
” Nero fiddles while Rome burns ”

নীরো বাঁশি বাজাচ্ছিলেন রোম যখন পুড়ছিল । বাঁশি বাজাচ্ছিলেন নাকি বেহালা ?
কী বাজাচ্ছিলেন ?

নিন্দুকেরা বলে , বাঁশি-বেহালা নিয়ে অহেতুক তর্ক জুড়ে মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে যাওয়ার হীন কৌশল অবলম্বন করবেই কর্পোরেট তাত্ত্বিকবৃন্দ । কিন্তু নগর পুড়লে কি দেবালয় রক্ষা পায় ? যতুগৃহে বাস ক’রে আগুন নিয়ে খেলা করার পরিণতি কিন্তু ভয়ঙ্কর ।

নাট্যকার বলেন , পুঁজির দাসত্ব থেকে মুক্তি সহজ নয়। রাজা তথা শাসকের জয়গান গাওয়ার বাধ্যতা থেকে অব্যাহতি পাওয়া আরও কঠিন । বুর্জোয়া কবিতায় গদগদ হোক পত্র পত্রিকা । কিন্তু ইস্যু থেকে পালানোর চেষ্টা বড়ো বিপজ্জনক । অবান্তর তর্কে বাজার গরম না করে রোম কেন পুড়েছিল সেই কূট প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়ানোর সাহস সঞ্চয় করা উচিত রাজাকারদের । এতে আখেরে লাভ তাদেরই । মনে করা যাক অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটকের সেই বিখ্যাত গান :
ভোর হবার আগে রাজার
যুদ্ধ জেতা চাই
রাজা বাঁচলে আমরা বাঁচবো
ভরসা একটাই
নইলে জীবন যাবে …
টগবগ টগবগ টগবগ টগবগ
টগবগ টগবগ টগবগ …
আব , মুদ্দেপে আইয়ে জনাব।
কেন পুড়েছিল রোম ?

৬৪ খৃস্টাব্দে রোম শহরে একটি ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটে, যেখানে শহরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায় এবং সেখানকার রাজা নীরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন এমন একটি কিংবদন্তি প্রচলিত হয় । এর অর্থ হলো , ভয়াবহ কোনো পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে কোনো ব্যক্তি যখন এমন নির্বিকার থাকতে পারে , তখন ধরে নিতে হয় সেই ব্যক্তি দায়িত্বজ্ঞানহীন , অকেজো , আত্মকেন্দ্রিক অথবা বিকৃতমস্তিষ্ক । যদিও রাজা নীরো রোমের বিপদের সময় সত্যিই বাঁশি কিংবা বেহালা বাজিয়েছিলেন এমন কোনো প্রমাণ কিন্তু পাওয়া যায় নি । কিন্তু রোমের সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই উক্তিটি একজন অকর্মণ্য এবং নিষ্ঠুর শাসকের প্রতীক হয়ে রয়েছে ।

৬৪ খৃস্টাব্দের ১৯ জুলাই এই আগুন লাগে এবং টানা ছ’দিন ধরে এই আগুন জ্বলেছিল । রোমান অধিবাসীদের মধ্যে অনেকেই ভাবতেন সম্রাট নীরো স্বয়ং এই আগুন লাগিয়েছিলেন সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত স্বার্থে । তাই এতটা ঔদাসীন্য দেখাতে পেরেছিলেন । বলাবাহুল্য , এরও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি । অগ্নিকাণ্ডের পর নীরো এর দায় চাপিয়ে দেন রোমান খৃস্টানদের ওপর । এবং তারপর নাকি তাদের ওপর যথেষ্ট নির্যাতন চালিয়েছিলেন ।কেউ কেউ অবশ্য মনে করতেন , রাজা নীরো নিজেই ডোমাস অরিয়া ( Domus Aurea ) নামে একটি স্বর্ণগৃহ নির্মাণের জন্য এই অগ্নিকাণ্ড ঘটান । এসব কথা প্রাচীন সূত্র অনুযায়ী জানা যায় ।

কোথাও আবার এমনও লেখা আছে : ” Nero fiddled while Rome burns ” সে যা-ই লেখা হোক , গোটা শহরটা যখন পুড়ছে , তখন বাঁশি কিংবা বেহালা বাজানোর অর্থ একটা ভান , একটা ছলনা । যেন সবকিছুই স্বাভাবিক আছে , আগুন নিয়ে এতো চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই । রাজা নীরো হলেন রোমান সাম্রাজ্যের একজন কুখ্যাত শাসক , যিনি ছলনার আশ্রয় নিতে পছন্দ করতেন । রাজা নীরো (৩৭-৬৮ খৃস্টাব্দ ) তাঁর নিষ্ঠুরতা , অপচয় ও ব্যক্তিগত অশ্লীলতার জন্য যথেষ্ট নিন্দিত ও ধিকৃত ছিলেন । তিনি ছিলেন রোমের পঞ্চম ও শেষ জুলিও ক্লডিয়ান সম্রাট । তাঁর পুরো নাম ছিল নীরো ক্লডিয়াস সিজার অগাস্টাস জার্মানিকাস । তিনি ৫৪ থেকে ৬৮ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত রোমান সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন । তাঁর বিরুদ্ধে নিজের মা , সৎ ভাই এবং স্ত্রীদের হত্যা এবং খৃস্টানদের ওপর নৃশংস নির্যাতনের অভিযোগ ছিল । তিনি ছিলেন বেহিসাবি , বিলাসী এবং অভিনয়প্রিয় । মঞ্চে অভিনয় করা পছন্দ করতেন । সঙ্কটকালে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ এবং যাবতীয় কদর্যতার প্রতীক হিসেবে রাজা নীরো কুখ্যাত হয়ে আছেন ইতিহাসে । মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি শাসনভার হাতে পান এবং ৩০ বছর বয়সে মারা যান ।

আরও পড়ুন – সুপারস্টার নয়: কুণালের সুরে দেবকে খোঁচা ব্রাত্যর

_

_
_