমায়ুন (Humayun Kabir)। তাঁর কাছে দলের আগে ধর্ম। গত মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে শাসকদলকে নিশানা করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “এরা বাংলার হিন্দু জনগণকে উপড়ে ফেলতে চাইছে। এই ঔদ্ধত্য দিল্লিতে কেজরিওয়াল করেছিল বলে ওখানকার মানুষ আপকে উপড়ে ফেলেছে। আগামী বছর বাংলাতেও তাই হবে। ওদের দলের যে সব মুসলিম বিধায়ক জিতে আসবে তাদের চ্যাংদোলা করে ১০ মাস পরে এই রাস্তায় ফেলব!” যার জবাবে হুমায়ুন বলেন, ”মারতে এলে রসগোল্লা খাওয়াবো নাকি? ঠুসে দেব! দলের থেকে আমার কমিউনিটি আগে!” এই মন্তব্যে অসন্তুষ্ট হয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁকে শোকজ করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাবও তলব করা হয়।

শনিবার সেই চিঠির জবাব দেন হুমায়ুন। কারণ, ব্যাখ্যা করলেও নিজের বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাননি তিনি। সোমবার সেই জবাব নিয়ে বৈঠকে বসেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য-সহ শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্যরা। কেউই হুময়ায়ুনের জবাবে সন্তুষ্ট নন। বৈঠকের পর শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানান, “সব রাজনৈতিক দলের কিছু মতাদর্শ আছে। হুমায়ুন এমন কিছু বারবার বলছে যা দলের আদর্শের পরিপন্থী। ও যা বলেছে সেটা ওর ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু একজন বিধায়ক হয়ে একথা বলতে পারে না। ও শোকজের জবাবে যা বলেছে তা সন্তোষজনক নয়। ও বলেছে এটা ওর জাতের ব্যাপার। কিন্তু এখানে জাতের কথা আসলে সংবিধানকে অবজ্ঞা করা হয়। হুমায়ুনকে মঙ্গলবার ডেকে পাঠানো হয়েছে। ওকে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সামনে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। আমরা ওকে কিছু নির্দেশ দেব। সেগুলো মানতেই হবে।”

উস্কানিমূলক মন্তব্য করে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ করার অভিযোগে চারমাসে ২ বার শোকজ করা হল হুমায়ুনকে। তিনবার শোকজ হলে অর্থ তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়ার সম্ভাবনা হয়েছে। এখন মঙ্গল শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সামনে হাজির হয়ে ভরতপুরের বিধায়ক কী বলেন সেটাই দেখার।