Thursday, November 20, 2025

তৃতীয় মোদি সরকারের বর্ষপূর্তি: প্রতিশ্রুতি থেকে যোজন দূরত্ব, ধুইয়ে দিল তৃণমূল

Date:

Share post:

সরকার গঠনের পর এক একটা বছর পূরণ করা যেন বিজেপির কাছে বড় দায়। তাই প্রত্যেক বর্ষপূর্তিতে ঘটা করে সেই কথা জানাতে হয় কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বকে। তবে সেই ঘোষণাতেই সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতৃত্বর দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে কত যোজন দূরে বর্তমান তৃতীয়বারের মোদি সরকার। ইস্তাহারের (manifesto) প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে বাস্তবের সঙ্গে তার পার্থক্য স্পষ্ট করে দিল তৃণমূল।

২০২৪ সালের ৯ জুন তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসে নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) সরকার। চেয়েচিন্তে জোট বাঁচানো সরকার গঠনের পথে সহজ না হলেও তার বর্ষপূর্তি পালনে কোথাও কুণ্ঠিত নয় রাজ্য থেকে কেন্দ্রের নেতারা। তবে এই ক্ষমতায় আসার জন্যই ঘটা করে ৬৯ পাতার ইস্তাহার (manifesto) প্রকাশ করেছিল বিজেপি। সেখানে যা ছিল, ২০২৫-এ সেই প্রতিশ্রুতি কোথায়, তা স্পষ্ট করে দিল তৃণমূল। যেমন –

প্রতিশ্রুতি ১ – গরিবের ভাতের থালা সুরক্ষিত করতে আমরা আরও উদ্যোগ নিচ্ছি (পৃষ্ঠা ১১)।
বাস্তব – বিশ্বব্যাঙ্কের মতে, ৭.৫ কোটি ভারতীয় প্রতিদিন ২২৫ টাকার কম আয় করেন। সবচেয়ে গরিব (৫% মানুষ) যারা, তাদের দৈনিক খরচ ৬৮ টাকা। একটি নিরামিষ থালির খরচ ৭৭ টাকা।

প্রতিশ্রুতি ২ – নব-মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্ষমতায়ন (পৃষ্ঠা ১৩)।
বাস্তব – ২০১৪ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে গৃহস্থালী ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে, আর আর্থিক সঞ্চয় গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে।

প্রতিশ্রুতি ৩ – উচ্চ-মানের কর্মসংস্থান সৃষ্টি (পৃষ্ঠা ১৪)।
বাস্তব – ২০২১ সালের পর থেকে অধিক সংখ্যক মানুষ কৃষিকাজে নিযুক্ত হতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমানে ৪৬% কর্মী কৃষিতে যুক্ত। প্রতি ৫ জনের মধ্যে ৩ জন স্বনির্ভর, বিশেষজ্ঞদের ভাষায় এটি “কর্মসংস্থানের সেরা ধরণ নয়”।

প্রতিশ্রুতি ৪ – কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি (পৃষ্ঠা ১৫)।
বাস্তব – ২০১৮-২৩ সালের মধ্যে কর্মসংস্থানে মহিলাদের অংশগ্রহণ মাত্র ২.৩ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে। ৫ বছরে কাজের সময় বেড়েছে মাত্র ১০ মিনিট। কাজের ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের অংশগ্রহণের হার অর্ধেক।

প্রতিশ্রুতি ৫ – নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম বিল কার্যকর করা (পৃষ্ঠা ১৬)।
বাস্তব – লোকসভায় বিজেপির মহিলা সাংসদের হার মাত্র ১৩%। বিলটি ২০২৩ সালে পাশ হয়েছে। কিন্তু, এটি আদমশুমারির সাথে যুক্ত, যা এই মুহূর্তে ২০২৭ সালে হওয়ার কথা। এরপর জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে লোকসভা ও বিধানসভা আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ (ডিলিমিটেশন) হবে। এই দুটো কাজের পরেই বিলটি কার্যত বাস্তবায়িত হবে। কখন হবে? তা কেউ জানে না।

প্রতিশ্রুতি ৬ – প্রধানমন্ত্রী কিষাণ যোজনার সশক্তিকরণ (পৃষ্ঠা ২২)।
বাস্তব – প্রতিদিন ৩০ জন কৃষক আত্মহত্যা করেন। ২০১৮-২৩ সালে গ্রামীণ এলাকায় শ্রমিকদের মজুরি বছরে ০.৪% হারে কমেছে, কৃষি মজুরি বেড়েছে মাত্র ০.২% হারে। পিএম-কিষাণের তহবিল বাড়িয়ে ১২,০০০ টাকা করার জন্য সংসদীয় কমিটির সুপারিশ করেছিল, তা অগ্রাহ্য করা হয়েছে।

প্রতিশ্রুতি ৭ – বিশ্বমানের উৎপাদন কেন্দ্র (পৃষ্ঠা ৪২)।
বাস্তব – ২০২৩-এ জিডিপির ১২.৩% থেকে ২০২৪-এ উৎপাদন খাতের অবদান কমে ৪.৫% হয়েছে, যা ২০১৪-র নিচে। গত দুই বছরে মাত্র ১০ জনের মধ্যে ১ জন এই খাতে চাকরি পেয়েছে। ২০১৫-২৪-এ এমএসএমই উৎপাদন ইউনিটের বৃদ্ধি মাত্র ২%।

