পুলিশ বাহিনীর চোখ রাঙানি ছাড়াও দেশ শাসন সম্ভব: বিশ্বে রয়েছে একাধিক উদাহরণ

Date:

Share post:

যে কোনও স্বাধীন, স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকারী দেশের দায়িত্ব নিজের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ব্যবস্থা করা। সেক্ষেত্রে আইন প্রণয়নের পরে তা মেনে চলার জন্য দেশের ভিতরে পুলিশ বাহিনী (police force) থাকা প্রয়োজন। যদি বিশ্বের একটি দেশ রয়েছে, যেখানে নির্দিষ্ট পুলিশ বাহিনী নেই সাধারণ মানুষকে আইন মানতে বাধ্য করার জন্য। আবার এমন দেশও রয়েছে যেখানে পুলিশ থাকলেও তাদের হাতে থাকে শুধু ব্যাটন। বন্দুকের বালাইই নেই। আবার কোথাও পুলিশ মানে সুসজ্জিত এক বাহিনী, যাদের কাজ প্রতিটি স্থানের শোভা বৃদ্ধি করা।

লাগাতার বিশৃঙ্খলা, আইন ভাঙা থেকে খুন-জখম-রাহাজানি। এসব নিয়ে যখন ভারতের প্রতিটি রাজ্য জেরবার। তার সঙ্গে দোসর রাজনৈতিক কার্যক্রম। নেতা-কর্মী-সমর্থকদের লাগাতার ‘দৌরাত্ম্যে’ ভারতের আঞ্চলিক পুলিশ বাহিনীগুলিকে দিন-রাত তটস্থ হয়ে থাকতে হয়। এমনকি উৎসবেও ছুটি মেলে না পুলিশকর্মীদের। সেখানে এমন দেশও আছে, যাদের কোনও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকই নেই। সেই দেশটির নাম পালাউ (Palau)। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের (Pacific ocean) একটি দ্বীপরাষ্ট্র।

এই দেশে আইন মন্ত্রক (Ministry of Justice) রয়েছে। সারা দেশে প্রণয়ন হওয়া আইন মেনে চলা হচ্ছে কি না তা দেখে এই মন্ত্রক। তার জন্য এই মন্ত্রকের অধীনে রয়েছে নজরদারি বিভাগ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ, আন্তর্দেশীয় অপরাধ বিভাগ, শিশু আইন বিভাগ, অগ্নি নির্বাপন বিভাগ, সংশোধনাগার বিভাগ, সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও মৎস্য আইন বিঙাগ। এই সবটাই নাগরিক নিরাপত্তা দফতরের অধীন। কোথাও পুলিশ বাহিনীর উল্লেখ নেই দেশের মন্ত্রণালয়ের বিভাগগুলিতে।

১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (USA) অধীনে ছিল পালাউ। স্বাধীনতা অর্জনের পরে তাইওয়ানের (Taiwan) সঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত চুক্তিতে আবদ্ধ এই দেশ। এছাড়াও সামুদ্রিক নিরাপত্তার প্রয়োজনে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও হয়েছে একাধিক চুক্তি। সম্প্রতি ইন্টারপোলের (Interpol) সদস্য হয়েছে পালাউ (Palau)। ফলে আন্তর্জাতিক ও আন্তর্দেশীয় নজরদারির ক্ষেত্রে সেখান থেকে তারা সহযোগিতা পায় এখন। প্রয়োজন অনুপাতে বাহিনী তৈরি করে কাজ চালানো হয় পালাউতে। সম্প্রতি প্যাসিফিক গেমসের সময়ে যেমন পুলিশের জ্যাকেট পরে ঘুরতে দেখা গিয়েছে ১৩ বছরের তাদাশিকে। গেমসে আসা প্রতিযোগী ও দর্শকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব তার কাঁধেও ছিল। তার রাষ্ট্র পালাউ তাকে বিশ্বাস করে তার উপর এই দায়িত্ব অর্পণ করেছিল।

বাস্তবে অপরাধ ও অপরাধপ্রবণতা – এই দুটি বিষয় কম হলেই যে পুলিশি নজরদারির দিকটিই কমে যায়, তা বলা বাহুল্য। আর তারই প্রমাণ আইসল্যান্ড (Iceland)। বিশ্বে সব থেকে কম অপরাধ প্রবণতার জন্য বিখ্যাত ইউরোপের এই দেশ। রাষ্ট্র ছোট হলে অপরাধ কম হবে, সেই যুক্তিকেও হার মানায় আইসল্যান্ড। ২০২৫ সালে গত বছরের তুলনায় অপরাধ প্রবণতা আরও ২ শতাংশ কমিয়ে বিশ্বে শীর্ষে এই দেশ। নাগরকি নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পুলিশ বাহিনী রয়েছে। তবে তারা অস্ত্রধারী (fire arms) নয়। তাদের হাতে থাকে শুধু ব্যাটন (baton)।

