Thursday, November 13, 2025

ট্রাম্পের ‘ভুল’ শিক্ষানীতি: আমেরিকা ছাড়ছেন অভিজিৎ-ডাফলো

Date:

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদেশি পড়ুয়া থেকে গবেষক নেওয়া যাবে না নির্দিষ্ট সংখ্য়ার বাইরে। গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ কৃতি হলে তবেই সরকারি সাহায্য। বৃহত্তর ক্ষেত্রে বন্ধ সরকারি অনুদান। কার্যত বিদেশের পড়ুয়াদের সুবিধা বন্ধ করতে গিয়ে আমেরিকার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির কীভাবে সর্বনাশ করছেন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প (US President Donald Trump), তা টের পাচ্ছে মার্কিন বিশ্ববিদ্য়ালয়গুলি। এবার এমআইটি (MIT) ছাড়ছেন নোবেনজয়ী (Nobel Laureates) অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhijit Banerjee) ও তাঁর নোবেলজয়ী স্ত্রী এস্টার ডাফলো (Esther Duflo)। আমেরিকা ছেড়ে এবার তাঁরা পাড়ি দিচ্ছেন সুইজারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্য়ালয়ে। তাঁরা ২০২৬ সালে যোগ দেবেন ইউনিভার্সিটি অব জুরিখে (UZH)। সেখানেই তাঁরা গড়ে তুলবেন নতুন গবেষণা কেন্দ্র ‘লেমান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট, এডুকেশন অ্যান্ড পাবলিক পলিসি’।

সম্প্রতি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক নির্দেশিকা জারি হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ১৫ শতাংশের বেশি হবে কিংবা জাতি ও লিঙ্গভিত্তিক ভর্তি বা নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে, সেগুলির ফেডারেল গবেষণা তহবিল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এই নির্দেশের তীব্র বিরোধিতা করেছে এমআইটি-সহ একাধিক শীর্ষ মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়। এমআইতি-র প্রেসিডেন্ট স্যালি কর্নব্লুথ মার্কিন শিক্ষাসচিব লিন্ডা ম্যাকমোহনকে লেখা চিঠিতে জানান, ‘আমরা এমন কোনও নীতি মানতে পারি না যা গবেষণার স্বাধীনতা ও বৈজ্ঞানিক মেধার মূল্যায়নকে রাজনীতির সঙ্গে বেঁধে দেয়।’

অন্য দিকে জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে, তাঁরা ‘লেমান ফাউন্ডেশন প্রফেসর অব ইকনমিকস’ হিসেবে ২০২৬ সালের জুলাই থেকে ওই দুই নোবেলজয়ীকে স্বাগত জানাবে। নতুন কেন্দ্রটির জন্য ব্রাজিলের লেমান ফাউন্ডেশন বরাদ্দ করেছে ২৬ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ফ্লোরিয়ান শয়ের এক্সে লিখেছেন, “নোবেলজয়ী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার ডাফলো আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন, এটা জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক ঐতিহাসিক ঘটনা। তাঁদের আগমন আমাদের গবেষণার মান ও আন্তর্জাতিক মর্যাদাকে আরও বাড়াবে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মাইকেল শেপম্যান বলেন, “দু’জনেই বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে সমাজের কল্যাণের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। আমাদের জন্য এটি এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।”

এক্স হ্যান্ডেলে ডাফলো জানান, “এই নতুন কেন্দ্র আমাদের আগের কাজকে আরও বিস্তৃত পরিসরে কার্যকর করবে — যেখানে গবেষণা, শিক্ষাদান ও নীতির বাস্তব প্রয়োগ একত্রিত হবে।” অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের গবেষণার আদর্শ পরিবেশ দেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”

তবে তাঁরা সম্পূর্ণভাবে এমআইটি ছাড়ছেন না। আংশিকভাবে যুক্ত থাকবেন এবং পরিচালনা করবেন তাঁদের গড়া ‘জেপাল’ (Abdul Latif Jameel Poverty Action Lab)।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে আমেরিকায় বিদেশি ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। ভারতের ক্ষেত্রেই এই পতন প্রায় ৪৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা মার্কিন উচ্চশিক্ষা জগতে এক গভীর সংকেত দিচ্ছে। বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের প্রবেশাধিকারে কড়াকড়ি, ভিসা নীতির কঠোরতা, জাতিগত বৈচিত্র্যে হস্তক্ষেপ — সব মিলিয়ে আমেরিকার শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে বলেই মত তাঁদের।

Related articles

KIFF: সমাপ্তির বিষাদ ভুলে চলচ্চিত্র উৎসব প্রাঙ্গণে সিনে দশমীর বর্ণময় অনুষ্ঠানের জৌলুস 

শহরে এসেছিল দেশ বিদেশের ছবি। এক সপ্তাহ ধরে জমল সিনে আড্ডা। নানা ভাষার সিনেমা দেখে উচ্ছ্বসিত সাধারণ দর্শক...

লাদাখে চালু হল বিশ্বের সর্বোচ্চ বিমানঘাঁটি

১৩,৭০০ ফুট উচ্চতা নিয়ে বিশ্বের সেরা সামরিক বিমানঘাঁটি তৈরী হল এবার লাদাখে। লাদাখের চাংথাং নিওমা বিমানঘাঁটি বুধবার বায়ুসেনা...

আগামী বছর আরও বড় কিছু করব-Big Jump: “জনগণের উৎসব Kiff”-র সমাপ্তিতে বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর 

“আমরা আগামী বছর আরও বড় কিছু করব…Big Jump“-৩১ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে আচমকা হাজির হয়ে...

কমিশনের হিসাবে ফর্ম পৌঁছে বিলিতে ১ নম্বর, তবু বাংলায় প্রশিক্ষণই অসম্পূর্ণ BLO-দের!

৪ নভেম্বর থেকে দেশের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ইউনিমারেশনের কাজ শুরু করেছিল নির্বাচন কমিশন। ১১ নভেম্বরের মধ্যে...
Exit mobile version