স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বাংলা আজ যা করে গোটা দেশ পরে তা করে। কেন্দ্রের সরকারের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প গ্রহণ না করে সমগ্র রাজ্যবাসীকে আনা হয়েছে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প। ফলে বাংলায় নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিয়ে যে বাংলার সরকার কোনও আপস করবে না তা আগেই প্রমাণিত। সরকারি ক্ষেত্রের পরে এবার বেসরকারি ক্ষেত্রেও (private hospital) সাধারণ মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে পদক্ষেপে তা আরেকবার প্রমাণ করে দিল বাংলার সরকার। মঙ্গলবার বিধানসভায় বেসরকারি হাসপাতালের বেহিসেবি বিল নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Chandrima Bhattacharya) পেশ করলেন ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাবলিশমেন্টস (রেজিস্ট্রেশন, রেগুলেশন অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্সি) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০২৫’ (Clinical Establishment amendment bill)। এদিনের আলোচনার শেষে বিলটি পাশ হয় বিধানসভায় (West Bengal state assembly)।
বিল পেশ করতে গিয়ে চন্দ্রিমা বলেন, এই ধরনের জনমুখী বিল সারা ভারতবর্ষে কোথাও নেই। রাজ্য সরকার চায়, সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্র হাতে হাত ধরে পরিষেবা দিক। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালের (private hospital) বিল নিয়ে বহু মানুষ সমস্যায় পড়েন। সেই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতেই এই সংশোধন (amendment)। রোগীর অধিকার থাকবে তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ জানার। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এক রোগী একদিনে ২ লিটার জল খেলেও বিল করা হয় ২০ লিটার, এটা আর হবে না।
বিলে বলা হয়েছে, প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিং হোমকে চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচের তালিকা প্রকাশ্যে রাখতে হবে। প্রতিদিনের চিকিৎসা খরচের আপডেট দিতে হবে। যাবতীয় রেকর্ড রোগীকে দিতে হবে এবং তা সংরক্ষণ করতেও হবে। সরকারি গাইডলাইন ছাড়িয়ে অতিরিক্ত খরচ নেওয়া যাবে না।
মন্ত্রী জানান, রেগুলেটরি কমিশনের নজরদারিতে এই বিল বাস্তবায়িত হবে। কমিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন জাস্টিস অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন চালুর জন্য রাজ্য সরকার নিজস্ব সফ্টওয়্যার তৈরি করবে। বিলে ১৬টি সংশোধনী (amendment) যুক্ত হয়েছে। লাইসেন্স (license) নবীকরণের সময়সীমা রাখা হয়েছে ৯০ দিন।
মঙ্গলবার বিল পেশের সময়ই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিলের তড়িঘড়ি পেশ নিয়ে আপত্তি তোলেন। বিজেপির জনস্বাস্থ্য বিরোধী নীতি মেনেই তিনি বলেন, বিলটি হেল্থ স্ট্যান্ডিং কমিটিতে পাঠানো উচিত ছিল। তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাজেট দিলে চিকিৎসা শুরু করতেই সমস্যা হবে। ছোট নার্সিং হোমগুলির পক্ষে ই-প্রেসক্রিপশন চালু করা কঠিন। রোগীর তথ্য ওয়েবে দিলে গোপনীয়তা নষ্ট হবে। পাশাপাশি আর জি কর-এর ঘটনার পুণরাবৃত্তি এড়াতে মহিলা রোগী ও চিকিৎসকদের সুরক্ষা সংক্রান্ত ধারা সংযোজনের দাবি তোলেন তিনি।
বিধায়ক অতীন ঘোষ বলেন, এই বিল দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াবে। যেভাবে প্রাইভেট হাসপাতালগুলো (private hospital) কসাইখানায় পরিণত হয়েছে, সেখান থেকে রেহাই দিতেই এই উদ্যোগ। বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ি বলেন, বিল সংশোধন প্রয়োজন ছিল ঠিকই, তবে আরও আগে আসা উচিত ছিল। তিনি সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত হাসপাতালের পরিষেবা ও তার পরিসংখ্যান ওয়েবে প্রকাশের দাবি জানান।
শেষে জবাবি ভাষণে চন্দ্রিমা বলেন, মানুষের স্বার্থেই এই বিল। কেউ যেন এক জনের ভুলে পুরো ব্যবস্থার ক্ষতি না করে, সেটাই দেখা হবে। ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন (digital prescription) প্রসঙ্গে বলেন, এ নিয়ে কথা বললে দিল্লি রেগে যাবে। মন্ত্রীর এই মন্তব্যে বিধানসভা হাসিতে ফেটে পড়ে। আলোচনা শেষে সংশোধনী বিলটি গৃহীত হয়।
–
–
–
–
–
–
–