ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে কেন্দ্রের মিথ্যাচার থেকে বাংলার প্রতি মোদি সরকারের বঞ্চনা। সম্প্রতি যে জ্বলন্ত ইস্য়ু নিয়ে সরব হয়েছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস, সেখানেই সমর্থন জাতীয় কংগ্রেসের। শুধুমাত্র সমর্থনই নয়, ইস্যুগুলি নিয়ে দিল্লির দরবারে যে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে কংগ্রেস, সেখানেই পাশে থাকার আবেদন জানানো হচ্ছে তৃণমূল সাংসদদের (TMC MP)। সেই সঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বাঙালিদের হেনস্থার যে প্রতিবাদ তৃণমূলের তরফ থেকে গড়ে তোলা হয়েছে, সেখানেও সুর মেলাতে শুরু করেছে কংগ্রেস (Congress)। ঠিক এমন সময়েই কংগ্রেসের এই পদক্ষেপ ও পথের পরিবর্তন যখন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী।

নির্বাচন কমিশনের বিশেষ সংশোধনী যে আদতে দেশে এনআরসি শুরু করার প্রক্রিয়া সেই সত্যি প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় কোনওভাবেই এই এসআইআর করে নাগরিকদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া যাবে না, চ্যালেঞ্জ করেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসআইআর নিয়ে সরব হওয়ার পরই প্রতিক্রিয়া দেয় কংগ্রেস। কংগ্রেসের তরফে দাবি করা হয়, এসআইআর শুধুমাত্র বাংলার ইস্যু নয়। এটা গোটা দেশের ইস্যু।

সংসদের বাদল অধিবেশন শুরুর পর থেকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একাধিক ইস্যুতে সরব বিরোধীরা। ২১ জুলাই বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন বিরোধীরা সংসদের দুই কক্ষেই বিক্ষোভের মধ্যে দিয়ে নিজেদের দাবি পেশ করেছিলেন। কিন্তু ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ স্মরণ কর্মসূচি কলকাতায় থাকায় দিল্লিতে সংসদের অধিবেশনে যোগ দিতে পারেননি তৃণমূল সাংসদরা। সেই কথা মাথায় রেখেই প্রথমদিনের কর্মসূচি ছোট আকারে করা হয়েছিল বিরোধীদের তরফে। আবার ২২ জুলাই তৃণমূল সাংসদরা (TMC MP) সংসদে যোগ দিলে সেদিন থেকে সংসদের (Parliament) মকর দ্বারের বাইরে জোরালো প্রতিবাদ শুরু করে কংগ্রেস সাংসদরা।

সংসদের চলতি অধিবেশনে এসআইআর-এর পাশাপাশি পহেলগাম হামলা ও অপারেশন সিন্দুরের মতো একাধিক ইস্যুতে সরব হওয়ার পরিকল্পনা বিরোধী শিবিরের। প্রতিটি বিষয় নিয়েই অধিবেশনের আগে ইন্ডিয়া জোটের ভার্চুয়াল বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে সংসদে প্রতিটি রাজ্যের সাংসদরা নিজেদের রাজ্যের ইস্যুগুলিকেও তুলে ধরার চেষ্টা করেন। সেই সময়ে সংসদ চত্বরে (Parliament) কংগ্রেসের সাংসদরা বিক্ষোভ দেখাতেও শুরু করছেন। সেই সময়ে কংগ্রেসের প্রতিবাদে সাংসদ সংখ্যা কম পড়লে ডেকেও নেওয়া হচ্ছে তৃণমূল সাংসদদের। অর্থাৎ নিজেদের ইস্যুগুলিতে তৃণমূলকেও সবথেকে বেশি পাশে চাইছে জাতীয় কংগ্রেস।

বাংলার শাসকদলকে পাশে টানতে তৃণমূলের প্রতিবাদের তালিকায় থাকা বাংলার ইস্যুগুলিকে সমর্থন প্রকাশ্যেই করছে কংগ্রেস। তার মধ্যে বাংলার প্রতি পক্ষপাতমূলক কেন্দ্রীয় বঞ্চনার ইস্যু যেমন রয়েছে, তেমনই সাম্প্রতিক বিজেপি রাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থার প্রতিবাদের ইস্য়ুতেও সরব হয়েছে কংগ্রেস। রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন (Derek O Brien) কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন একশো দিনের কাজের ক্ষেত্রে কর্মদিবস কমে যাওয়া ও বরাদ্দ বাড়ানো নিয়ে গোটা দেশের তথ্য পেশ করা হোক। সেই তথ্যে স্পষ্টভাবে বাংলার নামটাই বাদ দিয়ে দেয় কেন্দ্রের মন্ত্রক। বিজেপি সরকারের তরফ থেকে স্বীকার করে নেওয়া হয় বাংলার জন্য কোনও বরাদ্দ করা হয়নি। এই তথ্য পেয়ে যখন সরব হয় তৃণমূল, তখন কংগ্রেসের তরফে দলীয় মুখপাত্র তথা সাংসদ জয়রাম রমেশকেও দেখা যায় বাংলার বঞ্চনার প্রতিবাদে সরব হতে।
Today a MP has asked a starred question in the Rajya Sabha on state-wise pending payments from the Centre for wages and materials under MGNREGA.
The Union Minister of Rural Development circulates an answer giving the sought for data for 33 states and UTs.
But data for only one… pic.twitter.com/Ku4Lzl5eYt
— Jairam Ramesh (@Jairam_Ramesh) July 25, 2025
বাংলার বঞ্চনার ইস্যুটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হতে দেখা যায় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা কংগ্রেসের অন্যতম থিঙ্ক ট্যাঙ্ক পি চিদাম্বরমকেও। অন্যদিকে বাংলার শ্রমিকদের যেভাবে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে হেনস্থা ও পুশব্যাক করা হচ্ছে, তাতেও সরব হতে দেখা যায় জাতীয় কংগ্রেসকে। প্রতিটি ভারতীয়ের আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতার লড়াইয়ে পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মালদহ ও মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেওয়া হয়।

Today a MP has asked a starred question in the Rajya Sabha on state-wise pending payments from the Centre for wages and materials under MGNREGA.
The Union Minister of Rural Development circulates an answer giving the sought for data for 33 states and UTs.
But data for only one… pic.twitter.com/Ku4Lzl5eYt
— Jairam Ramesh (@Jairam_Ramesh) July 25, 2025
আরও পড়ুন: পুলিশের পরীক্ষা দিতে এসে গণধর্ষিতা! যোগীরাজ্যের পথ ধরে বিহারেও বিপদে নারী

অথচ এই পরিস্থিতিতেই কংগ্রেস সাংসদ তথা বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী কেরালার রাজনীতিকে সামনে রেখে বামেদের সমালোচনায় সরব। কেরালায় বাম নেতাদের আচরণ বিজেপির মতোই, দাবি করেন রাহুল। সেক্ষেত্রে বাংলার রাজনীতিতে বামেদের হাত ধরে যে পতনের সম্মুখিন হয়েছে কংগ্রেস, তার থেকে শিক্ষা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বামেদের সঙ্গ ছেড়ে তৃণমূলের পাশে আসার চেষ্টা করছে কংগ্রেস, সম্ভাবনার বার্তা রাজনৈতিক মহলে।

–
–
–

–
