প্রতিদিন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের তরফে তথ্য দিয়ে দেখানো হচ্ছে বিহারে স্পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিউ কতটা সফল। কত শতাংশ মানুষকে সেই রিভিউ-এর (SIR) আওতায় নিয়ে আসতে পারা গিয়েছে। তা দেখিয়ে সাফল্য জাহির করার যে চেষ্টা নির্বাচন কমিশন চালিয়ে যাচ্ছে, এবার ভিডিও প্রকাশ করে তার পর্দা ফাঁস করল বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। ভিডিওতে উঠে এলো কীভাবে ভুয়ো মানুষের নাম ঢুকিয়ে এসআইআর-এর কাজ শেষ করে ফেলা হয়েছে বলে তুলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে কমিশন (ECI)। সেই সঙ্গে ফাঁস হল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের (MHA) নজর এড়িয়ে তিন প্রতিবেশী দেশ থেকে কীভাবে অভারতীয়রা নীতীশ কুমারের বিহারে (Bihar) ভারতীয় হয়েই বসবাস করছে।

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচন কমিশনের এসআইআর-এর বিরোধিতায় মামলা দায়ের হওয়ার পরে শীর্ষ আদালত (Supreme Court) এই প্রকল্পের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তা পাল্টা কমিশন দাবি করেছিল তাদের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে নথিভুক্তকরণের কাজ সারা হয়ে গিয়েছে। এরপরই তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra) বিহারের (Bihar) এসআইআর (SIR) প্রক্রিয়া চলাকালীন একটি ভিডিও প্রকাশ করে এই রিভিউ প্রক্রিয়ার বাস্তবটা তুলে ধরেন। সেখানে দেখা যায়, যে রিভিউ ফর্মগুলি নথিভুক্ত হয়ে গিয়েছে বলে সাজানো হয়েছে, সেগুলিতে কোথাও নাম নেই। কোথাও সামান্য নাম ও বাবার নামের পরে আর কোনও তথ্য নেই। বিস্তর ফর্মে নাম ও স্বাক্ষর ছাড়া নাগরিকত্বের কোনও নথিই নেই।

নির্বাচন কমিশনের রিভিউ প্রক্রিয়া যে আদতে দেশের মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার বিজেপির নতুন খেলা, তা প্রথম তুলে ধরেছিল বাংলার শাসকদল তৃণমূল। সাংসদ মহুয়া মৈত্র প্রথম এই কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কার্যত এই ভিডিও প্রমাণ করে দেয় সেই দাবি কতটা সত্যি ছিল। মূলত যে ফর্ম সংগ্রহের প্রক্রিয়া চালিয়েছে বিহারে নির্বাচন কমিশন, তাতে নাম রয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের। ইসলাম সম্প্রদায়ের মানুষের ফর্মই খুঁজে পাওয়া দায়। অথচ কমিশনের দাবি, ৮০ শতাংশ বিহারবাসী ফর্ম পূরণ করে দিয়েছেন। আদতে নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষের নাগরিকত্ব (citizenship) নথিভুক্তিকরণ এই প্রক্রিয়ায় কীভাবে বেছে বেছে মানুষের নাগরিকত্বে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে, তা প্রমাণ করলেন সাংসদ মহুয়া মৈত্র।

Please watch reality of @ECISVEEP Bihar’s roll revision. Really Special. Really Intensive.
Thank you @ajitanjum pic.twitter.com/XoVimwHnDH— Mahua Moitra (@MahuaMoitra) July 12, 2025
তবে যে পরিমাণ নাগরিক নিজেদের ফর্ম সঠিকভাবে পূরণ করেছেন, তাতেও প্রকাশ্যে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ব্যর্থতার ছবি। সেখানে ধরা পড়েছে বিহারে বসবাসকারী বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশের (Bangaldesh) নাগরিক, নেপালের (Nepal) নাগরিক ও মায়ানমারের (Mayanmar) নাগরিকদের নাম। এই তথ্য হাতে আসার পরই সেই সব নথি ফের যাচাইয়ের জন্য পাঠিয়েছে কমিশন। এই সত্য প্রকাশ্যে আসতেই নিজেদের বিপদ বুঝতে পারা বিজেপি নেতা অমিত মালব্য বহিরাগত নাগরিকদের আশ্রয় দেওয়া নিয়ে বিরোধীদের চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন বিহারে বর্তমানে নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে বিজেপির জোট সরকার রয়েছে।

আরও পড়ুন: বাঙালিদের বাংলাদেশি তকমা: প্রতিবাদে পথে নামছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বিহারের নাগরিকত্বের এই হিসাব প্রকাশ্যে আসতেই তোপ তৃণমূলের। রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের দাবি, সেখানে নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলুক। নেপাল থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বিহারে ঢুকছে। সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। পশ্চিমবঙ্গে এরা বড় বড় কথা বলে অনুপ্রবেশ নিয়ে। সীমান্ত তো দেখে বিএসএফ। পহেলগাম দিয়ে জঙ্গি ঢুকছে রুখতে পারে না। নেপাল দিয়ে বহিরাগত ঢুকছে বিহারে, রুখতে পারে না। বাংলাদেশ থেকে আগরতলায় ঢুকছে, রুখতে পারে না। রাজনীতি শুধু করতে আসে বাংলায়।

–

–

–

–
–
–
–