
সপ্তাহে অন্তত একদিন উপবাস করো এবং দীর্ঘায়ু হও । ‘ উপবাস ‘ , ‘ ফাস্টিং ‘ , ‘ সিয়াম ‘ , ‘ অনশন ‘ ইত্যাদির ফলেই আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে ঘটতে থাকে এক আশ্চর্য ঘটনা , যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘ অটোফেজি ‘ , যেটা না ঘটলেই শরীর হয়ে ওঠে রোগের বাসা । আমাদের শরীরের কোষগুলোর ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে অসংখ্য ডাস্টবিন ।

যখন শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পায় , তখন কোষগুলো ব্যস্ত থাকে , ডাস্টবিনে জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করার সময় পায় না । দীর্ঘদিন আবর্জনা পরিষ্কার না করলে নানা রোগ শরীরে বাসা বাঁধে। কিন্তু উপবাস বা অনশন করলেই কোষগুলো কোনো কাজ না পেয়ে আবর্জনা পরিষ্কার করতে শুরু করে অর্থাৎ খাবার না পেয়ে নিজেরাই নিজেদের খেতে থাকে । বিজ্ঞানের ভাষায় এরই নাম অটোফেজি বা স্ব-ভক্ষণ।

অটোফেজি হলো কোষের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া , যেখানে শরীর তার ক্ষতিগ্রস্ত কোষের উপাদানগুলোকে ভেঙে ফেলে এবং নতুন কোষ তৈরি ও কোষের কার্যকারিতা বজায় রাখতে পুনরায় ব্যবহার করে । অটোফ্যাজি ( Autophagy ) শব্দটি গ্রিক শব্দ , অটো মানে স্ব এবং ফ্যাগো থেকে এসেছে ফ্যাজি , যার অর্থ খাওয়া । শরীরের কোষের মধ্যে থাকা অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিগ্রস্ত উপাদান, যেমন প্রোটিন , অঙ্গানু ইত্যাদি ভেঙে দেয় এবং সেই উপাদানগুলো পুনরায় ব্যবহার করে ।

কোষের নিজস্ব উপাদানের ভাঙচুর চলার সঙ্গে সঙ্গে কোষের বাইরে থেকে আসা উপাদান , যেমন ব্যাকটিরিয়া , ভাইরাস ইত্যাদি হজম করার প্রক্রিয়াও সমানে চলতে থাকে । অটোফেজি কোষের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে । রোগ প্রতিরোধ করে । ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। বিভিন্ন রোগ , এমনকি ক্যান্সার ও নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে ।


জাপানি বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওহসুমি ২০১৬ সালে চিকিৎসা- বিজ্ঞানে ( Physiology of medicine ) নোবেল পুরস্কার পান তাঁর অটোফেজি ( Autophagy ) বিষয়ক গবেষণার জন্য , যেখানে তিনি কোষের আবর্জনা পরিষ্কার করার বিষয়টি উন্মোচন করেন । কোষের স্বাস্থ্যের জন্য অটোফেজি প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করে তার বিস্তারিত তথ্য তিনি আবিষ্কার করেন যা মানবদেহের পক্ষে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ । তিনি টোকিও ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির একজন অধ্যাপক ছিলেন । এই প্রক্রিয়াটি ১৯৬৩ সালে বেলজিয়ান জৈব রসায়নবিদ ক্রিশ্চিয়ান ডি ডুভ তাঁর লাইসোসমের কার্যাবলী আবিষ্কারের ভিত্তিতে তৈরি করেছিলেন ।

আমাদের শরীরে থাকে এম-জি-এফ-1 হরমোন । এই হরমোনের কাজ হলো শরীরে নতুন কোষ তৈরি করা। যখনই এই হরমোন শরীরে বেড়ে যায় , তখনই শরীরে হুহু করে কোষ বাড়তে থাকে এবং শরীরও বাড়তে থাকে । এমন হলে শরীরে বিভিন্ন রোগের আগমন ঘটে। সুগার , প্রেশার , হার্টের ব্যামো , কিডনি , লিভার ও চোখের সমস্যা , এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত তখন শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ।

এখন প্রশ্ন হলো , এই হরমোন শরীরে বাড়ে কেন ? এর উত্তরে প্রথমেই বলতে হয় , যখনই প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া হয় , তখনই এমন অবস্থা তৈরি হয় । যদি কোনো মানুষ বছরে অন্তত ২০ থেকে ২৫ দিন ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা সম্পূর্ণ উপবাস করে , তখন তার শরীর থেকে এই হরমোনের

( M.G.F.1 ) পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কমে যায় । এই অবস্থায় তার শরীরে নতুন কোষ তৈরি হতে পারে না এবং শরীরের সবল কোষগুলো দুর্বল কোষগুলোকে খেতে শুরু করে । ফলে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য হয়ে যায় । তাই অটোফেজি আমাদের নীরোগ ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য এতটা গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন – উত্তরপ্রদেশে চলন্ত গাড়িতে বিউটিশিয়ানকে ধর্ষণ! বোনের সামনেই ঘাড়ে গলায় কোপ তরুণীকে

_

_

_