মৃত্যুর পরেও চারটি প্রাণে জীবনপ্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়ে গেলেন দমদমের কাশিপুরের যুবক জয়েশ লক্ষ্মীশঙ্কর জয়সওয়াল। মাত্র ২৫ বছর বয়সে এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর আঘাত পান জয়েশ। তড়িঘড়ি তাঁকে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও, চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে বুধবার ভোরে তাঁর ব্রেন ডেথ ঘটে।

তবে এখানেই শেষ হয়নি জয়েশের জীবনের মাহাত্ম্য। মরণোত্তর অঙ্গদানে রাজি হন তাঁর পরিবার। চিকিৎসকদের কথায়, যুবকের যকৃৎ, ফুসফুস, কিডনি এবং কর্ণিয়া পুরোপুরি সচল ও সুস্থ ছিল। জয়েশের যকৃৎ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এক ৬৫ বছরের প্রৌঢ়ের দেহে। অন্যদিকে, তাঁর ফুসফুসে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন এক ২২ বছরের তরুণী, যাঁর বাঁচার কোনও আশা ছিল না বলেই চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। একটি কিডনি বসানো হয়েছে অ্যাপোলো হাসপাতালে এক ৩৬ বছরের তরুণীর দেহে। অন্য কিডনিটি ‘গ্রিন করিডর’ তৈরির মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে, যেখানে ৪৭ বছরের এক মহিলার দেহে তা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ওই মহিলার দু’টি কিডনিই বিকল হয়ে যাওয়ায় তিনি নিয়মিত ডায়ালিসিসে ছিলেন।

এছাড়াও জয়েশের চোখের কর্ণিয়া দান করা হয়েছে, যা সংরক্ষিত রয়েছে দিশা আই হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই কর্ণিয়া এক দৃষ্টিহীনের জীবনে আলো এনে দিতে চলেছে। জয়েশের পরিবার জানিয়েছে, “আমাদের ছেলে চলে গিয়েছে, কিন্তু ওর অঙ্গ যাঁদের দেহে গেছে, তাঁদের মধ্যে দিয়েই ও বেঁচে থাকবে।”

চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিদিন প্রায় ৬,০০০ মৃত্যুপথযাত্রীর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব যদি সময়মতো অঙ্গদান করা যায়। বাংলায় যকৃৎ ও কিডনি প্রতিস্থাপনের হার বাড়লেও, ব্রেন ডেথের সময় যথাযথ সিদ্ধান্তের অভাবে হার্ট ও ফুসফুস প্রতিস্থাপন এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে।জয়েশের এই মহান দান সমাজের কাছে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল। তাঁর অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত যে চারটি জীবনকে নতুন আলো দেখাল, তা অঙ্গদানের সচেতনতা বৃদ্ধিতে এক নতুন বার্তা দিল।

আরও পড়ুন – জামিন মেলেনি সুপ্রিম কোর্টে! এবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন পার্থ
_

_

_

_

_


_

_

_

_

_