কোভিডের (Covid 19) সময় নিজেদের জীবনবাজি রেখে শত-সহস্র সংক্রমিত দেহ সৎকার করেছেন তাঁরা। একবারও নিজেদের সংক্রমনের পরোয়া করেননি। তারপরেও শুধুমাত্র সিনেমার পর্দা আর দুএকটা সাহিত্যে ‘শ্মশানবন্ধু’দের উল্লেখ আর কিছুই ঘটেনি। বাস্তবে তাঁদের জীবনের গল্প, যন্ত্রণার কথা জানতে চান কজন? উদ্যোগ নিয়েছিলেন বাংলার চার চিকিৎসক। করোনার কঠিন সময়ে আইসোলেশনের নিয়ম মেনে যদি সরকারি হাসপাতাল ডোমেরাও মুখ ফিরিয়ে দিতেন, তাহলে মৃতদেহের স্তূপ জমে ছড়িয়ে পড়ত ভয়ংকর সংক্রমণ। নীরবে নিজেদের কাজ করে যাওয়া সেই ডোমেদের সমাজের প্রতি অবদানের কথা মাথায় রেখে তাঁদের নিয়ে গবেষণা করেছেন বাংলার চার চিকিৎসক। সেই জার্নাল প্রকাশিত হলো আন্তর্জাতিক ল্যানসেট (Lancet) পত্রিকায়।

সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ৩০ জন ডোমের সাক্ষাৎকার নিয়ে গবেষণা শুরু করা হয়েছিল।গবেষক দলের প্রধান বিশিষ্ট ফরেননসিক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সোমনাথ দাস (Prof Somnath Das) বলেন, “কোভিডের সময় যে পরিষেবা ডোমেরা দিয়েছেন, তা হয়তো আমাদের অনেকের মনে নেই। কিন্তু এটা অনস্বীকার্য। যে, ওঁরা ঠিকমতো কাজ না করলে মৃতদেহের পাহাড় জমে ভয়ংকর সংক্রমণের মুখোমুখি হতে পারতাম আমরা। দিনরাত কাজ করে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কোভিডের মৃতদের সৎকার করে গিয়েছেন তাঁরা।’’ একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের জন্য আজও ‘ডেথ কেয়ার ওয়ার্কার’দের পদে পদে হেনস্থার শিকার হতে হয়। নন-ফরেনসিক ডাক্তারদের একটা বড় অংশ, যাঁরা ময়নাতদন্তের কাজ করেন, তাঁরা নিচু চোখে দেখেন ডোমেদের। সামাজিক অনুষ্ঠানেও তাঁদের পরিচয় সামনে এলে সমস্যা তৈরি হয়। অথচ তাঁরা কর্তব্যে অবিচল। এবার সেই ডোমেদের কথাই আগামী এপ্রিলে ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হবে মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেট পত্রিকায় (Lancet Magazine)। এই ঘটনা মাইলস্টোনের থেকে কম কিছু নয়, মনে করছে বাংলা তথা দেশের চিকিৎসক মহল।

গবেষক দল মূলত এ রাজ্যের চারটি হাসপাতালের (আর জি কর, এনআরএস, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ, বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ) সঙ্গে কথা বলেন। অধ্যাপক দাসের সহযোগী হিসেবে ডা. রিনা দাস (Dr Rina Das), সহকারী অধ্যাপক তপোব্রত গুহরায় ও ডা. শাশ্বত সেন মন দিয়ে ডোমেদের কষ্ট যন্ত্রণার কথা শোনেন। বিশেষ করে বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তির সময় এক তৃতীয়াংশ ডোমই নিজেদের পেশার কথা গোপন রাখে বলে জানা গিয়েছে। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকার শ্মশানবন্ধুদের পাশে আছে। কিন্তু সমাজে চোখে বামেদের থান অনেক নিচে। বাস্তবে কার্যক্ষেত্রে দেখা গেছে নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে অনেক তরুণ চিকিৎসক বা অটোপসি সার্জেনকে গাইড করেন ডোমেরা। কিন্তু স্বীকৃতি আজও মেলেনি। গবেষকদলের মতে, চিন্তাভাবনার পরিবর্তন করতে গেলে প্রথমেই ডোম শব্দবন্ধটি বদলে তার পরিবর্তে ‘এসেন্সিয়াল হেলথ ওয়ার্কার’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করা দরকার। এরকমই এক প্রস্তাবনা রাজ্যের সরকারের (Govt of WB)কাছে দেওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক পত্রিকায় বাংলার সরকারি হাসপাতালের ডোমেদের জীবনযাত্রার কথা তুলে ধরতে পেরে গর্বিত চার চিকিৎসক। এবার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও এগিয়ে এসে ডোমেদের পাশে দাঁড়াবে, আশাবাদী গবেষকরা।

–

–

–

–

–

–

–

–
