আড়াই বছরের এক খুদের চোখের জলে জড়িয়ে ছিল এক ভুল বোঝাবুঝির দীর্ঘ অধ্যায়। অবশেষে প্রশাসনিক জট ছাড়িয়ে, আইনি পথ পেরিয়ে, ফিরে এল সে বাবা-মায়ের কোলে। বাঁশবেড়িয়ার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের এই শিশুকন্যার ঘরে ফেরা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস এনে দিল গোটা মহল্লায়। সবটাই সম্ভব হয়েছে হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা বিশিষ্ট আইনজীবী নির্মাল্য চক্রবর্তীর উদ্যোগে। তাঁর হস্তক্ষেপেই শেষপর্যন্ত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শিশুটিকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
গত ৪ মে মেয়েকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করেন বাঁশবেড়িয়ার বাসিন্দা অশোক জেনা ও অরূপমা জেনা। মেয়েটি অসুস্থ ছিল, আর সেই সময় পারিবারিক কারণে অরূপমাকে ওড়িশায় বাড়ি যেতে হয়। মেয়ের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন অশোকের দাদা ও বৌদি, যাঁদের ছোট থেকেই সে ‘বাবা-মা’ বলে ডাকত। ৭ মে মেয়েটি সুস্থ হয়ে ওঠে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময়ই বিপত্তি—জ্যেঠু-জ্যেঠিমাকে “বাবা-মা” বলে সম্বোধন করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ জন্মায়। বিষয়টি জানানো হয় চাইল্ড লাইনে, এবং এরপর চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির তত্ত্বাবধানে শিশুটিকে পাঠানো হয় হোমে। খবর পেয়েই বাঁশবেড়িয়ায় ফিরে আসেন শিশুটির বাবা-মা। সমস্ত পরিচয়পত্র, নথিপত্র, আবেদনপত্র নিয়ে একাধিক দপ্তরে ছুটেও মেয়েকে দেখার অনুমতিও পাচ্ছিলেন না তাঁরা। অবশেষে তাঁরা যোগাযোগ করেন নির্মাল্য চক্রবর্তীর সঙ্গে।
নির্মাল্য চক্রবর্তী জানান, “একটা সামান্য ভুল বোঝাবুঝির জন্য বাচ্চাটি বাবা-মায়ের থেকে আলাদা হয়ে যায়। অথচ সমস্ত নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও ওঁদের সঙ্গে মেয়েটির দেখা করতে দেওয়াও হয়নি, যা অত্যন্ত অমানবিক।” নির্মাল্য চক্রবর্তীর হস্তক্ষেপে প্রশাসনের একাধিক স্তরে আলোচনা হয়। প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে অবশেষে শিশুটিকে তুলে দেওয়া হয় তার মা-বাবার হাতে। তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বাঁশবেড়িয়ার উপপুরপ্রধান শিল্পী চ্যাটার্জি, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দুর্গা রাউত এবং জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের প্রতি।
মেয়েকে ফিরে পেয়ে চোখে জল মা অরূপমা জেনার। অশোক জেনাও কেঁদে ফেলেন আবেগে। বর্তমানে শিশুটি সুস্থ, এবং পরিবারের সান্নিধ্যে খুশিতে ভরপুর। এই ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, প্রশাসনিক তৎপরতা আর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি একত্রে থাকলে যে কোনও জটিলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। আর এক আইনি লড়াইয়ের শেষে, জয় হল ভালবাসার।
আরও পড়ুন – দিঘার রথযাত্রা: মাসির বাড়িতে জগন্নাথদেবের আগমনের প্রস্তুতি তুঙ্গে, পাঁচদিন চলবে অন্নভোগ বিতরণ
_
_
_
_
_
_
_
_
_
&