ফেক ভিডিও-তে অশান্তি-ইন্ধন কিশোরদের! বিজেপির ‘অদৃশ্য সুতো’ ফাঁস কুণালের

বাংলায় আগুন জ্বলার ছবি দেখালে লাভ বিজেপির (BJP)। আর বিজেপির বি-টিম কংগ্রেস, সিপিআইএমের। আমরা তদন্ত দাবি করছি, এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্র (conspiracy)

মুর্শিদাবাদে কোনও রকম অশান্তি শুরু আগে ভিডিও বিবৃতি বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতাদের। পুলিশের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কথা। তারপরেই কিছু বহিরাগত ওয়াকফ বিরোধীদের মিছিলে ঢুকে ধুলিয়ান (Dhulian) এলাকায় অশান্তি শুরু করল। আর সেখানে মুখ শুধুই একদল কিশোরের। কোনও নেতা নেই, যেন অদৃশ্য সুতোর টানে অশান্তি বাধানোই উদ্দেশ্য তাদের। অশান্তি পূর্ণতা পেতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় (social media) একগুচ্ছ ছবি, যার একটিও বাংলার বা মুর্শিদাবাদের নয়। ঠিক এভাবেই পর্যায়ক্রমিক অশান্তির পরিবেশ তৈরি করে এক মঞ্চে রাজ্যের বিজেপি নেতারা। মুর্শিদাবাদের সুতি-সারশেরগঞ্জের অশান্তির ঘটনার পর্যায়ক্রমিক বিশ্লেষণ করে বিজেপির চক্রান্ত স্পষ্ট করে দিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। সেই সঙ্গে দাবি জানানো হল, অশান্তির মিথ্য়ে ছবি পোস্টের পিছনে দায়ী যারা, তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের।

শুক্রবারের অশান্তির পরে সুতির বহু বাসিন্দা দাবি করেছিলেন হামলাকারীদের তাঁরা চিনতে পারেননি। সাংসদ খলিলুর রহমান (Khalilur Rahaman) দাবি করেন, ধুলিয়ান চিরকাল হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির জায়গা। সেখানে স্থানীয় কোনও মানুষ হামলার ঘটনা ঘটাতে পারে না। যারা হামলা চালিয়েছিল, তারা মূলত কিশোর বয়সী, যাদের প্ররোচিত করে হামলা চালানো হয়েছিল। বিজেপির মিডিয়া সেলের প্রদীপ ভাণ্ডারি পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার ভুল তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেন। রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার (Rajeev Kumar, DGP) স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে। গুজবের আতঙ্ক থেকে হিংসার পথে যায় সাধারণ মানুষ, এমন আশঙ্কার কথাও জানান তিনি।

তারপরেও বিরত থাকেনি বিজেপি। বিজেপির ছড়ানো ফেক ছবি (fake picture) তুলে ধরে তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ দাবি করেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট। এই ছবিগুলো মুর্শিদাবাদের এই ঘটনার নয়। লক্ষ্মৌয়ের (Lucknow) এনআরসি আন্দোলনে ছবি বাংলার বলে পোস্ট করছে। জলন্ধরের (Jalandhar) একটি বাড়িতে আগুনের ছবি মুর্শিদাবাদের আগুন লাগানোর ছবি বলে বাজারে ছড়ায়। ম্যাঙ্গালোর, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ, অসমের এনআরসি প্রতিবাদের ছবি ছড়াচ্ছে। অন্য রাজ্য, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির যে কোনও ঘটনা-দুর্ঘটনার ছবি বিজেপি ছেড়ে দিচ্ছে মুর্শিদাবাদের ছবি বলে। সতর্ক থাকতে হবে। এই ভয়ঙ্কর গুজব, ধর্মীয় প্ররোচনা বাড়তে দেবেন না।

পাশাপাশি যে অচেনা কিশোরদের হামলা করানোর কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল তারা সীমান্তের ওপার থেকে কোনও রাজনৈতিক দলের প্ররোচনায় এসেছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয় তৃণমূলের তরফে। কুণাল ঘোষ দাবি করেন, বাংলাকে বদনাম করার জন্য, ইস্যু করার জন্য, প্ররোচনা দেওয়ার জন্য এই গণ্ডগোল করানো হয়েছে। যে মুখগুলো গণ্ডগোল করেছে তাদের মূল পাণ্ডাদের এলাকার মানুষ চিনতে পারছে না। একটা অভিযোগ আসছে, কোনও কোনও রাজনৈতিক দলের অংশ, কেন্দ্রের কোনও কোনও এজেন্সির (agency) পরিচালনায় একটা গোপণ ব্লু প্রিন্টের (blue print) মাধ্যমে বিএসএফ-এর একাংশকে কাজে লাগিয়ে দুষ্কৃতী হামলাবাজ, যারা এই ধরনের কাজ করে, তাদের ঢুকিয়ে গণ্ডগোল করিয়ে আবার সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ যারা বেশি উসকালো তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এবং এলাকার মানুষ চিনতে পারছে না। তারাই লোক ক্ষেপিয়েছে, তারাই আগুন লাগিয়েছে, তারাই গণ্ডগোল তৈরি করেছে। বাংলায় আগুন জ্বলার ছবি দেখালে লাভ বিজেপির (BJP)। আর বিজেপির বি-টিম কংগ্রেস, সিপিআইএমের। আমরা তদন্ত দাবি করছি, এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্র (conspiracy)।

বিজেপির চক্রান্তে মুর্শিদাবাদে অশান্তি ও তার প্রচার করে নিজেদের অ্য়াজেন্ডা তুলে ধরার বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলের পর্দাও এদিন ফাঁস করে দেন কুণাল। রবিবার রাতারাতি বিজেপির বিবাদমান চার নেতা, দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী ও রাহুল সিনহাকে এক মঞ্চে দেখা যায়। সেখানেই কুণাল ঘোষের প্রশ্ন, মুর্শিদাবাদের অশান্তি, তা নিয়ে বিজেপির বারবার বিভিন্ন কথা। আর এবার চারজনের একসঙ্গে হওয়া, এর থেকে আরও বেশি করে প্রমাণিত অদৃশ্য সুতোর টান। এরা একে অপরকে দেখতে পারে না। যে রিমোট কন্ট্রোলে গণ্ডগোল সেখান থেকে নির্দেশ এক মঞ্চে যাওয়ার। বাংলায় এই ঘটনা ঘটানো আর তার রাজনৈতিক ফায়দা তোলা। আমরা যে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব দিচ্ছি সেই ষড়যন্ত্রেরই সত্যতা দেখা যাচ্ছে এই ধরনের আচরণে।