বাঙালির কাছে আবেগের আরেক নাম দিঘা (Digha) । রঙ – রূপ – বৈচিত্রে সৈকত সুন্দরীর আকর্ষণ চিরকালীন। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ধর্মীয় আবেগ। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) অভাবনীয় উদ্যোগে এ যেন এক নতুন দিঘা। শুধু নৈসর্গিক বেলাভূমি আর ঝাউ বনের হাতছানি নয়, দিঘার নতুন পরিচিতি হবে বাঙালির নিজস্ব জগন্নাথ ধাম (Jagannath Dham) হিসাবে। অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ লগ্নে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে দ্বারোদ্ঘাটন হতে চলেছে নতুন শ্রী মন্দিরের। তারপর পুরীর দ্বৈতপতির হাত ধরে সমস্ত ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার। দিঘায় জগন্নাথ ধাম ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে সৈকত নগরী জুড়ে এখন উৎসবের মেজাজ। মাহেন্দ্রক্ষণের আর মাত্র একদিন বাকি।
বাংলা ও বাঙালির মননে এখন শুধুই দিঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের মেগা ইভেন্ট। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ রাজ্য মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য এবং প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তারা দিঘায় পৌঁছেছেন। সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার মন্দির চত্বরে গিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন। শিল্পীরা, একে একে জড়ো হতে শুরু করেছেন। জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকতে বহু দেশি পর্যটক থেকে শুরু করে বিদেশিরাও দিঘায় আসছেন। কারোর যাতে কোন রকমের অসুবিধা না হয় সে বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, সবার দৃষ্টি রেখেছে প্রশাসন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার জন্য মন্দির সংলগ্ন এলাকায় একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সোমবার থেকেই দিঘা শহরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তিন কিলোমিটার আগে গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে শহরে প্রবেশ করতে হচ্ছে। কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা সৈকত নগরী। মানুষের উত্সাহে কোনও খামতি নেই। রাজ্যের নানান প্রান্ত থেকে এখনই দিঘায় ভিড় জমিয়েছেন উত্সাহী মানুষ। স্টেশন লাগোয়া মন্দির চত্বরে এখন কারোরই প্রবেশাধিকার নেই। দূর থেকেই আলো ঝলমলে জমকালো মন্দিরের একঝলক পেতে আর ক্যামেরাবন্দি করতে উঁকিঝুঁকির অন্ত নেই।চোখ ধাঁধানো আলোক সজ্জায় সেজে উঠেছে পথ ঘাট । সব মিলিয়ে পুরদস্তুর উত্সবের পরিবেশ।
দিঘার মন্দির সাজিয়ে তোলার কাজও শেষ। মন্দিরে রয়েছে মোট ৪টি প্রবেশপথ। সবকটি পথই সেজে উঠেছে ফুলের সাজে। পুরো মন্দির এলাকা ঘিরে রয়েছে সাজানো বাগান, যেখানে রোপণ করা হয়েছে রজনীগন্ধা, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, ও নানা দেশি ফুল। মন্দির উদ্বোধনের আগেই চন্দননগরের আলোয় সেজে উঠেছে সৈকতনগরী। দিঘাকে সাজিয়ে তুলতে কাজ করেছেন প্রায় দু’শো জন কর্মী। তাঁদের শিল্পকলা ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার হয়েছে ‘এসএমডি’ লাইট, যা আনা হয়েছে চিন থেকে। মন্দিরের গম্বুজ থেকে শুরু করে প্রতিটি দরজার বসানো হয়েছে রঙিন লাইটিং, বিশেষ করে উদ্বোধনের দিন থাকবে লেজার শো ও ডায়নামিক লাইট শো। উৎসবমুখর এই অনুষ্ঠান ঘিরে ধর্মীয় আবেগ, পর্যটন উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতি—সব মিলিয়ে দিঘা এখন রাজ্যের সর্বাধিক চর্চিত গন্তব্য। এই মন্দির শুধু ইট-পাথরের নির্মাণ নয়, এটি এক নতুন বিশ্বাস, এক নতুন শুরু—দিঘার হৃদয়ে জগন্নাথ এখন চিরকালীন।
–
–
–
–
–
–
–
–
–
–
–