আরজিকর নিয়ে আন্দোলনের নামে সিপিআইএম, বিজেপি, নকশালদের চক্রান্তে এক সময় প্রশ্নের মুখে চলে গিয়েছিল একটা বড় অংশের জুনিয়র চিকিৎসকদের ভবিষ্যৎ। প্রতিকূল সময় পেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে তাঁরাই বাংলার মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে গিয়েছেন, আজও প্রত্যন্ত এলাকায় পরিষেবা দিচ্ছেন। বাংলার মানুষ আজ বিজেপি শাসিত ডবল ইঞ্জিন রাজ্যে হেনস্থার শিকার। সেই বাঙালিদের জন্য সরব হতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ডাকে প্রগ্রেসিভ হেল্থ অ্যাসোসিয়েশনের (PHA) উদ্যোগে সেই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরাও সামিল ধর্মতলায় আন্দোলনে। রবিবার ডোরিনা ক্রসিংয়ের আন্দোলনে যোগ দিলেন রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

চিকিৎসকদের সঙ্ঘবদ্ধ হতে যে প্রগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশন (PHA) গড়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তারই কৃতজ্ঞতা প্রথম সমাবেশে জানালেন স্বাস্থ্যকর্মী সমাজ। পিএইচএ-র পক্ষ থেকে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা (Shashi Panja) জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে এটা কৃতজ্ঞতা জানানো। কারণ তিনি প্রগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশন বানিয়ে দিয়েছিলেন ২৭ জানুয়ারি ২০২৫। তারপরে এই অল্প কয়েক মাসে এই পরিবার বড় হয়েছে। এবং তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলার উপর এই আক্রমণের লড়াইতে তাঁরাও সামিল হয়েছেন।

রবিবার ধর্মতলায় যে জমায়েত দেখা গিয়েছে স্বাস্থ্যকর্মী সমাজের, তাকে কুর্নিশ জানিয়ে শশী পাঁজা বলেন, দিদির নির্দেশ ও দিদির ডাকে এই কর্মসূচিতে অভূতপূর্ব উপস্থিতি হয়েছে সকল স্বাস্থ্যকর্মী সকলের। চিকিৎসক থেকে নার্স, সিএইচও, ফার্মাসিস্ট, আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকদের দারুন উপস্থিতি হয়েছে। প্রত্যেকের একটি কথা – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করার জন্য, স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য তাঁরা কাজ করছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে, প্রান্তিক এলাকা থেকেও তাঁরা এসেছিলেন আজ। নিশ্চিতভাবে প্রতিবাদ জোরালো হয়েছে যে বাংলাভাষার উপর বা আমরা বাংলা বললেই তাদের হেনস্থা, আক্রমণ, অপমান করা যাবে না। যাঁরা স্বাস্থ্যকর্মী সমাজ তাঁরাও এই লড়াইতে সামিল। তাঁরাও এই অপমানের বিরুদ্ধে যাঁরা যে যেখানে কাজ করছেন, সেখানেই প্রতিবাদ জানাবেন। সকলেই স্বাস্থ্য পরিষেবা বজায় রেখে অনেক মানুষ এসেছেন।

পিএইচএ-র আন্দোলন মঞ্চে রাজ্যের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতে এদিন উপস্থিত ছিলেন সাংসদ চিকিৎসক শর্মিলা সরকার, মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, বিধায়ক নির্মল মাঝি, রানা চট্টোপাধ্যায়, খগেন মাহাতো, সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায়, চিকিৎসক করবী বড়াল, তুষার শীল, প্রতাপ নায়েক, জনপ্রতিনিধি মৃত্যুঞ্জয় পাল। যেভাবে জেলা থেকে চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা আন্দোলনে উপস্থিত ছিলেন এদিন সেই উদ্যোগকে মঞ্চ থেকে কুর্নিশ জানিয়ে তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ জানান, পিএইচএ-র আজকের আন্দোলনে বাংলার প্রতিটা জেলা থেকে চিকিৎসক ও অচিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীরা সামিল হয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে স্বপ্ন দেখছেন তা স্বাস্থ্য বিভাগ ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না। আপনাদের যোগদান ছাড়া দূর দূরান্ত পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পরিষেবা উপলব্ধ করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য কাঠামোর উন্নতির যে সুফল তা মানুষ পাচ্ছেন আপনাদের মধ্যে দিয়ে। আজ যখন বাংলার উপর আক্রমণ আসছে – টাকা দেব না, বাংলার বিরুদ্ধে কুৎসা ও সর্বশেষ সেনা নামিয়ে ভাষা আন্দোলনের মঞ্চ ভেঙে দাও। সেই কারণে আমাদের কর্মসূচি এখানে হল।

সেই প্রসঙ্গেই তিনি উল্লেখ করেন সেই কঠিন সময়ের কথা যখন সিপিএম-বিজেপি-নকশালের চক্রান্তে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছিল জুনিয়র চিকিৎসকদের ভবিষ্যৎ। সেই সময়ের উল্লেখ করে কুণাল ঘোষ বলেন, চিকিৎসকরা একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময় পার হয়ে এসেছেন। সেটা আরজিকরের সময়। যে ঘটনা ঘটেছে নিশ্চিতভাবে নিন্দার। পুলিশ সেই জানোয়ারটাকে গ্রেফতার করে এনেছে। কিন্তু সেটা নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। কারা করেছে? যাদের জমানায় বানতলায় ডক্টর অনিতা দেওয়ানকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। যেখানে উত্তরবঙ্গে অনডিউটি নার্সকে ধর্ষণ করে খুন, বর্ণালী দত্ত, সুশীল পাল খুন। সেই দলের লোকেরা এসেছে রাজনীতি করতে। জুনিয়র চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে একটা রব তুলে দেওয়া হল এই ছেলেগুলোকে পড়তে দেওয়া হবে না। এদের কলেজ থেকে বের করে দিতে হবে। এরা না কি থ্রেট কালচারের সঙ্গে আছে। যেহেতু তখন মানুষের আবেগকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে, এই ছেলেমেয়েগুলোর কেরিয়ার শেষ করে দিতে এই সিপিএম-বিজেপি-নকশালরা চেষ্টা করেছে। আদালত ওদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে।
