মণিপুরে ধারাবাহিক হিংসা ও অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়ন। আর আইনশৃঙ্খলার গুরুতর অবনতির কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে নারী ও শিশু সুরক্ষার কাজ। এই পরিস্থিতিতে একটি সংসদীয় প্যানেল সুপারিশ করেছে, কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক মণিপুরে ৩ মে, ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া জাতিগত সহিংসতার ফলে বাস্তুচ্যুত নারী ও শিশুদের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করুক। এছাড়াও, তাদের কল্যাণে লক্ষ্যভিত্তিক একটি পৃথক নীতি বা কর্মসূচি প্রণয়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই সুপারিশটি কংগ্রেস সাংসদ দিগ্বিজয় সিং-এর নেতৃত্বাধীন শিক্ষা, নারী, শিশু, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে এসেছে। কমিটি গত ২৮ মার্চ রাজ্যসভায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের তহবিলের দাবি নিয়ে তাদের ৩৬৫ তম প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মণিপুর গত ২১ মাস ধরে একটি গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, এবং প্রায় ৬০,০০০ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। এই সংকটে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা গৃহহীন হয়েছেন, মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এবং চরম দুর্দশা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়েছেন। তাদের পুষ্টি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। শিশু, গর্ভবতী মহিলা, স্তন্যদানকারী মা এবং বয়স্ক নারীরা এই কঠিন পরিস্থিতিতে গভীর মানসিক ও সামাজিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব এই দুর্দশাকে আরও গভীর করেছে। এই অবস্থায় একটি বিশেষ কমিটি গঠন অত্যন্ত জরুরি। এই কমিটির মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা ও সরাসরি তদারকি নিশ্চিত করা উচিত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাস্তুচ্যুত শিশুদের শিক্ষা, স্তন্যদানকারী মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা এবং ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে বিশেষ পদক্ষেপ প্রয়োজন। এছাড়া, ত্রাণ শিবিরে নারী ও শিশুদের যৌন হিংসা থেকে রক্ষার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটি আরও পরামর্শ দিয়েছে যে, মণিপুরের ত্রাণ শিবিরে নারী ও শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য, প্রাতঃরাশ এবং উপযুক্ত বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। মন্ত্রকের উচিত অতিরিক্ত তহবিল বরাদ্দ করে এই সুবিধাগুলি নিশ্চিত করা, যাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ত্রাণ শিবিরে থাকা নারী ও শিশুদের সহায়তা দেওয়া যায়।

মণিপুরে জাতিগত সহিংসতা ২০২৩ সালের মে মাসে শুরু হয় এবং তা এখনও চলমান। এই সংঘর্ষে মণিপুর জাতিগতভাবে গভীরভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এই সময়ে নারীদের বিরুদ্ধে একাধিক সহিংসতার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। গত ১৯ জুলাই, ২০২৩-সালে একটি ৩০ সেকেন্ডের ভিডিও প্রকাশিত হয়, যেখানে দেখা যায় দুজন কুকি-জো মহিলাকে নগ্ন করে শোভাযাত্রায় হাঁটানো হচ্ছে এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের পুরুষদের একটি দল তাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে।

এদিকে মণিপুরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ মোদি সরকার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। ফের রবিবার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ১৩টি থানা এলাকাকে বাদ দিয়ে নতুন করে সেনার বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের মেয়াদ ছয়মাস বাড়ানোর ঘোষণা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে আফস্পা জারির ঘোষণা হয়েছে নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল প্রদেশের কিছু অংশে। এরফলে কার্যত সেনার একচ্ছত্র ক্ষমতার আওতায় এল উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্য।


আরও পড়ুন – সংসদের রিপোর্টে বঞ্চনা ফাঁস! নারী ও শিশু কল্যাণেও ভাঁওতা মোদি সরকারের


_

_

_

_
_

_

_