Monday, May 19, 2025

থমাস কার্লোভিচ: মারাদোনার প্রিয় আর্জেন্তেনীয় ফুটবলের অজানা অধ্যায়

Date:

মারাদোনা(Diego Maradona) সেরা নাকি পেলে, এই নিয়ে দ্বন্দ আজীবন থেকেই গিয়েছে। পেলেকে(Pele) তাঁর থেকে সেরা কখনোই মানতে দেখা যায়নি দিয়েগো মারাদোনাকে। কিন্তু ফুটবলের সেই রাজপুত্রই তাঁর দেশের এক ফুটবলারকে সেরার শিরোপা দিয়েছিলেন। যে কিনা জাতীয় দলের হয়ে খেলা তাো দূরস্ত। এমনকি আর্জেন্তিনা প্রথম শ্রেনীর ফুটবলেও খেলেননি। কিন্তু সেই থমাস কার্লোভিচের(Tomas Carlovic) নাম শুনলে আজও যেন আর্জেন্তাইন ফুটবল প্রেমীরা সম্মানে মাথা নত করে। আর্জেন্তিনার(Argentina) জাতীয় দলকে নাকি নাস্তানাবুদ করেছিলেন তিনি একা। তাঁকে নাকি মাঝপথে ম্যাচ থেকে তুলে নেওয়ার অনুরোধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন সেই সময়ের আর্জেন্তিনার ফুটবল দলের কোচ। এমন আরও নানান ঘটনা রয়েছে থমাসকে নিয়ে। দিয়েগো মারাদোনা তাঁকে সেরার সেরা শিরোপা দিয়েছিলেন।

কিন্তু কে এই থমাস কার্লোভিচ(Tomas Carlovic)? বিশ্ব ফুটবলে পেলে, গ্যারিঞ্চা, মারাদোনা পুসকাসদের জগতে তাঁর নাম তো কখনো দেখা যায় না। তবে কেন তাঁকে মারাদোনার মতো ফুটবলার সেরা বলেছিলেন। কেন সেই সময়ের আর্জেন্তিনার সেরা কোচে হোসে পেকারম্যান(Jose Pekermen) থেকে কার্লোস বিলার্দো, মার্সেলো বিয়েলসারা( তাঁকে আর্জেন্তাইন ফুটবলের শ্রেষ্ঠ ফুটবলারের তাকমা দিয়েছিলেন।

আর্জেন্তিনার জার্সিতে খেলেননি। খেলেননি কোনও বড় ক্লাবেও। তবুও থমাস কার্লোভিচ(Tomas Carlovic) আর্জেন্তিনা তো বটেই বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তী। তাঁর সেই পথে এগিয়ে যাওয়াটাও কোনও রোমাঞ্চের থেকে কম কিছু নয়। আর্জেন্তিনায়(Argentina) এখন আর তিনি শুধু ব্যক্তি নন পরিণত হয়েছেন এক জীবন্ত মিথে। হবে নাই বা কেন, পায়ে বল পেলে সেটাকে নিয়ে যেন যা কিছু করতে পারতেন তিনি। তাঁর সামনে একসময় গোটা আর্জেন্তিনা দলই নাকি অসহায় হয়ে পড়েছিল। হ্যাঁ এগুলো গল্পকথা নয়, একেবারেই বাস্তব।

উদ্বাস্তু ক্রোয়েশিয়ান পরিবারের এই ছেলেটা কখনোই আর্জেন্তিনার প্রথম ডিভিশনে পর্যন্ত খেলেননি। খেলেছেন দ্বিতীয় কিংবা চতুর্থ ডিভিশনে। রোজারিও(Rosario), সেন্ট্রাল করদোবার মতো ক্লাবে খেলেছেন তিনি। সেন্ট্রাল করদোবা(Central Cardova) আবার ছিল তৃতীয় ডিভিশনের ক্লাব। তাঁর হাত ধরেই দুবার দ্বিতীয় ডিভিশনে উঠেছিল তারা। মারাদোনার সঙ্গে যখন তাঁর দেখা হয়েছিল, তখন আর খেলেননা কার্লোভিচ। মারাদোনা কিন্তু খেলা দেখেননি তাঁর। কিন্তু কার্লোভিচ সম্বন্ধে তিনি জেনেই আপ্লুত হয়েছিলেন। কার্লোভিচকে যখন জার্সি উপহার দিয়েছিলেন সেই জার্সিতে লেখা ছিল “তুমিই সেরা”।

