Monday, August 25, 2025

মাত্র চার দিনে মহারাষ্ট্র পুলিশের এত অত্যাচার যে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক গোলাম মন্ডলকে। কিছুটা সুস্থ হলেও শেষ রক্ষা হলো না। সোমবার মারা গেলেন উত্তর ২৪ পরগনার পরিযায়ী শ্রমিক (migrant labour) গোলাম মন্ডল। শুধুমাত্র বাংলা (Bengali) বলার অপরাধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বাংলার শ্রমিকদের উপর মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) বিজেপি প্রশাসন কতটা অত্যাচার চালিয়েছে, তা মৃত্যুর আগে দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের সাংবাদিক বৈঠকে এসে জানিয়ে গিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার গোলাম।

মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে (Mumbai) মিরা রোড গার্ডেন এলাকায় কাজ করতেন পরিযায়ী শ্রমিক গোলাম মন্ডল। উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া এলাকার আর পাঁচজন শ্রমিকের মতোই অনেক বছর ধরে সেখানকার শ্রমিক ছিলেন তিনি। কিন্তু কোনদিনও শুধুমাত্র বাংলা বলার অপরাধে এমন পরিণতি হবে তা ভাবতে পারেননি গোলাম। চলতি বছর ঈদের (Eid) পরদিন যে এলাকায় গোলামের বসতি ছিল, সেখান থেকে চারশ জন বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিককে তুলে নিয়ে যায় মহারাষ্ট্র পুলিশ। দিনরাত রোদ-বৃষ্টি-জলে মাঠের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে তাঁকে বসিয়ে রাখে। বসিয়ে রাখে আরও ৪০০ বাংলার শ্রমিককে।

রাজ্যের প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে মহারাষ্ট্র থেকে কোনও মতে প্রাণ নিয়ে বাংলায় ফিরে আসার পর সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছিলেন গোলাম মন্ডল। দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের পক্ষ থেকে যে সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন তিন দিন তিন রাত শুধুমাত্র ভাত খেতে দিয়ে মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট ছোট দল করে বসিয়ে রেখেছিল মহারাষ্ট্র পুলিশ। চতুর্থ দিন জানানো হয়েছিল পরের দিন ছাড়া হবে। অথচ এই শ্রমিকদের সকলেরই দেশের নাগরিকত্বের বৈধ কাগজপত্র ছিল।

চাঞ্চল্যকরভাবে মহারাষ্ট্র পুলিশকে (Maharashtra police) আধার কার্ড (Aadhaar card) দেখানোয় তারা দাবি করেছিল, মহারাষ্ট্রে এই পরিচয়পত্র ৫০ টাকা দিলে পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে অকথ্য গালিগালাজ তো ছিলই। মহারাষ্ট্র পুলিশ তাদের জানিয়েছিল, তোমরা দিদির এলাকার লোক। দিদির এলাকায় ডালভাত খাও। এখানে থাকলে আজ ছাড়ছি, পরে আবার ধরে আনব, জানিয়েছিলেন গোলাম মন্ডল।

আরও পড়ুন: পুণ্যের টানে ৬১জন একই ট্রাক্টরে! ট্রাকের ধাক্কায় যোগীরাজ্যে মৃত ৮

চার দিনের পুলিশি অত্যাচারে বাংলায় ফিরেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল গোলামকে। ৭-৮ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর বাড়ি ফিরেও চলছিল ওষুধ। চিকিৎসক তাঁকে ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত ওষুধ খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে মনের ব্যথা ব্যক্ত করেছিলেন গোলাম। তবে শেষ পর্যন্ত কত বছর আর তাঁকে ওষুধ খেতে হল না। সেই অসুস্থতা আর কাটলো না। সোমবার উত্তর চব্বিশ পরগনার হাবড়ার বাড়িতেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় তার।

গোলাম মণ্ডলের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের (Desh Banchao Ganomancho)। সদস্য ও সাংসদ দোলা সেন (Dola Sen) জানান, পুলিশি অত্যাচারেই অসুস্থ ছিল। আর সেই অত্যাচার শুধুমাত্র বাংলা বলার কারণে। এর আগে গোলাম মণ্ডলের অন্য কোনও অসুস্থতা ছিল না। এভাবেই বিজেপির প্রশাসনের বাংলা বিরোধী নীতিতে আরও এক বাংলার শ্রমিকের মৃত্যু হল।

Related articles

আদিবাসী উন্নয়ন আরও সুদূর প্রসারি করার বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর, সৌজন্য উড়িয়ে বৈঠকে অনুপস্থিত বিজেপি

আদিবাসী উন্নয়ন নয়, রাজনীতিই যে তাদের লক্ষ্য তা আরও একবার প্রমাণ করল বিজেপি (BJP)। আমন্ত্রণ পেয়েও সৌজন্যের জবাব...

DHFC-র হারের পরই ক্লাব থেকে কর্তাদের ছোট করার চেষ্টা, জবাব দিলেন মানস

ডুরান্ড কাপের(Durand Cup) ফাইনালে পৌঁছে সকলকে চমকে দিয়েছিল ডায়মন্ডহারবার এফসি(DHFC)। বাংলার ফুটবলকে যে দল নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে, তাদের...

আধারের অভাবে রেশন বঞ্চনা নয়, কড়া নির্দেশ খাদ্য দফতরের 

আধার কার্ড না–থাকা বা বায়োমেট্রিক যাচাই না–হওয়ার কারণে আর কোনও বৈধ রেশন গ্রাহককে খাদ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত...

হাওড়ায় বৃদ্ধ খুনের নেপথ্যে সমকামী সম্পর্ক-ব্ল্যাকমেইল! তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য

হাওড়ায় বৃদ্ধ খুনের নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হাওড়ার গোলাবাড়ি থানার সালকিয়ার অরবিন্দ রোডের বাসিন্দা অসীম দে (Asim de) খুন...
Exit mobile version