Saturday, November 8, 2025
উৎপল সিনহা

” বাঁকুড়ার মাটিকে পেণাম করি দিনে-দুপুরে … ”
” বলি বেলাতোড়ের
যামিনী রায় ,
বাঁকুড়ার রামকিঙ্কর বেজ …
তারা জগতটাকে
দেখাইন দিল আঁকাজোকায়
নাই আর কেউ … ”
( কথা ও সুর :
সুভাষ চক্রবর্তী )

শিল্পধর্ম পালনে অনন্ত নরকে যেতেও রাজি ছিলেন আমৃত্যু আপসহীন যামিনী রায় । ‘ যামিনী রায়ের ছবি ‘ , কথাটা শুনলেই এক আকাশ ছবি , যেন ছবির মেলা বসে যায় শিল্পরসিকদের মনে ।

যশোরের প্রতাপাদিত্য রায়ের বংশজ অসামান্য এই শিল্পীর পূর্বপুরুষেরা ভাগ্যের ফেরে এসে পড়েছিলেন বাঁকুড়ার বেলেতোড়ে । স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়েছিলেন যাঁর লেখা প্রবন্ধ পাঠ ক’রে , বিষ্ণু দে যাঁকে তুলনা করেন পাবলো পিকাসোর সঙ্গে , সেই যামিনী রায়ের ছবি প্রাণবন্ত হয়ে উঠতো তাঁর শিল্পীমনের সারল্য মিশ্রিত দৃঢ় প্রত্যয়ে ।

শিল্পীর বয়স যখন ৬৫ , তখন তাঁর জীবনে ঘটে যায় এক আশ্চর্য ঘটনা , যা তাঁকে এক নতুন দৃষ্টি দেয় ।
তাঁর আঁকার ঘরটি ছিল চমৎকার । আর সব বাড়ির চেয়ে আলাদা । দেওয়াল ঘেঁসে সার সার সাজানো অজস্র ছবি । কী তার রঙ , এমন সচরাচর দেখা যায় না।
আর তাঁর এই ছবিঠাসা ঘরে দেশ-বিদেশের কত যে শিল্পবোদ্ধা আসেন প্রতিদিন , তার হিসেব কে রাখে !
একটি ছোট্ট মেয়ে কিন্তু রোজ এসব লক্ষ্য করে । সে একদিন শিল্পীকে প্রশ্ন করে , ” আচ্ছা শোনো , তোমাদের ওই ঠাকুরঘরে সবাই কেন জুতো পায়ে আসে ? তুমি বারণ করতে পারো না ? ” শুনে চমকে ওঠেন বর্ষীয়ান শিল্পী ! বলে কি মেয়ে ? ঠাকুরঘর ? হ্যাঁ , তাইতো , ঠাকুরঘরই তো বটে ! ঠিকই তো বলছে এই মেয়ে । কিন্তু এভাবে তো কখনও ভেবে দেখিনি আমি !
ছোট্ট মেয়েটির মাথায় আদর করে হাত বুলিয়ে দেন তিনি। শিশুর নিষ্পাপ মন কত বড় একটা কথা বলে গেল যা কখনও কেউ বলে নি শিল্পীকে । শিল্পী নিজেও কখনও এভাবে ভাবেন নি । শিল্পধর্ম পালনের ঘর , সৃষ্টির আধার , সৃজনক্ষেত্র , সে তো অবশ্যই ঠাকুরঘর ।

আমাদের এই বঙ্গভূমি বহু বিশ্ববরেণ্য শিল্পীর জন্ম দিয়েছে , কিন্তু সবাইকে সমান মর্যাদা দেওয়ার কথা ভাবে নি বাঙালি । তবে যামিনী রায়ের নাম শোনেনি এমন বাঙালি খুব একটা খুঁজে পাওয়া যাবে না । এমনই তাঁর ছবির আকর্ষণ ।

যে কোনো মধ্যবিত্ত বাঙালির ড্রয়িংরুমে , এমনকি শয়নকক্ষেও নিজের জায়গা করে নিয়েছেন এই ক্ষণজন্মা চিত্রশিল্পী । তিনি আছেন বাঙালির দেওয়ালে , সস্তার নড়বড়ে বাঁধাইয়ে , ডেস্কে , ক্যালেন্ডারে , নতুন বছরের শুভেচ্ছার ছবিতে , বিয়ের কার্ডে , খেলায়-মেলায় , বিভিন্ন প্রদর্শনীতে । বাঙালির গৃহসজ্জায় এখনও অপরিহার্য যামিনী রায় ।

জাতশিল্পী , স্পষ্টবক্তা এবং দেশপ্রেমিক যামিনী রায় মানুষের আচরণ এবং কথাবার্তার মধ্যে দিয়েই , খুব অল্প পরিচয়েই মানুষের মন বুঝে নিতে পারতেন এবং সেই অনুযায়ী মন্তব্য করতেন। আগামী সময় , আগামী সমাজ নিয়ে সবসময় ভাবিত থাকতেন ।

সমাজ ও দেশকাল নিয়ে তাঁর ভাবনার অন্ত ছিল না । তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা ছিল অসামান্য । ঋষিকল্প সনাতন কৃচ্ছতাকে জীবনে মিশিয়ে নিয়েই তাঁর ছবি আঁকার সাধনা । আর ছিল প্রখর আত্মমর্যাদা । অবিস্মরণীয় যামিনী রায় আমাদের সাধের বঙ্গভূমির অন্যতম সেরা অলংকার এবং একই সঙ্গে অহংকার ।

আরও পড়ুন – আমি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নই, ট্রোলিং নিয়ে জবাব সৌরভের

_

 

_

 

_

 

_

 

_

 

_

Related articles

জন্মদিনে চরম অসৌজন্য! অভিষেককে নিয়ে বিজেপির পোস্টে সরব নেটদুনিয়া

বাংলায় বরাবর সৌজন্যের রাজনীতি দেখিয়ে এসেছে সব রাজনৈতিক দল। বাম আমলে সিপিআইএম নেতা থেকে তৃণমূল বা কংগ্রেস নেতাদের...

আইএসএল নিয়ে প্রবল অনিশ্চয়তা, অনুশীলনই বন্ধ রাখল মোহনবাগান

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে মোহনবাগানের(Mohun Bagan) সিনিয়র দলের অনুশীলন। খবর অনুযায়ী, আইএসএল নিয়ে প্রবল অনিশ্চয়তা। টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয়...

জন্মদিনে মানুষের ভালবাসা মনে করিয়ে দেয় কর্তব্য: ভিড়ে মিশে গেলেন অভিষেক

সকাল হওয়ার অপেক্ষা নয়। রাত ১২টা বাজার অপেক্ষায় ছিল বাংলার বিপুল জনতা। জননেতা, তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক...

ফলপ্রকাশ SSC একাদশ-দ্বাদশের: ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ, দাবি ব্রাত্যর

বাংলায় কর্মসংস্থানে সদা সচেষ্ট প্রশাসন ও প্রশাসনের সব দফতর। ফের একবার তার প্রমাণ মিলল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এসএসসি-র...
Exit mobile version