ফের বিজেপিশাসিত রাজ্যে অভিযুক্তর বাড়িতে চলল বুলডোজার। পথ দেখিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এবার সেই পথে হেঁটে আরেক ডবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্য মহারাষ্ট্রে (Maharastra) অভিযুক্তর বাড়ি ভাঙা হল বুলডোজারে। ঔরঙ্গজেবের সমাধি বিতর্কে নাগপুরে গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনার মূল অভিযুক্ত ফাহিম খানের (Faheem Khan) বাড়ি সোমবার সকালে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট বেআইনি নির্মাণ ভাঙার বিষয়ে যে গাইডলাইন দিয়েছে, সেই নির্দেশ কি নাগপুর পুরসভা মানছে- উঠছে প্রশ্ন।

অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে বুলডোজার নীতির বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। এই নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশ আছে শীর্ষ আদালতের। তার পরেও ডবল ইঞ্জিনের উত্তরপ্রদেশের মতোই মহারাষ্ট্রেও (Maharastra) বুলডোজার চলালো ফড়নবিশ সরকার। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ গত শনিবারই হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছিলেন, সরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির হিসেব বুঝে নেবে রাজ্য। যত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা অপরাধীদেরই পূরণ করতে হবে। সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে চালানো হবে বুলডোজ়ার। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই এদিন সকালে ফাহিম খানের বাড়িতে পুলিশ, পুরসভার কর্মীরা গিয়ে বাড়ি ভাঙতে শুরু করে।

১৭ মার্চ নাগপুরে ঔরঙ্গজেবের সমাধিকে কেন্দ্র করে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট ভাঙচুর, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেই অশান্তির মাস্টারমাইন্ড এই ফাহিম বলে অভিযোগ। তিন মাইনরিটি ডেমোক্রেটিক পার্টি নামে একটি সংগঠনে নাগপুর শাখার প্রধান। বেশ কিছু ভিডিও এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য তিনি স্যোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। ফাহিম খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ফাহিম সহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা রুজু হয়।

এই পরিস্থিতিতে ফাহিমের বাড়ির অবৈধ অংশ ভাঙা হয়। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি অন্য অংশে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। কয়েকদিন আগেই নাগপুর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন খান পরিবারকে নোটিশ পাঠিয়েছিল।


তবে, বিজেপি শাসিত রাজ্য়ের এই বুলডোজার নীতির তীব্র বিরোধিতা করেছে অ-বিজেপি দলগুলিষ। তাদের অভিযোগ, BJP এবং তাদের শরিক দলের রাজ্যগুলির প্রশাসন খেয়ালখুশি মতো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তদের বাড়ি বুলডোজোর দিয়ে ভেঙে দেওয়ার নিদান দেয়। উচ্ছেদ অভিযানে বুলডোজোর চালানো ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’-এর সমান।


গত বছর নভেম্বর মাসে বুলডোজোর নীতির বিরোধিতা করে শীর্ষ আদালতও। প্রশাসনের সাংবিধানিক এক্তিয়ার মনে করিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলে, প্রশাসন আদালতের জায়গা নিতে পারে না। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, পুলিশ-প্রশাসন থেকে পুর-প্রশাসন কেউ বিচারক নয়। কাউকে দোষী সাব্যস্ত করার এক্তিয়ার প্রশাসনের নেই। বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ জানায়, বাসস্থান মানুষের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ‘অসাংবিধানিক’। কেউ অপরাধ করলেও তাঁর বাড়ি ভেঙে ফেলা যায় না। কারও বাড়ি বেআইনি হলে, তাঁকে আত্মপক্ষ সমপর্থনে জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। তাঁকে বাড়ির জিনিসপত্র সরানোর জন্যও সময় দিতে হবে। এক্ষেত্রে সেই সুযোগ ফাহিম পেয়েছিলেন কি না তা স্পষ্ট নয়।

–

–

–
–

–

–
–