শান্তিনিকেতনে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ‘আবাস’ ভেঙে ফেলার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করলেন রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। এই প্রসঙ্গে মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বিধানসভায় স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “সরকার মনীষীদের স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনাগুলি সংরক্ষণে সজাগ থাকে। এটি হওয়া উচিত ছিল না।”
বৃহস্পতিবার বিধানসভায় বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল বিষয়টি তুলতেই মন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিমালিকানার জটিলতার কারণে সরকার তৎক্ষণাৎ হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। তবে তাঁর আশ্বাস, “যদি বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর বা সরকারের নজরে আগে আসত, তা হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হতো।” জানা গিয়েছে, শান্তিনিকেতনের উপাসনা এলাকার ওই বাড়িটি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র অলোকেন্দ্রনাথ ঠাকুর নির্মাণ করেছিলেন। শিল্পাচার্য নিজেও সেখানে বহুদিন ছিলেন। ২০২৩ সালের এপ্রিলে সেই ঐতিহাসিক বাড়িটি হাতবদল হয়। এরপরই নতুন মালিক বাড়িটি ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রবল আপত্তি জানান, এমনকি পুরসভা থেকেও নোটিস পাঠানো হয়, তবুও শেষরক্ষা হয়নি। এক টুকরো ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি ধ্বংস হয়ে যায় বুলডোজারের আঘাতে।
এ ঘটনায় সরকারের ‘সংরক্ষণ-সচেতনতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নানা মহল। কোথাও কি প্রশাসনিক উদাসীনতা? স্থানীয়দের মতে, এতবড় সাংস্কৃতিক সম্পদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর এখন যা বলা হচ্ছে, তা কেবল দায় এড়ানোর চেষ্টা। তবে মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বলেছেন, “ভবিষ্যতে যাতে এমন না হয়, সরকার সেই দিকেই কড়া নজর দেবে। মনীষীদের স্মৃতি সংরক্ষণে সরকার দায়বদ্ধ।”
ইতিহাসবিদ ও বোলপুরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলির দাবি, এ ধরনের স্থাপনাগুলিকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করে তার উপর কোনওরকম নির্মাণ বা ভাঙাচুরির আগে বিশেষ অনুমতি বাধ্যতামূলক করা উচিত। সাংস্কৃতিক মহলের একাংশ বলছেন, “যে মানুষটি শিল্পকলার জাতীয় পরিচয় নির্মাণ করেছিলেন, তাঁর স্মৃতি যেখানে জড়িত, সেই স্থাপনাও যদি রক্ষা না পাই, তাহলে আর কাকে রক্ষা করব?” শান্তিনিকেতনের ‘আবাস’ ভাঙল, তার সঙ্গে যেন মুছে গেল এক অধ্যায়। প্রশ্ন উঠছে—এই অবহেলার দায় নেবে কে?
আরও পড়ুন – শৃঙ্খলার প্রশ্নে কড়া সিদ্ধান্ত স্পিকারের: কার্যবিবরণী থেকে বাদ গেল বিজেপি বিধায়কদের বক্তব্য
_
_
_
_
_
_
_
_
_
_