আগে তাঁকে বলা হত বাংলা ছবির ‘ইন্ডাস্ট্রি’। এখন বলা হয় ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’। কিন্তু টলিউডের বর্তমান কাদা ছোড়াছুড়িতে বীতশ্রদ্ধ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prasenjit Chatterjee)। একটি নিউজ চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্যের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়ে দিলেন, এরকম চলতে থাকলে তিনি আর বাংলা ছবি করবেন না। হয়তো ছোট ছবি প্রযোজনা করবেন। কিন্তু অভিনয় করবেন না। শো টাইম নিয়ে দাদাগিরি, সিনেমার প্রচারের বাইরে গিয়ে অন্য খেলায় টলিউডের বুম্বাদার ঘোরতর আপত্তি। তাঁর কথায়, এটা বাংলার সংস্কৃতি নয়। ৪৫ বছর ধরে অভিনয় করছেন তিনি। শিশু শিল্পী হিসেবে দেখলে সময়টা আরো বেশি কিন্তু যেভাবে বাংলা ছবির মুক্তি নিয়ে দড়ি টানাটানি হচ্ছে, তাতে এরকম চলতে থাকলে আর অভিনয়ে থাকবেন না অভিমানী জ্যেষ্ঠ পুত্র। মর্মাহত তিনি।

পুজোয় মুক্তি পেয়েছে একসঙ্গে চার চারটি বাংলা ছবি- রক্তবীজ ২, দেবী চৌধুরানী, রঘু ডাকাত এবং যত কাণ্ড কলকাতাতে। অগাস্ট মাসে এই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়দের দাবি মেনেই বাংলা ছবিকে (Bengali Film Industry) প্রাইম টাইম শো দেওয়া বাধ্যতামূলক করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার কয়েক সপ্তাহ পরেই যখন পুজো রিলিজের সময় এলো, তখন দেখা গেল কিছু ছবি নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে কোথাও বেশি কোথাও কম শো রেখেছে। শুধু তাই নয়, এই বিষয়টা নিয়ে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের বনাম দেব এবং তাঁর টিমের যে লড়াইটা শুরু হল তাতে বাংলা ছবি দেখতে যাঁরা ভালবাসেন তাঁদের কাছে ভুল বার্তা গেল। তারা ভাবলেন দূর আর ছবিই দেখব না- মত দীর্ঘ ৪ দশকের বেশি সময় ইন্ডাস্ট্রিতে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করা প্রসেনজিতের।

তাঁকে তো টলিউড জ্যেষ্ঠপুত্র বলে মানে। তাহলে তিনি কেন এগিয়ে এসে দুপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করছেন না? সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে প্রসেনজিৎ (Prasenjit Chatterjee) জানান, সেভাবে বসে বৈঠক করার পরিস্থিতিতে তিনি নেই। কিন্তু তা বলে তিনি যে একেবারেই চেষ্টা করেননি তা নয়। কিন্তু সন্তান বড় হয়ে গেলে বাবা তাঁদের অনেক কথাই বলে উঠতে পারেন না। অর্থাৎ এইসব পরিস্থিতির মধ্যে উপযাজক হয়ে গিয়ে তিনি নিজের অস্বস্তি বাড়াতে চান না বলে ইঙ্গিত দেন প্রসেনজিৎ।

তবে এই পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত বিরক্ত, দুঃখিত, ব্যথিত প্রসেনজিৎ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এরকম চলবে তিনি আর বাংলা ছবি করবেন না। কারণ তিনি যাঁদের সঙ্গে অভিনয় করে এসেছেন, তাঁদের থেকে এই শিক্ষা তিনি পাননি। এই প্রসঙ্গে ‘গুরুদক্ষিণা’ ও ‘অমরসঙ্গী’র মতো সুপার হিট বাংলা ছবির উল্লেখ করেন। প্রসেনজিৎ জানান, এই ছবি দুটি একইসঙ্গে রিলিজ করে রমরমিয়ে চলেছিল। একটিতে ছিলেন তিনি, অপরদিকে তাপস পাল। কিন্তু তা নিয়ে দুজনের কারও মধ্যে কোনও লড়াই ছিল না। উল্টে তারপর দুজনে একসঙ্গে চারটে ছবি করেছেন। আর তাতে লাভবান হয়েছেন এই বাংলা ইন্ডাস্ট্রির প্রযোজকরাই। প্রসেনজিৎ সেই ঘরানায় অভ্যস্ত। সুতরাং বাংলা ছবির মুক্তি নিয়ে, হল পাওয়া নিয়ে-এই মাঠের বাইরে খেলা তার একেবারেই অপছন্দ। সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনও ব্যক্তি আক্রমণ নয়, শুধুমাত্র ছবির প্রচারের ক্ষেত্রে ব্যবহারের পক্ষপাতি প্রসেনজিৎ। তাঁর কথায়, এত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর এত হিট ছবির হল কালেকশন কত হল- কোনওদিন সে কথা তিনি জানতে চাননি। কারণ তাঁর মতে একজন অভিনেতা সেটা জানার প্রয়োজন নেই। তাঁর কাজ অভিনয় করা, ছবির প্রমোশন করা, সব লোককে হল পর্যন্ত নিয়ে আসা। কিন্তু এইসব ব্যাপারে মাথা গলিয়ে অভিনেতারা পরিবেশ নষ্ট করছেন।

যদিও বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জ্যেষ্ঠপুত্র যতদিন বাঁচবেন ততদিন অভিনয় করতে চান। এক্ষেত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর আদর্শ, অনুপ্রেরণা। বেঁচে থাকলে ৮০ বছর বয়সেও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে রোমান্টিক জুটি হিসেবে পর্দায় আসতে চান বলে জানালেন প্রসেনজিৎ। তাঁর কথায়, এখনও এই বুড়োবুড়ির প্রেম বাংলার দর্শক দেখতে চায়।

–

–

–

–

–