ওয়াকফ আইনকে বাতিল করতে গেলে এতে সাংবিধানিক অধিকার খর্ব হচ্ছে, এই সংক্রান্ত যথেষ্ট প্রমাণ প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্টে ওয়াকফ মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এই প্রশ্ন তুললে মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী কপিল সিব্বল দাবি করেন ওয়াকফ সম্পত্তির (WAQF property) তদন্তে যথাযথ তদন্ত হয়নি। সেই সঙ্গে এই আইনে লুকিয়ে ধর্মীয় অধিকারে হাত দেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে জামা মসজিদ থেকে সম্ভল মসজিদের উদাহরণ টেনে আনেন তিনি। মঙ্গলবার এই মামলায় কোনও নির্দেশ দেয়নি প্রধান বিচারপতি বি আর গভাই (CJI B R Gavai) ও বিচারপতি অগাস্টিন মাসির ডিভিশন বেঞ্চ। বুধবার আবার এই মামলার শুনানি রয়েছে।

পূর্ববর্তী প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার ডিভিশন বেঞ্চ কেন্দ্রের কাছে মূলত তিনটি প্রশ্ন করেছিলেন। সেখানে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আগে থেকে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসাবে চিহ্নিত সম্পত্তিগুলিকে নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে কি না, তা স্পষ্ট করতে হবে। সেই সঙ্গে ওয়াকফ বাই ইউজার (WAQF-by-user) ও ওয়াকফ বাই ডিড (WAQF-by-deed) সম্পত্তিগুলি আদৌ ওয়াকফ সম্পত্তি হিসাবে গণ্য হবে কি না, তা জানাতে হবে। মঙ্গলবার মামলার শুনানিতে কেন্দ্রের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সেই সব প্রশ্নের উত্তর পেশ করেন। নিশ্চিত করা হয়, রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে মামলাটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।

মামলাকারীদের পক্ষে সওয়াল শুরু হতেই প্রধান বিচারপতি বি আর গভাই স্পষ্ট করেন, এই আইন সংবিধান বিরোধী তার সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ না থাকলে আদালত এতে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। সেখানেই ওয়াকফ পরিচালন সমিতিতে (WAQF administrative body) অন্য ধর্মের ব্যক্তিদের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। সেখানে হিন্দুধর্ম, শিখধর্মের উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি। সেই সঙ্গে ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে সমীক্ষার পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব একজন জেলা শাসকের হাতে তুলে দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী অভিষেক মনু সাংভি স্পষ্ট করে দেন, জেপিসি-র সমীক্ষার ক্ষেত্রে অর্ধেক সমীক্ষা হয়েছ। তথ্য পেশ করে তিনি বলেন, গোটা দেশে ওয়াকফ সম্পত্তির (WAQF property) পরিমাণ ৮.৭২ লক্ষ। সেখানে সমীক্ষা চালানো হয়েছে ৪ লক্ষ ওয়াকফ বাই ইউজার (WAQF-by-user) সম্পত্তির, যা আদতে মাত্র ৫০ শতাংশ। তার থেকেও বড়, দেশের ২৮ টি রাজ্যের মধ্যে মাত্র ৫ রাজ্যে ও ৪ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ওয়াকফ সম্পত্তির বিপুল বৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রের তোলা প্রশ্নেরও কড়া জবাব দেন তিনি। কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয় অল্প সময়ে ওয়াকফ সম্পত্তির ১১৬ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। সেখানেই পাল্টা সাংঘির সওয়াল, ওয়াকফের জন্য পোর্টালে নিবন্ধিকরণ শুরু হয়েছে ২০১৩ সালে। একসঙ্গে পুরোনো যে সম্পত্তিগুলি নিবন্ধ করা হয়েছে তাকে একসঙ্গে দেখিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের প্রকাশ করেছে কেন্দ্রের সরকার।

সেই সঙ্গে কেন্দ্রের নতুন আইনে ওয়াকফ সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কপিল সিব্বল। শতাব্দী প্রাচীন সম্পত্তিকে রেজিস্ট্রেশনের অভাবে ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ওয়াকফ সম্পত্তিকে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ সংস্থার অধীনে নিয়ে সংরক্ষণ করা হলে তা ওয়াকফের অধীনে আর থাকবে না, স্পষ্ট করেন সিব্বল। এদিনের শুনানিতে দুপক্ষের বক্তব্য শুনে বুধবার পর্যন্ত শুনানি স্থগিত করে দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।

–
–

–
–

–

–

–

–

–