আইসল্যান্ডের রাস্তায় প্যারামবুলেটরে শিশুকে শুইয়ে বাবা-মা স্বচ্ছন্দে বাজার করে আসতে পারেন। বাড়িতে তালা দেওয়ার অভ্যাস বহু মানুষের নেই। অথবা রাতে কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে কখনই মহিলারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন না। দেশের প্রশাসনের দাবি, সব নাগরিকের জন্য সমান অধিকার ও শক্ত সমর্থ সামাজিক ব্যবস্থার কারণে কোনও মানুষই আর্থিক বা সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন না। সেটাই আইসল্যান্ডের অপরাধপ্রবণতা কমিয়ে দেয়।

আবার ভাটিকান সিটিতে (Vatican City) পুলিশ বাহিনী রয়েছে। তবে তাদের কাজ দেশের শোভা বর্ধন করা। ঠিক যেন ট্রাম্পেট বাহিনী বা কোনও ব্যান্ডপার্টি। ভাটিকান সিটির আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সুইজারল্যান্ডের (Switzerland)। সুইস বাহিনী ভাটিকান সিটির আইন শৃঙ্খলা ও নাগরিক নিরাপত্তার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। এর ফলে ভাটিকান সিটির নিজস্ব পুলিশ বাহিনী হল সুসজ্জিত বাহিনী।

আরও পড়ুন: বিতর্কের জের! রাজকীয় মর্যাদা ছাড়ছেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু 

বাস্তবে নাগরিকদের নিরাপত্তা ও দেশের নিরপত্তা নিয়ে চিন্তা করতে চায় না অনেক দেশই। সেই সব দেশ নিজেদের সেনাবাহিনীও (Armed Forces) রাখে না। বিদেশী শত্রুর আক্রমণের ভয়ে অন্য দেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় প্রতিরক্ষার জন্য। ফলে বেঁচে যায় সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা খাতে বিপুল পরিমাণ টাকা। তবে সব থেকে বড় বিষয় – সেই সব দেশগুলি প্রতিবেশী ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে উচ্চ কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখে। যার ফলে কোনও দেশের সঙ্গে অযথা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার পথও প্রশস্ত হয় না এই সব দেশের। এই দেশগুলির মধ্যে অন্যতম – আইসল্যান্ড, কোস্টা রিকা, ভাটিকান সিটি, মোনাকো, পানামা প্রভৃতি নয়টি দেশ।

spot_img

Related articles

ইস্টবেঙ্গলকে টিপ্পনি দেবাশিসের, ফেডারেশনকে তোপ সৃঞ্জয়ের

আইএফএ শিল্ড(IFA Shiled) জয়ের জন্য ভাইফোঁটার বিকেলে পতাকা উত্তোলন হল মোহনবাগান ক্লাবে (Mohunbagan) । পতাকা উত্তোলন করলেন ক্লাবের...

ধর্মীয় রঙ লাগাতে ব্যর্থ বিজেপি! কাকদ্বীপে কালী মূর্তি ভাঙার ঘটনায় ব্যাখ্যা পুলিশের 

মঙ্গলবার রাতে কাকদ্বীপের সূর্যনগর এলাকার একটি কালীমন্দিরে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়ে কালী প্রতিমা ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে। বুধবার...

পাঞ্জাবের প্রাক্তন মন্ত্রী-ডিজিপির ছেলের মৃত্যুতে নয়া মোড়! অবশেষে মুখ খুললেন ডিজিপি 

পাঞ্জাব পুলিশের প্রাক্তন ডিজিপি (Punjab police DGP) মহাম্মদ মুস্তাফার ছেলে আকিল আখতারের মৃত্যু ঘিরে পাঞ্জাবের চরম চাঞ্চল্য। ইতিমধ্যেই...

প্রতিমা বিসর্জনে গিয়ে নিখোঁজ, ভাইফোঁটার সকালে মিলল যুবকের দেহ

প্রতিমা বিসর্জনে গিয়ে আর ঘরে ফেরেনি যুবক। দেহ (dead body) উদ্ধার হল ভাইফোঁটার সকালে। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪...