‘উন্নত চিকিৎসা মানেই দক্ষিণ ভারত’— এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নতুন উদাহরণ তৈরি করল হাওড়ার নারায়ণা হাসপাতাল। বাইকের ধাক্কায় গুরুতর আহত সাত বছরের রুক্মিণী রায়কে জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনে প্রমাণ করল, বাংলা চিকিৎসাক্ষেত্রে কোনও অংশেই পিছিয়ে নেই। বাবা অয়ন রায়ের কথায়, “রুক্মিণীর এখন দুটো জন্মদিন— ৮ মার্চ ওর আসল জন্মদিন, আর ১০ ফেব্রুয়ারি ওর নতুন জীবন পাওয়া দিন।”

স্কুল থেকে দাদুর সঙ্গে বাইকে ফেরার সময় তেলের ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় ভয়াবহভাবে আহত হয় ছোট্ট রুক্মিণী। ডান পায়ের মাংস ছিঁড়ে কঙ্কাল বেরিয়ে পড়ে, লিভার ও কিডনি থেকে শুরু হয় প্রবল রক্তক্ষরণ। হাওড়ার নারায়ণা হাসপাতালে ভরতি করা হয় তাঁকে। প্রথম ১২ ঘণ্টা ছিল চূড়ান্ত সংকটের। রক্তচাপ নেমে যায় ৪০/৩০-এ, হৃৎস্পন্দন পৌঁছায় ২০০-তে। চিকিৎসক ডা. শুভদীপ দাস ও ডা. গৌতম চক্রবর্তী নেতৃত্ব দেন জটিল চিকিৎসার।

তদন্তে দেখা যায়, চারটি জায়গা থেকে লিভারে রক্তক্ষরণ, ভাঙা হাড়ে থেঁতলে যাওয়া মূত্রাশয় এবং পেটের মধ্যে জমে থাকা প্রায় দেড় লিটার রক্ত। কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়ায় প্রস্রাবের পথ বন্ধ হয়ে ফুলে ওঠে ব্লাডার। তড়িঘড়ি তলপেট থেকে বাইপাস করে পথ তৈরি করেন চিকিৎসকেরা। অস্ত্রোপচারের পর রুক্মিণীকে দীর্ঘ থেরাপি ও স্কিন গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত ছিঁড়ে যাওয়া চামড়ায় বসানো হয় নতুন ত্বক।

হাসপাতালের তরফে তপনী ঘোষ জানান, “এমন জটিল ও ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় আহত শিশুকে কেউ চেন্নাই নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবত। কিন্তু বাংলা দেখাল, উন্নত চিকিৎসা এখানেই সম্ভব।” রুক্মিণীর এই ফিরে আসা শুধু এক শিশুর জয় নয়, বাংলা চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি নতুন আস্থার বার্তা।

আরও পড়ুন – মরণোত্তর অঙ্গদানে অনন্য দৃষ্টান্ত! চার জনকে নতুন জীবন দিলেন জয়েশ
_

_

_

_

_


_

_

_

_

_