Monday, August 25, 2025

ভারতের প্রাচীন ইতিহাসে এমন বেশ কিছু অধ্যায় আছে যা ঐতিহাসিক হলেও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। তার মধ্যে পুরীর জগন্নাথধামের ‘দেবদাসী প্রথা’ অন্যতম। মন্দিরের দেবতাকে তুষ্ট করার জন্য শূদ্রশ্রেনীর ঋতুমতী কন্যাদের দেবতার নামে উৎসর্গ করা হত। কিন্তু এই কুমারী কন্যারা ধীরে ধীরে হয়ে উঠত মন্দিরের পুরোহিত ও পারিষদ বর্গের বিকৃত যৌন লালসার শিকার।

যদিও সর্বসমক্ষে তাঁদের পরিচয় ‘দেবদাসী’ বা ‘নর্তকী’। ভারতে দেবদাসী প্রথার ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। প্রায় ৮০০ বছর ধরে চলে আসা এই প্রথা শেষ হয় ২০১৫ সালে, শেষ দেবদাসী শশীমণির মৃত্যুর সঙ্গে। তবে নব্বইের দশকে মন্দির কর্তৃপক্ষ আরও একবার এই প্রথা জিইয়ে রাখতে চেষ্টা করেছিল, কিন্ত তা সফল হয়নি।

পুরীর মন্দিরে দেবদাসীকে মহরি নামেও ডাকা হয়। ৩৬ নিয়োগের মধ্যে মহরি সেবা মূলত দেবদাসীদের সেবা। শুরুতে জগন্নাথদেবের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পরেই তাঁদের নাচগানের জন্য আগের দেবদাসীদের থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু হত। তবে দেবদাসীদেরও বিভিন্ন কাজের ভাগ ছিল। গর্ভগৃহে জগন্নাথের খাওয়ার সময় যারা গান করতেন তাঁদের ‘গায়নী’ বলা হত। প্রেক্ষাগৃহে যাঁরা নাচতেন তাঁদের বলা হত ‘নাচুনি’, ‘পাতুয়ারি’ হলেন, যাঁরা ভগবানের যাত্রায় নাচতেন। এছাড়াও গর্ভগৃহের বাইরে গান করতেন তাঁদের বলা হত ‘বাহার গায়নী’।

বিশাল মন্দিরের সম্পত্তির মালিক হয়েও মৃত্যুর পর নিজের বস্ত্র ছাড়া আর কোন কিছুরই অধিকার থাকে না তাঁর। কথিত আছে জীবিত ৫ দেবদাসী প্রভু জগন্নাথের স্বপ্নাদেশে মন্দিরে আসেন মাত্র ১২ বছর বয়সে। এরপর উক্ত বালিকারা বিভিন্ন প্রথার মাধ্যমে প্রভু জগন্নাথকে নিজের স্বামী হিসাবে মেনে নেন। দীর্ঘদিন নৃত্যগীত চর্চা করে শিক্ষা শেষে তাঁরা নিজেদের প্রভু জগন্নাথের পায়ে নিবেদন করে দেন।দেবদাসীদের জন্য প্রচলিত একটি প্রথা ছিল, স্বামীরূপে জগন্নাথকে লাভ করার পর তাঁর সন্তানের জননী যাতে না হতে পারেন তার জন্য ছিন্ন করে দেওয়া হত দেবদাসীদের নাড়ি। প্রধান দেবদাসী অথবা মাহিরী শ্বেত শুভ্র বেশ পরিধান করেন। তাঁদের বাসস্থানের সর্বত্র সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা।

মিথ আছে, এঁদের মৃত্যু হয় বার্ধক্য জনিত কারণে। চিকিৎসকের সাহায্যের প্রয়োজন হয় না তাঁদের। এমনকী কখনও কলের জলও ব্যবহার করেন না তাঁরা। রাতের তৃতীয় প্রহরে বস্ত্রে মুখ ঢেকে সমুদ্রের অজানা তটে স্নান সেরে নেন তাঁরা। মৃত্যুর পর দেবদাসীদের দেহ কখনও দাহ করা হয় না। প্রভু জগন্নাথের স্বপ্নাদেশেই তাঁদের দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয় সমুদ্রে।

এককালে দেবদাসীরা ছিলেন খুবই সম্মানীয়। তাঁদের ছিল না কোনও বৈধব্যের যন্ত্রনা। স্বাধীনতার আগে থেকেই বহু চেষ্টা করে এই প্রথা রদ করা হয়। মদনমহন মালব্য থেকে গান্ধীজি- সবাই দেবদাসীদের ‘পতিতা’ বলেই তুলনা করতেন। তবে, প্রথা উঠে গিয়েছে বলে শোনা গেলেও, এখনও মন্দিরে কান পাতলে শোনা যায় দেবদাসীদের কাহিনি।

আরও পড়ুন – ট্যাংরাকাণ্ডের ছায়া মার্কিন মুলুকে! স্ত্রী-পুত্রকে খুন করে আত্মঘাতী ভারতীয় উদ্যোগপতি

_

 

_

 

_

 

_

 

_

 

_

Related articles

গাজায় সাংবাদিকসহ ১৯ জনের মৃত্যু! নীরব নেতানিয়াহু

দুর্ভিক্ষপীড়িত গাজায় ফের রক্তক্ষয়ী হামলা চালাল ইজরায়েলি সেনা। সোমবার দুপুরে গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও...

শ্রমশ্রী প্রকল্পে ভুয়ো আবেদন রুখতে কড়া নজরদারি রাজ্যের 

ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত শ্রমশ্রী প্রকল্পে প্রকৃত ও যোগ্য প্রার্থীরাই সুযোগ পান, তা নিশ্চিত করতে বিশেষ...

আদিবাসী উন্নয়ন আরও সুদূর প্রসারি করার বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর, সৌজন্য উড়িয়ে বৈঠকে অনুপস্থিত বিজেপি

আদিবাসী উন্নয়ন নয়, রাজনীতিই যে তাদের লক্ষ্য তা আরও একবার প্রমাণ করল বিজেপি (BJP)। আমন্ত্রণ পেয়েও সৌজন্যের জবাব...

DHFC-র হারের পরই ক্লাব থেকে কর্তাদের ছোট করার চেষ্টা, জবাব দিলেন মানস

ডুরান্ড কাপের(Durand Cup) ফাইনালে পৌঁছে সকলকে চমকে দিয়েছিল ডায়মন্ডহারবার এফসি(DHFC)। বাংলার ফুটবলকে যে দল নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে, তাদের...
Exit mobile version