ফের বাংলাকে ডুবিয়ে DVC জল ছাড়া নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। মঙ্গলবার, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে নবান্নে বৈঠক করেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। তার পরে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “খুব দুঃখের সঙ্গে বলছি. একদিকে বৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে ১৮ জুন থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৭ হাজার লক্ষ কিউবিক মিটার জল ছেড়েছে DVC। বারবার বলার পরও ওরা সংস্কার করবে না, উল্টে নিজেদের বাঁচাতে জল ছেড়ে দিচ্ছে, আর বাংলা ডুবছে!”
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই জল ছাড়ার বিষয় নিয়ে তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi) বারবার জানিয়েছেন। তারপরও কোনও কাজ হয়নি। মমতার অভিযোগ, “১৪ বছর ধরে লড়ছি, বারবার টিম গিয়েছে। আমি নিজে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি, নীতি আয়োগের বৈঠকেও বলেছি। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। অসমে বন্যার টাকা মেলে, বাংলায় শুধু বন্যা মেলে!”
কেন্দ্রকে নিশানা করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “জল ছেড়ে দিয়ে মানুষকে ভাসিয়ে দেয়, কিন্তু একটা কাপড় কেনার টাকাও দেয় না। সবটা আমাদেরকেই করতে হয়।” মঙ্গলবার সকালে পাঞ্চেত থেকে ৩৬ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। মাইথন থেকে আরও ৯ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। এই জল দুর্গাপুর ব্যারাজ হয়ে দামোদর নদ দিয়ে হাওড়া, হুগলি ও পূর্ব বর্ধমানে ঢুকছে। ডিভিসির তরফে সাফাই, ঝাড়খণ্ডে প্রবল বৃষ্টিতে মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধারে বিপজ্জনক সীমায় জলস্তর পৌঁছে যাওয়ায় জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী জানান, ”বারবার বলার পরও ওরা সংস্কার করবে না, উল্টে নিজেদের বাঁচাতে জল ছেড়ে দিচ্ছে, আর বাংলা ডুবছে!”
পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই ১০ জেলার প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামী সাতদিন সংশ্লিষ্ট ১০টি জেলায় তিনজন করে মুখ্যসচিব পদ মর্যাদার আধিকারিককে পাঠিয়ে জেলা ভিত্তিক পরিস্থিতির মনিটরিং করতে হবে। জেলাশাসক, এসপি, বিডিও ও আইসিদের নজরদারিতে রাখার পাশাপাশি নীচু এলাকায় দ্রুত ত্রাণ শিবির খোলার নির্দেশও দেন মমতা। জানান, “আমরা এখন নিয়মিত নজরদারি করছি। ত্রাণ শিবির যেন চালু থাকে যতক্ষণ না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। প্লাবিত এলাকায় ও ত্রাণ শিবিরে যাতে অ্যান্টি ভেনাম ওষুধ মজুত থাকে, সেদিকেও নজর দিতে বলেছি।” মুখ্যমন্ত্রীর বলেন, “মানুষ সমস্যায় পড়লেও হয়তো মুখ ফুটে না বলতে পারে, কিন্তু সরকারের অঙ্গ হিসেবে আপনাদের তাঁদের কাছে পৌঁছতে হবে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। খেয়াল রাখবেন, একজনও যেন এই দুর্যোগে সরকারি সুবিধা থেক বঞ্চিত না হয়।”
একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের বার্তা, “মনে রাখবেন ডিভিসির ছাড়া জলের কারণেই এই বন্যা পরিস্থিতি। আমাদের কর্মীরা ২৪ ঘণ্টায় বিপর্যয় মোকাবিলার কাজ করবেন। এই সময় সকলের কাছে আর্জি, দয়া করে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করুন।”
দুর্যোগ মোকাবিলায় রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, অসামরিক প্রতিরক্ষা এবং এনডিআরএফকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। শহরাঞ্চলে যাতে নির্মাণসামগ্রী ড্রেন বন্ধ না করে জল জমার সমস্যা না বাড়ায়, সেদিকেও নজর দিতে বলেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত রাজনৈতিক দলকে আবেদন জানিয়েছেন, এই সময় প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যস্ত থাকবে, তাই তারা যেন প্রশাসনিক কাজে কোনওরকম বাধা সৃষ্টি না করেন।
আরও খবর: নিরাপদে পৃথিবীতে অবতরণ: শুভাংশুকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর
–
–
–
–
–
–
–
–