নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা কারচুপি নিয়ে গোটা দেশে প্রথম যে রাজনৈতিক দল তথ্যসহ দুর্নীতি তুলে ধরেছিল সেটাই ছিল তৃণমূল। এরপরই কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন নড়েচড়ে বসে ভোটার তালিকা সংশোধনের পথে যায়। সেখানেই একাধিক আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)। আদতে ভুয়ো ভোটার তালিকা তৈরিতে কীভাবে বিজেপি ও তার সহায়ক রাজ্যগুলি সক্রিয় তার উদাহরণ মুখোশও খুলেছে তৃণমূলই। রাজ্যের আধিকারিকদের দিক থেকে যাতে কোনওভাবে ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কোনওরকম গরমিল না হয়, তা নিয়ে উত্তরবঙ্গের প্রশাসনিক সভা থেকে সরকারি আধিকারিকদের তালিকা তৈরি নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee)। সেই সঙ্গে সার্ভের (survey) নামে বাইরের রাজ্য় থেকে আসা ‘টিম’ সম্পর্কে সতর্ক করেন তিনি।

জেলা স্তরের আধিকারিক যারা ভোটার তালিকার কাজ করেন তাঁদের উপর নজরদারি করতে জেলাশাসকদের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরকন্যার প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভোটার লিস্টে (voter list) যারা কাজ করছেন জেলাশাসক ও ডিভিশনাল কমিশনাররা যেন সেটা দেখেন।

তালিকা তৈরিতেই গরমিলে কীভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন যোগ্য ভোটাররা, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আধিকারিকদের উদ্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা যেন বসে গুরুত্ব দিয়ে কাজটা করেন। এক এক জায়গায় একজনের নাম তিনবার করে তোলা হয়েছে। ফলে যিনি যোগ্য ব্যক্তি তিনিও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।

সেখানেই এই ধরনের গাফিলতিকে চিহ্নিত করতে জেলাশাসকদের মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, যাঁরা এটা করছেন তাঁদের নিহ্নিত করুন, যাঁরা কম্পিউটারে বসে কাজ করছেন। সবাই খারাপ আমি বলব না, তবে শর্ষের মধ্যে ভূত আছে।

সেই সঙ্গে নিজের সাম্প্রতিক উদাহরণ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি মুর্শিদাবাদে গিয়েছিলাম। সেখানে ভোটের ঘর পড়ে আছে কোনও লোক নেই কাজ করার। এই ভোটার কেন্দ্রে সারপ্রাইজ ভিজিট (surprise visit) করতে হবে। প্রশাসনিক আধিকারিকদের পাশাপাশি ভোটার তালিকা (voter list) নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা কর্মীদেরও সজাগ থাকার নির্দেশ দেন তৃণমূল নেত্রী।

ফের একবার বিভিন্ন এলাকায় বহিরাগত সমীক্ষাকারী নিয়েও সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী। নেতাজী ইন্ডোরের সভা থেকে প্রথমবার যখন এপিক দুর্নীতির পর্দাফাঁস করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, তখনই বহিরাগতদের কোনও তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। উত্তরকন্যার সভা থেকে ফের একবার এলাকার নাম উল্লেখ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় সতর্ক করেন, বিহার, অসমসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক ঢুকছে। আমাদের লোকের আধার নম্বর-সহ বিস্তারিত নিয়ে চলে যাচ্ছে। এটা কেন হবে? মনে রাখবেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক ছাড়া কেউ কাউকে কোনও ডিটেলস দেবেন না। এরকম অনেককে ধরা হয়েছে। ঝাড়গ্রাম, মালদহ, কোচবিহার, কলকাতা, ডায়মন্ড হারবার-সহ একাধিক জায়গায় এরকম দল ধরা পড়েছে।
সকলের নজরদারি ছাড়া কেন এই তালিকা তৈরি প্রক্রিয়া সম্ভব নয়, তা ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখন ক্ষতিকারক শক্তি বেড়েছে। একজনের পক্ষে নজরদারি সম্ভব নয়। প্রত্যেককে দায়িত্ব নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। নজরদারি রাখতে হবে।

–
–

–

–

–

–

–
