মনের মণিকোঠায় কোথায় যে এই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা লুকিয়ে ছিল, তা যেন এভাবে শেষযাত্রা না হলে বোঝাই যেত না। মৃত্যুর খবর প্রচারিত হওয়ার পর থেকে অনুরাগীরা প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাননি। দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে ষড়যন্ত্র থেকে শাস্তির দাবি – কিছুই বাদ যায়নি। রাগ, ক্ষোভের প্রশমন হতে ঘরের কাছে এসে পৌঁছেছে প্রিয় শিল্পী, প্রিয় মানুষ জুবিনের (Zubeen Garg) মরদেহ। ব্যস। যাবতীয় অবিশ্বাস, ক্ষোভ, রাগ, ভালোবাসা – সব পরিণত হয়েছে চোখের জলে। অবশেষে মঙ্গলবার সেই নশ্বর দেহ শেষকৃত্যে মিলিয়ে গেল পঞ্চভূতে।

সিঙ্গাপুরে (Singapore) পরিবার, বন্ধু, অনুরাগী, কাছের মানুষ, সকলের থেকে অনেক দূরে ১৯ সেপ্টেম্বর না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন জুবিন গর্গ। কারো কাছে তিনি গায়ক, কারো কাছে শিল্পী, কারো জন্য গাইড, আবার কারো অনুপ্রেরণা। এত মানুষের আবেগ জড়িয়ে ছিল জুবিনের সঙ্গে, যার বিস্ফোরণ ঘটে ২১ সেপ্টেম্বর সকালে, গুয়াহাটিতে তাঁর মরদেহ পৌঁছতেই।

এত বিপুল সংখ্যক মানুষ জুবিন গর্গের মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অধীর, ধৈর্যশীল আগ্রহে অপেক্ষা করেন, যার জন্য অন্ত্যেষ্টির কাজ পিছিয়ে দিতে হয় দুদিন। তেজপুরে ২৩ সেপ্টেম্বর সেই দিন নির্ধারিত হয়। তাতেও যেন বহু মানুষকে বঞ্চিত করা হয়েছে শিল্পীর ‘কাছে’ পৌঁছতে। ধীর গতিতে এগোনো মরদেহের গাড়ির ফুলের সাজ তুলে শেষবারের মতো দেখার চেষ্টা করেন অনুরাগীরা। লিমকা বুক অফ রেকর্ডস (Limca Book of Records) বলছে মৃত্যুতে এত জনসমাগম তাদের রেকর্ডে ওঠার যোগ্য।

এর আগে মাইকেল জ্যাকসন, ব্রিটেনের রাজকুমারি ডায়না, পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে যে জনসমাগম হয়েছিল, তার সঙ্গে তুলনা চলে গুয়াহাটির গত ২১ তারিখ থেকে হওয়া জনসমাগমের। কখনও বৃষ্টি, কখনও প্রবল রোদ, কেউ সারারাত লাইন দিয়েছেন খোঁড়া পায়ে লাইন দিয়েছেন। জুবিনের দেহ যতক্ষণ দাহ হয়েছে ততক্ষণ মায়াবিনী গান যেন এক স্তোত্রের মতো গেয়ে গিয়েছেন তাঁর ভক্তরা। আর সেই গান শুনে বাঁধ ভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী গরিমা সাইকিয়া (Garima Saikia)।

আরও পড়ুন: জলমগ্ন স্টুডিও চত্বর, বন্ধ একাধিক ধারাবাহিকের শ্যুটিং!

মঙ্গলবার শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জুবিনের বাবা কপিল বড়ঠাকুর। অসমীয়া শিল্পীসহ বলিউডের একাধিক সঙ্গীত শিল্পীকে শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেখা যায়। রাজ্য সরকারের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ছিলেন আগাগোড়া। সেই সঙ্গে কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গোগোই শেষ শ্রদ্ধা জানান অন্ত্যেষ্টির আগে। জুবিন যেমন সবধরনের রাজনীতি, আদর্শের আগে মানব ধর্মকে রেখেছিলেন, সেভাবেই তাঁর মৃত্যুতেও মিলে গেল অসমের রাজনীতি।

–

–

–

–