প্রতিশ্রুতি ৮ – কবচ ট্রেন সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্প্রসারণ (পৃষ্ঠা ৪৫)।
বাস্তব – ৪ বছরে কবচ লাগানো হয়েছে মাত্র ২% রুট ও ১% লোকোমোটিভে। বর্তমান গতিতে, সম্পূর্ণ রেলপথে কবচ বাস্তবায়ন করতে কয়েক দশক লেগে যাবে।

প্রতিশ্রুতি ৯ – বুলেট ট্রেন সম্প্রসারণ (পৃষ্ঠা ৪৬)।
বাস্তব – ২০১৪ সালে ৬০,০০০ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছিল। ১১ বছরে ৭১,০০০ কোটির বেশি ব্যয় হলেও অর্ধেক কাজও সম্পূর্ণ হয়নি।

প্রতিশ্রুতি ১০ – এক্সপ্রেসওয়ে ও রিং রোড সম্প্রসারণ (পৃষ্ঠা ৪৭)।
বাস্তব – ভারতমালা প্রকল্পের অধীনে, ২০১৭ সালে ৩৪,৮০০ কিমি রাস্তার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল । এর মধ্যে মাত্র অর্ধেক সম্পূর্ণ হয়েছে, আর প্রায় ২৫% প্রকল্পের বরাত এখনও পর্যন্ত কাউকে দেওয়া হয়নি।

প্রতিশ্রুতি ১১ – অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগের জন্য বিমানবন্দরের উন্নয়ন (পৃষ্ঠা ৪৮)।
বাস্তব – ১১৪টি রুট তিন বছরও পূর্ণ হওয়ার আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উড়ান প্রকল্পের আওতায় ৬১৯টি রুট চালু হলেও মাত্র অর্ধেক বর্তমানে সক্রিয় আছে।

প্রতিশ্রুতি ১২ – দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই (পৃষ্ঠা ৫৪)।
বাস্তব – শেষ ১০ বছরে ইডি সাংসদ, বিধায়ক ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে ১৯৩টি  মামলা করেছে ও এদের মধ্যে মাত্র ২ জন দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। গত ১১ বছরে, ইডি মোট ৫২৯৭টি মামলা দায়ের করেছে। বিচারের জন্য মাত্র ৪৭টি মামলা আদালতে পাঠানো হয়েছে।প্রতি ১০০০ টি মামলায় মাত্র ৭ জনের সাজা হয়েছে।

প্রতিশ্রুতি ১৩ – AIIMS হাসপাতালগুলির সশক্তিকরণ (পৃষ্ঠা ৫৭)।
বাস্তব – ভারতের AIIMS হাসপাতালগুলিতে ১৮,৭৩৭টি পদ খালি রয়েছে, এই পদগুলোর মধ্যে ২২০০-এর বেশি পদ ফ্যাকাল্টি বিভাগে রয়েছে।

প্রতিশ্রুতি ১৪ – যুবদের দক্ষতা প্রশিক্ষণের সম্প্রসারণ (পৃষ্ঠা ৬০)।
বাস্তব – যুব সম্প্রদায়ের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন বর্তমানে হয় অশিক্ষিত, নাহলে বেকার, নাহলে প্রশিক্ষিত নয়, এদের মধ্যে ৯৫% মহিলা। কেবলমাত্র ৪% যুব সরকারিভাবে দক্ষতা প্রশিক্ষণ পেয়েছে। পিএম ইন্টার্নশিপ স্কিমের অধীনে প্রতি পাঁচটি জেলার একটিতে ১০টির কম ইন্টার্নশিপের সুযোগ ছিল।

প্রতিশ্রুতি ১৫ – উত্তর-পূর্ব ভারতে শান্তি রক্ষা (পৃষ্ঠা ৬৩)।
বাস্তব – মণিপুরে হিংসা পরিস্থিতি চলছে প্রায় দুই বছর ধরে। প্রধানমন্ত্রী এখনও একবারও সেখানে যাননি। আরেকটি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ।

spot_img

Related articles

এবার কোন্নগর! এসআইআর ফর্ম বিলির চাপে সেরিব্রালে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বিএলও

এসআইআর ফর্ম বিলি ও সংগ্রহের অতিরিক্ত চাপে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন কোন্নগরের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও বিএলও তপতি...

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্য রাজ্যের সহানুভূতি স্কলারশিপ! জানুন আবেদন পদ্ধতি

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে রাজ্যের সহানুভূতি স্কলারশিপের আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নবম থেকে কলেজ স্তরের পড়ুয়াদের জন্য...

বালিতে যুব তৃণমূলের প্রতিবাদ-মিছিলে জনস্রোত! বিজেপির SIR চক্রান্তের অভিযোগ স্নেহাশিসের

বাংলার প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ দিতে তাড়াহুড়ো করে এই রাজ্যে এসআইআর করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। এর বিরুদ্ধে আমরা...

পুরসভা প্রতিবাদের আঁতুড়ঘর! বাংলার মনীষীদের অপমানের ঘটনায় কড়া সুর মেয়রের

বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও মনীষীদের ক্রমাগত অপমান-অসম্মানের বিরোধিতায় উত্তাল হল কলকাতা পুরসভা। ডবল ইঞ্জিন বিজেপি সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা যেভাবে রামমোহন...