কুণাল ঘোষ
মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়া যখন পুজোয় বাংলা ছবির নতুন কী কী আসছে; ছবির প্রমোশনে সিনেমার টিম কোন্ জেলায় কী কী করলেন, এসব নিয়ে ব্যস্ত, তখন খানিকটা নীরব প্রস্তুতিতে ওস্তাদের মারের মতো বিনোদন জগতকে চমকে দিয়ে মঞ্চস্থ হল ‘মাৎস্যন্যায়’। নাটক ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। নির্দেশনা অর্পিতা ঘোষ (Arpita Ghosh)। একবার নিয়ে লিখতে গেলে প্রথমেই বলা উচিত, পড়ে কী হবে, আগে দেখে আসুন, না হলে মিস।

তবু, একটু লিখতে তো হয়ই। যা যা দেখলাম, সেটা লিখে বোঝানোও কঠিন। আমি নাটক (Drama) দেখি, পছন্দ করি। অনেকদিন পর একটা নাটক দেখলাম যার নতুনত্ব আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল ২০ বছর আগে। সেই 2005 সালে লন্ডনের স্যাফটবেরি থিয়েটারে বসে দেখেছিলাম ‘দি ফার প্যাভেলিয়ান’; আর ২০২৫-এ এই ‘মাৎসন্যায়’। আমাদের এখানেও যদি লন্ডনের মঞ্চের ঘূর্ণায়মান প্রযুক্তি থাকত, এই নাটক আরও উচ্চতায় পৌঁছত।

ব্রাত্য নাটক (Drama) সৃষ্টিতেই ম্যাজিক দেখিয়েছে। প্রাচ্য পাশ্চাত্য মিলিয়ে, উইলিয়াম শেক্সপীয়ারের ‘ট্রাইটাস অ্যান্ডনিকাস’ এবং বানভট্টের ‘হর্ষচরিত’ কে মিশিয়ে যে দুরন্ত নাটক নামানো যায়, ব্রাত্য বিপ্লব করে দিল। ক্ষমতা, রাজপরিবার, ভাইদের লড়াই, নারীর কূটনীতি, প্রতিশোধ, রাজা ও সৈনিকের অবস্থান; সর্বোপরি সংঘাতের প্রজন্মান্তর, এক টানটান নাটক। ইতিহাস? মনে হয় আজও। ভাষা, শব্দপ্রয়োগে অতীত ঘরানা? মনে হয় আজও মনের কথা। গল্প, প্রয়োগ, পোশাক, আবহ, আলো, সবেতেই প্রাচ্য পাশ্চাত্য মিশ্রণ। মিনার্ভা রেপার্টারি থিয়েটারের প্রযোজনায় একঝাঁক প্রতিশ্রুতিবান মুখকে দিয়ে দারুণ পারফর্ম করিয়েছেন অর্পিতা ঘোষ। কয়েকজন শিল্পী, রাজা, শশাঙ্ক, বাহুসহ কিছু ভূমিকা দুর্দান্ত। এমন নাটকীয়তা, মঞ্চব্যবহার, ক্ষমতার রাজনীতির খুঁটিনাটি, অবলীলায় তুলে এনেছেন ব্রাত্য-অর্পিতা।

বাংলা সিনেমা, থিয়েটারের দর্শকদের অনুরোধ, নাটকটি দেখুন। না হলে একটা বড় মিস। সিনেমা দেখুন, স্টার দেখুন, নাচগান দেখুন; পাশাপাশি আসল সৃষ্টি দেখুন, এখানেও প্রেম, প্রতিশোধ, যুদ্ধে ভরা গতিশীল নাটকীয়তা।

ব্রাত্য, তোমার এই বাংলা থিয়েটারের নতুন অধ্যায় সৃষ্টির প্রথম শো হল গিরীশ মঞ্চে, গিরীশ ঘোষকে এভাবেও প্রণাম করা যায়!
