উত্তরবঙ্গের বন্যা–ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় রাজ্যের সর্বাত্মক উদ্যোগ, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জোর ত্রাণ ও পুনর্গঠন কর্মযজ্ঞ

Date:

Share post:

উত্তরবঙ্গের বন্যা ও ভূমিধস–পীড়িত জেলাগুলিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে তৎপর রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে একাধিক দফতরের সমন্বয়ে চলছে যৌথ ত্রাণ ও পুনর্গঠন অভিযান। শনিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের কাছ থেকে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট নেন এবং নির্দেশ দেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে ত্রাণ ও পুনর্গঠন কার্যক্রম পূর্ণ উদ্যমে চালিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি ত্রাণ শিবিরগুলিতে স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা, পানীয় জল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার ওপরও বিশেষ জোর দিতে বলেছেন তিনি।

প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে অবিরাম চলছে ত্রাণ কার্যক্রম। অস্থায়ী আশ্রয় শিবির, ত্রাণ রান্নাঘর ও বিতরণ কেন্দ্রের মাধ্যমে দুর্গতদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাবার, পানীয় জল ও স্বাস্থ্যসামগ্রী। গৃহক্ষতির সঠিক মূল্যায়নের জন্য প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে সমীক্ষা চলছে, যেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে জিও–ট্যাগ করা ফটো—যার মাধ্যমে স্বচ্ছভাবে গৃহনির্মাণ অনুদান বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি বিশেষ আউটরিচ ক্যাম্পের মাধ্যমে নাগরিকদের হারানো নথিপত্র পুনঃপ্রাপ্তিতে সহায়তা করছে প্রশাসন।

যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক করতেও নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ। কালিম্পং জেলার টোডে–টাংটা গ্রাম পঞ্চায়েতের লোয়ার গোডক এলাকায় ভূমিধসে প্রায় ৭০টি পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। প্রশাসনের তৎপরতায় জরুরি মেরামত ও ব্যারিকেড বসিয়ে সেখানে পুনরায় যোগাযোগ চালু করা হয়েছে। রাজ্যের পূর্ত দফতর প্রধান সড়ক ও সেতুগুলির পরিদর্শনে সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পাঠিয়েছে, বিশেষত তিস্তা বাজার থেকে কালিম্পং–দার্জিলিং সংযোগকারী এসএইচ–১২ রাস্তার পুনর্গঠন দ্রুততার সঙ্গে চলছে। অনেক এলাকায় অস্থায়ীভাবে যাতায়াত শুরু হয়েছে, স্থায়ী মেরামতের কাজ স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফান্ডের আওতায় করা হচ্ছে।

কৃষি দফতরও মাঠে নেমে কাজ করছে। ফসলক্ষতির নিরপেক্ষ মূল্যায়নের পাশাপাশি বাংলা শস্য বীমা প্রকল্পে নতুন নাম নথিভুক্ত করা হচ্ছে, যাতে ক্ষতিপূরণ দ্রুত মেলে। কৃষকদের সহায়তায় ইতিমধ্যেই বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ২৫ কুইন্টাল সরিষা, ২০০ কুইন্টাল মসুর ও ৬০০ কুইন্টাল ভুট্টার বীজ। সুফল বাংলার ৪৬টি নতুন মোবাইল আউটলেট চালু হওয়ায় দুর্গত এলাকায় সবজি ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ বজায় রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরও পশুখাদ্য ও ওষুধ বিতরণের পাশাপাশি পশুচিকিৎসা শিবির চালু করেছে, যার মধ্যে কালিম্পং জেলার মোলার বিশেষ শিবির অন্যতম। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, “মানুষের জীবন বাঁচানো, জীবিকা ফিরিয়ে আনা এবং ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলির পুনর্গঠন—এই তিনটি বিষয়ই এখন রাজ্যের অগ্রাধিকার।”
উত্তরবঙ্গের দুর্গত এলাকায় দ্রুত স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে চলছে নিরলস মানবিক প্রচেষ্টা।

আরও পড়ুন- ক্ষতিগ্রস্ত টন্ডু ও বামনডাঙ্গায় তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি! পাশে দাঁড়াল দুই শতাধিক পরিবারের, পড়ুয়াদের থাতা-কলম বিতরণ

_

 

_

 

_

 

_

 

_

spot_img

Related articles

আইটিআই পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর! পূর্ব ভারতের শীর্ষে ক্যানিংয়ের সায়ন নস্কর

গোটা পূর্ব ভারতের মধ্যে বাংলার কিশোর সায়ন নস্কর এক নজির সৃষ্টি করেছে। ক্যানিংয়ের তালদি বয়সিং গ্রামের এই মেধাবী...

ক্ষতিগ্রস্ত টন্ডু ও বামনডাঙ্গায় তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি! পাশে দাঁড়াল দুই শতাধিক পরিবারের, পড়ুয়াদের থাতা-কলম বিতরণ

নাগরাকাটা ব্লকের প্রত্যন্ত টন্ডু ও বামনডাঙ্গা মডেল ভিলেজে পৌঁছে গেল তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি সংগঠনের জলপাইগুড়ি জেলা ও...

রাজ্যের সমস্ত সেতুর ‘হেলথ অডিট’-এর নির্দেশ মুখ্যসচিবের

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভেঙে পড়েছে মিরিকের দুধিয়া সেতু। এরপরই রাজ্যের সমস্ত সেতুর ‘হেলথ অডিট’ বা স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দিলেন...

অনুমোদনের ফাঁসে আটকে অপরাজিতা বিল! অভিষেকের ভিডিও পোস্ট করে সরব তৃণমূল

অপরাজিতা বিল আইনে পরিণত হয়ে গেলে ধর্ষণের মতো নিকৃষ্টতম অপরাধ আরও কমত। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সেই বিল পাশ হয়ে...