Wednesday, November 5, 2025

সুপ্রিম কোর্টের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাক যোগ্য অযোগ্য সকলেই। বুধবার কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court) এমনই আবেদন জানাল রাজ্য এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC)। পর্ষদের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee) এদিন ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, টার্মিনেশন এবং টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। দাগী অযোগ্যরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না এটা কোথাও বলা হয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটায় ফের এই মামলার শুনানি হবে।

প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহের সোমবার বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য নির্দেশ দিয়েছিলেন শুধু যোগ্যরা পরীক্ষায় বসতে পারবে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাস দের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্যে এবং কমিশন। এদিন ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এসএসসির তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,”টার্মিনেশন এবং টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ বলেনি সব টেন্টেড ক্যান্ডিডেটকে বা দাগী অযোগ্যকে টাকা ফেরত দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্যানেল বহির্ভূতদের, যাদের প্যানেলের সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়েছিল এবং যারা ওএমআর শিটে কারচুপি করেছে। চিহ্নিত দাগী অযোগ্যরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না এটা কোথাও বলা হয়নি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সৌমেন সেন জানতে চান, যোগ্য অযোগ্যদের মধ্যে পার্থক্য করছেন না কেন? জবাবে কল্যাণ জানান, সুপ্রিম কোর্ট সব টেন্টেডকে টাকা ফেরত দিতে বলেছিল। বয়সে ছাড় দুটি শ্রেনী পাবে। তারা অসফল। তাই তারা যোগ্য নাকি দাগী অযোগ্য সেটার প্রশ্নই আসে না। গোটা প্যানেল বাতিল হলে কারা যোগ্য আর অযোগ্য তার আর কোনো মানেই থাকে না।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি জানতে চান,’চিহ্নিত দাগী’-দের নিয়ে সওয়াল করার মতো জায়গায় কি কমিশন আছে?  ‘চিহ্নিত দাগী’-দের নিয়োগে অংশ নেওয়া বা না নেওয়া নিয়ে কমিশন কিভাবে প্রভাবিত হচ্ছে? আমাকে বোঝান কেন আপনি যে আবেদন করছেন সেটা সত্য।

এর জবাবে কল্যাণ জানান, একই অপরাধে দুটো শাস্তি হতে পারে না। ২০১৬ সালের পর ২০১৯ সালে রুল আসে। সেটা কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। চিহ্নিত দাগী প্রার্থীদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হোক। ২০১৬ থেকে ২০২৫ প্রায় ৯ বছর কেটে গেছে। জেনারেশন পালটেছে। পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই যখন বাতিল করা হয়েছে তখন এদের সুযোগ দেওয়া উচিত। এরকম হলে তো চিহ্নিত দাগী শিক্ষকরা যাদের পড়িয়েছেন সেই ছাত্র ছাত্রীদেরও বাতিল করতে হবে।

ডিভিশন বেঞ্চ এর পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চায়, অযোগ্য হলেও কোনো শিক্ষক যদি প্রায় দশ বছর শিক্ষকতা করেন তবে তার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী তিনি শিক্ষক নিয়োগের এই পরীক্ষায় বসতে পারে এটাই আপনার দাবি তাই তো? এতে সম্মতি জানিয়ে কল্যাণ ব্যানার্জি জানান, আমি চাই অযোগ্যদের পরীক্ষায় বসতে করতে দেওয়া হোক। নবম দশমে ১৮০১ জন চিহ্নিত দাগী অযোগ্য রয়েছেন।

এরপর রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, ডিভিশন বেঞ্চ সব অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করেছে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল অযোগ্য প্রার্থীদের বরখাস্ত করা হচ্ছে আর যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ বাতিল করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে এই দুটি শব্দের মধ্যে আইনি প্রভেদ থাকলেও ফলাফল একই। দু ক্ষেত্রেই নিয়োগ বাতিল হচ্ছে।আর্টিক্যাল ১৬ অনুযায়ী রাইট ফর এমপ্লয়মেন্ট এবং রাইট টু অ্যাপ্লাই সকলের অধিকার। এটি সর্বোচ্চ অধিকার। তাই আদালত যে নির্দেশই দিন না কেন খেয়াল রাখতে হবে যাতে তার ফলে কোনো ব্যক্তির কাজের অধিকার যেন লঙ্ঘিত না হয়। উদাহরণ স্বরূপ নিজের ৩০ বছর প্র্যাকটিস করার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, ৩০ বছর পর আমার এলএলবি ডিগ্রি নকল দেখা গেলে আমার প্র্যাকটিস ভবিষ্যতে বাতিল হতে পারে কিন্তু তাতে এতদিন আমি যে প্র্যাকটিস করেছি সেই অভিজ্ঞতা বাতিল হতে পারে না। যদিও অ্যাডভোকেট জেনারেলের এই যুক্তি মেনে নিতে চায়নি ডিভিশন বেঞ্চ।

তৃণমূলের পক্ষ থেকে রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ জানান, রাজ্য অযোগ্যদের পক্ষে নয়। কিন্তু যাঁরা অযোগ্য বলে দাবি করা হচ্ছে, তাঁদের জীবন যাতে নষ্ট না হয় সেই কারণেই এই আবেদন। তবে, এটা অর্থ এই নয়, যে সরকার অযোগ্যদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
আরও খবরনীতি আয়োগের মানচিত্রে বাংলার সম্মানহানি! চিঠিতে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর

অন্যদিকে, এদিন চাকরিহারাদের তরফে আইনজীবী ফিরদৌস শামীম বলেন, ফর্ম ফিলাপের শেষ দিন ১৪ জুলাই। আমরা নম্বরের তারতম্য নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছি এবং তার সঙ্গেই আমরা বয়সের ছাড় চাইছি। যে কারণে আমরা আবেদন করতে পারছি না তাই আমার ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছি। আমরা যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও আমাদের বয়স বেশি হয়ে যাওয়ায় আমরা ফর্ম ফিল আপ করতে পারছি না।

Related articles

‘সুফল বাংলা’ থেকে ‘উত্তরণ’: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথেই নিউ ইয়র্ক জয় মামদানির!

পরিবর্তনের ডাক। মা-মাটি-মানুষের জন্য স্লোগান। উন্নয়নমূলক পদক্ষেপে নাগরিক স্বাচ্ছন্দে জোর। একের পর এক জনমুখি প্রকল্প ঘোষণা। বাংলায় সাধারণ...

মুখ্যমন্ত্রীর দুয়ারে বিএলও, নিজের এসআইআর ফর্ম নিজেই নিলেন ‘ভোটার’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া নিয়ে মঙ্গলবারই রাজপথে মিছিল করে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন...

মোদিকে জার্সি উপহার ভারতীয় দলের, বিশ্বকাপজয়ীদের সঙ্গে কী কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির(PM Narendra Modi)সঙ্গে দেখা করলেন বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররা। টিম ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে একটি জার্সি উপহার...

দিনহাটার সাবেক ছিটমহলে মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে মিটল অচলাবস্থা, শুরু হল এসআইআর প্রক্রিয়া 

দিনহাটার সাবেক ছিটমহল পোয়াতুরকুঠি ও করলা এলাকায় গিয়ে এসআইআর (Summary Revision of Electoral Roll) নিয়ে বাসিন্দাদের বোঝালেন উত্তরবঙ্গ...
Exit mobile version