মহানগরীর বুকে গদি মিডিয়ার একাংশকে ব্যবহার করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুয়ো ভোটার ইস্যু তৈরির চেষ্টা বিজেপির। চক্রান্ত ফাঁস করলেন কলকাতার রাসবিহারী বিধানসভা কেন্দ্রের ৮১ নম্বর ওয়ার্ডের (পার্ট ২৫) বাসিন্দা রিয়া শীল। জোর করে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁর মৃত মা-বাবার নাম ভোটার লিস্টে দেখিয়ে মিডিয়ার একাংশের মাধ্যমে অর্ধসত্য ভিডিও প্রকাশ করে ‘রাজনীতি’ করার অভিযোগ রিয়ার মামা তথা দক্ষিণ কলকাতার বিজেপির জেলা কমিটির সম্পাদক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে (Tapas Banerjee)। এটাই ভারতীয় জনতা পার্টির আসল চরিত্র বলছেন অভিযোগকারী সিন্টু দাস (রিয়ার দাদা)।

ঘটনাটা ঠিক কী? রিয়া জানিয়েছেন গত বুধবার অর্থাৎ ৩ সেপ্টেম্বর তাঁকে ফোন করে ডেকে পাঠান ‘মামা’ তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাগ্নিকে দু-চার কথা জিজ্ঞেস করার পরই তাঁর মৃত মা-বাবার নাম ভোটার লিস্টে থাকার প্রসঙ্গ তোলেন বিজেপি নেতা। রিয়া বলেন, “তুমি তো জানো মা-বাবা মারা গেছেন। এরপর নিয়ম মেনে যা যা করার দরকার আমরা করেছি। আর কিছু জানি না।”এই কথোপকথনের মাঝেই আচমকা পাশের ঘর থেকে মিডিয়ার একাংশ এসে ছেঁকে ধরে রিয়াকে। কিছুটা হতচকিত হয়ে যান তিনি। বিজেপির মদতপুষ্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা ভোটার লিস্টে রিয়ার মা-বাবার নাম দেখিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন। বিষয়টা যে পরিকল্পনা মতোই সাজানো হয়েছে তা বুঝতে পারেন রিয়া। এরপর তিনি সেখান থেকে চলে গেলে তাঁর অনুমতি ছাড়াই সেই রেকর্ডিং ভিডিও টেলিকাস্ট করে দেওয়া হয় চ্যানেলে, ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে বলা হয়, এই এলাকায় মৃত মানুষের নামে ভোট পড়ছে। এমনকি যাঁরা এখানে থাকেন না তাঁদের নামেও ভোট হচ্ছে। ভিডিও দেখামাত্রই অবাক হয়ে যান রিয়ার দাদা সিন্টু (Sintu Das)। তাঁর কাকা তাপস যে এত নোংরা একটা চক্রান্ত করতে পারেন সেটা তাঁর ধারণার বাইরে ছিল। নিজের লোক হওয়া সত্ত্বেও, সব সত্যি জানা সত্ত্বেও যেভাবে গেরুয়া ভক্ত মিডিয়ার একাংশকে ডেকে রিয়াকে ব্যবহার করে ভুয়ো ভোটার ইস্যু করা হয়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ করেন তিনি। তাঁর কথায়, ভোটার তালিকা ঠিক করার দায়িত্ব তো নির্বাচন কমিশনের। তাহলে যখন বিজেপি নেতা জানেন যে রিয়ার মা-বাবা বেঁচে নেই অথচ তাঁদের নামে যদি ভোট পড়ে, তখন কি তিনি এবং তাঁর শাগরেদরা ঘুমিয়ে থাকেন? তখন কেন বলেন না? আজকে পরিবারের লোককে তাঁর অনুমতি ছাড়া মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে ব্যবহার করে তিনি যে অসম্মান করেছেন তাঁর দায় কি তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় নেবেন?

আরও পড়ুন: টাকার বিনিময়ে বিধানসভার টিকিট! অভিষেকের নামে প্রতারণায় গ্রেফতার প্রতারক

রিয়ার অভিযোগ, তাঁর সঙ্গে মামার কথোপকথনের পুরো ভিডিও প্রকাশ করা হয়নি। বেছে বেছে এডিট করা হয়েছে। এরপর সেই ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে তাঁকে অপমান ও অসম্মান করা হয়েছে। তাঁর পরিবারের লোকেরা বলছেন, কিছুদিন আগেই বাড়ি বয়ে এসে ভোটার তালিকায় স্ক্রুটিনি করা হয়েছে তারপরও ইচ্ছাকৃতভাবে এই ঘটনা ঘটানোর পিছনে পদ্ম নেতার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র স্পষ্ট। সিন্টুর দাদা শুক্রবার বিশ্ববাংলা সংবাদকে বলেন, ‘আমি চাইলে থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে পারতাম। কিন্তু বিষয়টার সঙ্গে আমার বোন জড়িত, এসব করলে ওর সংসারে সমস্যা হতে পারে। এমনকি আমরাও চাকরি করি, সেখানে এসবের প্রভাব পড়তে পারে। ভোটার তালিকায় সঠিক নাম আছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব কেন্দ্র পরিচালিত নির্বাচন কমিশনের। চক্রান্ত করে রাজনীতি করার পরিবর্তে তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ এলাকার বিজেপি নেতাদের উচিত নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা।’ গোটা ঘটনায় এটা স্পষ্ট যে, ‘শহর কলকাতায় ভুয়ো ভোটার ধরা পড়েছে’ মার্কা শিরোনামে ব্রেকিং নিউজ তৈরি করে মানুষকে মিথ্যে বোঝাচ্ছে বিজেপি। পরিকল্পনা করে একজন মহিলাকে মানসিকভাবে অসম্মান করা, তাঁর মন্তব্যের অপব্যাখ্যা করে অনুমতি ছাড়া ভিডিও প্রকাশ করার মতো যে জঘন্য কাজ করেছেন গেরুয়া দলের নেতা তাপস বন্দ্যোপাধ্যায তাতেই ফাঁস হয়ে গেছে বিজেপির চক্রান্ত।

–

–

–

–
–

–