Monday, November 17, 2025
Utpal Sinha

” Nero fiddles while Rome burns ”

নীরো বাঁশি বাজাচ্ছিলেন রোম যখন পুড়ছিল । বাঁশি বাজাচ্ছিলেন নাকি বেহালা ?
কী বাজাচ্ছিলেন ?

নিন্দুকেরা বলে , বাঁশি-বেহালা নিয়ে অহেতুক তর্ক জুড়ে মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে যাওয়ার হীন কৌশল অবলম্বন করবেই কর্পোরেট তাত্ত্বিকবৃন্দ । কিন্তু নগর পুড়লে কি দেবালয় রক্ষা পায় ? যতুগৃহে বাস ক’রে আগুন নিয়ে খেলা করার পরিণতি কিন্তু ভয়ঙ্কর ।

নাট্যকার বলেন , পুঁজির দাসত্ব থেকে মুক্তি সহজ নয়। রাজা তথা শাসকের জয়গান গাওয়ার বাধ্যতা থেকে অব্যাহতি পাওয়া আরও কঠিন । বুর্জোয়া কবিতায় গদগদ হোক পত্র পত্রিকা । কিন্তু ইস্যু থেকে পালানোর চেষ্টা বড়ো বিপজ্জনক । অবান্তর তর্কে বাজার গরম না করে রোম কেন পুড়েছিল সেই কূট প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়ানোর সাহস সঞ্চয় করা উচিত রাজাকারদের । এতে আখেরে লাভ তাদেরই । মনে করা যাক অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটকের সেই বিখ্যাত গান :
ভোর হবার আগে রাজার
যুদ্ধ জেতা চাই
রাজা বাঁচলে আমরা বাঁচবো
ভরসা একটাই
নইলে জীবন যাবে …
টগবগ টগবগ টগবগ টগবগ
টগবগ টগবগ টগবগ …
আব , মুদ্দেপে আইয়ে জনাব।
কেন পুড়েছিল রোম ?

৬৪ খৃস্টাব্দে রোম শহরে একটি ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটে, যেখানে শহরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায় এবং সেখানকার রাজা নীরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন এমন একটি কিংবদন্তি প্রচলিত হয় । এর অর্থ হলো , ভয়াবহ কোনো পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে কোনো ব্যক্তি যখন এমন নির্বিকার থাকতে পারে , তখন ধরে নিতে হয় সেই ব্যক্তি দায়িত্বজ্ঞানহীন , অকেজো , আত্মকেন্দ্রিক অথবা বিকৃতমস্তিষ্ক । যদিও রাজা নীরো রোমের বিপদের সময় সত্যিই বাঁশি কিংবা বেহালা বাজিয়েছিলেন এমন কোনো প্রমাণ কিন্তু পাওয়া যায় নি । কিন্তু রোমের সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই উক্তিটি একজন অকর্মণ্য এবং নিষ্ঠুর শাসকের প্রতীক হয়ে রয়েছে ।

৬৪ খৃস্টাব্দের ১৯ জুলাই এই আগুন লাগে এবং টানা ছ’দিন ধরে এই আগুন জ্বলেছিল । রোমান অধিবাসীদের মধ্যে অনেকেই ভাবতেন সম্রাট নীরো স্বয়ং এই আগুন লাগিয়েছিলেন সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত স্বার্থে । তাই এতটা ঔদাসীন্য দেখাতে  পেরেছিলেন । বলাবাহুল্য , এরও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি । অগ্নিকাণ্ডের পর নীরো এর দায় চাপিয়ে দেন রোমান খৃস্টানদের ওপর । এবং তারপর নাকি তাদের ওপর যথেষ্ট নির্যাতন চালিয়েছিলেন ।কেউ কেউ অবশ্য মনে করতেন , রাজা নীরো নিজেই ডোমাস অরিয়া ( Domus Aurea ) নামে একটি স্বর্ণগৃহ নির্মাণের জন্য এই অগ্নিকাণ্ড ঘটান ।‌ এসব কথা প্রাচীন সূত্র অনুযায়ী জানা যায় ।

কোথাও আবার এমনও লেখা আছে : ” Nero fiddled while Rome burns ” সে যা-ই লেখা হোক , গোটা শহরটা যখন পুড়ছে , তখন বাঁশি কিংবা বেহালা বাজানোর অর্থ একটা ভান , একটা ছলনা । যেন সবকিছুই স্বাভাবিক আছে , আগুন নিয়ে এতো চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই । রাজা নীরো হলেন রোমান সাম্রাজ্যের একজন কুখ্যাত শাসক , যিনি ছলনার আশ্রয় নিতে পছন্দ করতেন । রাজা নীরো (৩৭-৬৮ খৃস্টাব্দ ) তাঁর নিষ্ঠুরতা , অপচয় ও ব্যক্তিগত অশ্লীলতার জন্য যথেষ্ট নিন্দিত ও ধিকৃত ছিলেন । তিনি ছিলেন রোমের পঞ্চম ও শেষ জুলিও ক্লডিয়ান সম্রাট । তাঁর পুরো নাম ছিল নীরো ক্লডিয়াস সিজার অগাস্টাস জার্মানিকাস । তিনি ৫৪ থেকে ৬৮ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত রোমান সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন । তাঁর বিরুদ্ধে নিজের মা , সৎ ভাই এবং স্ত্রীদের হত্যা এবং খৃস্টানদের ওপর নৃশংস নির্যাতনের অভিযোগ ছিল । তিনি ছিলেন বেহিসাবি , বিলাসী এবং অভিনয়প্রিয় । মঞ্চে অভিনয় করা পছন্দ করতেন । সঙ্কটকালে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ এবং যাবতীয় কদর্যতার প্রতীক হিসেবে রাজা নীরো কুখ্যাত হয়ে আছেন ইতিহাসে । মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি শাসনভার হাতে পান এবং ৩০ বছর বয়সে মারা যান ।

আরও পড়ুন – সুপারস্টার নয়: কুণালের সুরে দেবকে খোঁচা ব্রাত্যর 

_

 

_

 

_

Related articles

সময়সীমা ২৬ নভেম্বর! বিশেষ নিবিড় সংশোধনীতে তৎপর নির্বাচন দফতর

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী প্রক্রিয়ায় রাজ্যের প্রতিটি ভোটারের এনিউমারেশন ফর্ম সংগ্রহ ও তার ডিজিটাইজেশনের কাজ ২৬ নভেম্বরের...

বৃদ্ধ বাবার খেয়াল রাখেন না যুবরাজও! মৃত্যুর অপেক্ষায় যোগরাজ

বর্তমানে বয়সকালে বৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখভাল না করার অভিযোগ নতুন নয়, এই নিয়ে অনেক মামলা হয় হাইকোর্ট বা সুপ্রিম...

ঢাকা হাসিনাকে ফেরত চাইতেই বার্তা দিল নয়াদিল্লি

ফাঁসির সাজা ঘোষণার পরেই বাংলাদেশের (Bangladesh) প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে (Sheikh Hasina) ফেরানোর তোড়জোড় শুরু বাংলাদেশের কার্যনির্বাহী সরকারের। আর...

ছেলেমানুষি করছেন রাজ্যপাল! রাজভবনে খানাতল্লাশিকে ‘নাটক’ বলে তীব্র কটাক্ষ কল্যাণের

তাঁরই অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজভবনে ঘটা করে তল্লাশি অভিযান করালেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (C V Ananda Bose)। আর...
Exit mobile version