রোহিঙ্গাদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন ডলার নতুন আর্থিক সাহায্য ঘোষণা ট্রাম্পের

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মায়ানমারের বাস্তুচ্যুত বৃহত্তম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাহায্য কমে যাওয়ার ফলে সঙ্কট আরও গভীর হতে পারে বলে উদ্বেগের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন ডলার নতুন আর্থিক সাহায্য করবে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক্সে একটি পোস্টে লিখেছেন, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিওইএফ) মাধ্যমে এই খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা দশ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এই ধরনের জীবনরক্ষাকারী সাহায্যের মাধ্যমে দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে জড়িত।

প্রসঙ্গত, খাদ্যসঙ্কটের আবহেও পর্যাপ্ত তহবিল না থাকার অজুহাত দেখিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গাকে কার্যত অনাহারের মুখে ঠেলে দিয়েছিল ডব্লিউএফপি। কিন্তু তাদের পাশে দাঁড়াল ট্রাম্প প্রশাসন।রাষ্ট্রসঙ্ঘ সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তহবিলের ঘাটতি গত আট বছর ধরে প্রতিবেশী মায়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রেশনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে। শরণার্থীরা আশঙ্কা করছেন, তহবিল কমে ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা এবং জ্বালানি কমে যাবে।

পরিসংখ্যান তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে ওয়াশিংটন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় সহায়তা প্রদানকারী দেশ। প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সাহায্য করেছে তারা। কিন্তু জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর সাম্প্রতিক তহবিল স্থগিত করার ফলে কমপক্ষে পাঁচটি হাসপাতাল তাদের পরিষেবা কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।

ট্রাম্প মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিয়েছেন।হাজার হাজার কর্মী এবং ঠিকাদারকে বরখাস্ত করেছেন এবং কোটি কোটি ডলারের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ওপর বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ নির্ভরশীল।মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফেব্রুয়ারিতে সমস্ত জীবনরক্ষাকারী সাহায্য এবং এই ধরনের সাহায্য করার জন্য প্রয়োজনীয় যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনিক খরচে রাশ টেনেছেন।রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সাহায্য কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।

জানা গিয়েছে, কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন শিবিরের বাসিন্দারা প্রত্যেকে মাসিক ১২ ডলার করে খাদ্য বরাদ্দ পাবেন, যা আগের ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কম। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিওএফপি একটি চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। তিনি আরও বলেন, ভাসান চরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১৩ ডলার করে পাবে, যা কক্সবাজারের তুলনায় এক ডলার বেশি।

গত ৫ মার্চ, বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশন ডব্লিওএফপি থেকে একটি চিঠি পায়। যেখানে বলা হয় যে, তহবিল সংকটের কারণে, এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাদ্য বরাদ্দ জনপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার করা হবে। চিঠিতে শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

গত ১৪ মার্চ, রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।তার সফরের সময়, তিনি ৬ ডলারে রোহিঙ্গারা কী খাবার পাবে তার বিস্তারিত বিবরণ জেনেছিলেন।এর পরে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। সেই আবেদনে সাড়া দিল আমেরিকা।