এখনকার দিনের তথাকথিত পেশাদার ফুটবলারদের সঙ্গে কখনোই একগোত্রে ফেলা যাবে না এল ট্রিঞ্চ(El Trinch) কিংবা থমাস কার্লোভিচকে। তিনি ভালবাসতেন ফুটবল খেলতে। কিন্তু সেটা দিয়ে যে প্রচুর উপার্জন করতে হবে, এমনটা কখনোই ভাবেননি তিনি বা খ্যাতি অর্জন করতে। এসব দিক নিয়ে কখনোই ভাবতেন না এই থমাস। তিনি চাইতেন শুধু ফুটবল খেলতে। সেটা কত ভরা গ্যালারীর সামনে খেলে হাত তালি পাওয়া কিংবা বাহবার জন্য নয়। তাঁর ধারনাটাই ছিল অন্যরকম। কার্লোভিচের মতে একজন ফুটবলার মাঠে ৬০ হাজার কিংবা ১ লক্ষ লোকের সামনে খেলবেন। সেখানে তাঁর থেকে সমর্থকদের যে প্রত্যাশার চাপটা থাকবে, সেখানে কখনোই ভাল মানের ফুটবল শিল্প কিংবা খেলাটা প্রদর্শন করা সম্ভব নয়। সেই কারণেই না জাতীয় শিবিরে ডাক পেয়েও মাছ ধরার জন্য তা ফিরিয়ে দিতে পেরেছিলেন। আর এখানেই যেন সবার থেকে এল ট্রিঞ্চ(El Trinch) আলাদা। হ্যাঁ তাঁকে এই নামেই আর্জেন্তিনা ফুটবল প্রেমীরা সবচেয়ে বেশি ডাকতেন।

১৯৭৬ সালে আর্জেন্তিনার কোচ মেনেত্তি থমাস কার্লোভিচকে(Tomas Carlovic) নিয়ে একটি মজার ঘটনা জানিয়েছিলেন। তাঁর খেলা দেখে এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে তাঁকে জাতীয় দলে ডেকে ছিলেন। কিন্তু সেই সময় বেশ খানিকটা দূরে ছিলেন থমাস। মাছ ধরার জন্যই নাকি এক দ্বীপে গিয়েছিলেন। জাতীয় দলে ডাক পেলেও মাছ ধরা ছেড়ে আসতে পারবেন না, সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন।

মাঝমাঠে খেলতেন কার্লোভিচ। কার্যত প্রতিপক্ষ শিবিরের কাছে তিনি ত্রাস ছিলেন। ১৯৭৪ সালে রোজারিওর বিরুদ্ধে একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে নেমেছিল আর্জেন্তিনা জাতীয় দল। সেখানেই ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে আর্জেন্তিনার ম্যানেজার ভ্লাদিসলাও ক্যাপ তাঁকে মাঠ থেকে তুলে নেওয়ার অনুরোধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। হবে নাই বা কেন তাঁর সামনে যে জাতীয় দলের ফুটবলাররা দাঁড়াতেই পারছিলেন না। রোজারিও একাদশ তখন ৩-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল। সৌজন্যে থমাস কার্লোভিচ। কোনওরকম প্রস্তুতি ছাড়াই মাঠে নেমেছিলেন সেদিন। গোটা বিশ্ব সেদিনই বুঝে গিয়েছিল কতটা প্রতিভা রয়েছে এই আর্জেন্তাইন ফুটবলারের মধ্যে।

কখনোও রাস্তায় কিংবা কখনোও প্রতিকূল কোনও জায়গায় চল থমাস কার্লোভিচের ফুটবল খেলা। রাস্তা ভর্তি লোক, সেখানেই নিজের খেয়ালে ফুটবল নিয়ে খেলা, প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতেন এল ট্রিঞ্চ। ৭৩ বছর বয়সে মাথায় আঘাত পেয়ে মারা যান। কিন্তু গোটা বিশ্বের জন্য রেখে যান ফুটবল নিয়ে এক নয়া দৃষ্টান্ত।

Related articles

বাংলাদেশকে হারিয়ে অনুর্ধ্ব-১৯ সাফ চ্যাম্পিয়ন ভারত

রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে অনুর্দ্ব-১৯ সাফকাপ(U-19 SAFF CUP) চ্যাম্পিয়ন ভারত। পেনাল্টিতে বাংলাদেশকে ৪-৩ গোলে হারাল মেন ইন ব্লুজ...

রাম-রাম রাজনীতির বোঁড়ে অভয়ার বাবা-মা! আচমকাই হাজির শিক্ষক আন্দোলন মঞ্চে

রাজ্য সরকার অপরাধীকে গ্রেফতার করে তার সর্বোচ্চ শাস্তির পথ সুগম করেছিল। আদালতে বিচারাধীন এই মামলা এখনও বিচার দিতে...

খুশির আবহ দার্জিলিং চিড়িয়াখানায় ! দুটি স্নো লেপার্ড শাবকের জন্ম দিল “রের”

সুখবর দার্জিলিংয়ের পদ্মজা নাইডু চিড়িয়াখানা থেকে। স্নো-লেপার্ড ‘রের’ এবং ‘নামকা’-র ঘরে এসেছে নতুন অতিথি। ১৩ মে রাতে ওই...

বীর সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা! তৃণমূলের শহিদতর্পণ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে ব্যাপক সাড়া রাজ্যে 

দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানে দেশের বীর সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শহিদদের আত্মার শান্তি কামনায় রাজ্যজুড়ে পালিত হল তৃণমূল...
Exit mobile version