পাজামার দড়ি ধরে টানা ‘ধর্ষণ নয়’, ইলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় ‘অসংবেদনশীল’: সুপ্রিম কোর্ট

তিনি দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতিকেও এই ঘটনার প্রেক্ষিতে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন৷

স্তনের উপরে হাত, কিংবা পাজামার দড়ি ধরে টানা ‘ধর্ষণ নয়’৷ ইলাহাবাদ হাইকোর্টের এই রায়কে এবার ‘অসংবেদনশীল’ বলে মন্তব্য দেশের শীর্ষ আদালতের৷ শুধুমাত্র এখানেই শেষ নয়, যে বিচারক এই রায় দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধানও দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি আর গাভইয়ের বেঞ্চ৷

সপ্তাহখানেক আগে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের এই রায় প্রকাশ্যে আসে। এরপরই বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয় শীর্ষ আদালত৷ বিচারপতি বি আর গাভাই এবং অগাস্টিন জর্জ মাসিহর বেঞ্চে এই ঘটনার শুনানি হয় আজ, বুধবার৷বিচারপতি গাভাই ইলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় সম্পর্কে বলেন, এটা অত্যন্ত গুরুতর একটা বিষয়৷ বিচারকের তরফে চূড়ান্ত অসংবেদনশীল আবেদন করা হয়েছে৷ বিষয়টি তলব করে ডেকে পাঠানোর পর্যায়ে ছিল আমরা দুঃখিত যে কোনও বিচারকের বিরুদ্ধে এত কড়া শব্দ আমাদের ব্যবহার করতে হচ্ছে৷ এরই পাশাপাশি, তিনি দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতিকেও এই ঘটনার প্রেক্ষিতে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন৷

কেন্দ্র এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে এই বিষয়ে জবাব তলব করেছে শীর্ষ আদালত।সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের সঙ্গে সহমত। তিনি বলেন, কিছু রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর ১১ বছরের এক কিশোরীকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল পবন এবং আকাশ নামে দু’জনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তারা নির্জন কালভার্টে কিশোরীর বুকে হাত দিয়েছিলেন। তার পাজামার দড়ি খোলার চেষ্টা করেছিলেন। সেই মামলার শুনানিতে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি রামমনোহর নারায়ণ মিশ্রের বেঞ্চ জানায়, দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তাতে ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার মামলা খাটে না। তবে এটি অবশ্যই যৌন হেনস্থার ঘটনা। ধর্ষণের চেষ্টার মামলা দায়ের করতে গেলে সরকারি আইনজীবীকে প্রমাণ করতে হবে যে, ঘটনাটি ধর্ষণের দিকেই এগোচ্ছিল।

ঘটনার পরে পবন, আকাশ এবং অশোকের বিরুদ্ধে পকসো ধারায় ধর্ষণের অভিযোগ আনে মেয়েটির পরিবার৷ এদিন অভিযুক্তদের আনা একটি রিভিউ পিটিশনের প্রেক্ষিতে রায় দিতে গিয়ে গত ১৭ মার্চ ইলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি রাম মনোহর নারায়ণ মিশ্রা জানিয়েছিলেন, এই মামলায় অভিযুক্ত পবন এবং আকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে ওরা নির্যাতিতার স্তনে হাত দিয়েছিল, দড়ি টেনে ওর নিম্নাঙ্গ থেকে বস্ত্র খোলার চেষ্টা করেছিল৷ কিন্তু, তারা যে সত্যিই ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করতে চাইছিল এই বিষয়টি এখানে নিশ্চিত ভাবে প্রামাণ্য নয়৷ প্রত্যক্ষদর্শীরাও অভিযুক্তদের ওই কাজ করতে দেখেনি বলে রায়ে জানিয়েছিলেন ইলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি৷‘উই দ্য উইমেন অফ ইন্ডিয়া’ নামে একটি সংগঠন হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করার পরই সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলার শুনানি করে। নির্যাতিতার মা-ও হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন।