মঙ্গলবার রাতে কাকদ্বীপের সূর্যনগর এলাকার একটি কালীমন্দিরে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়ে কালী প্রতিমা ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে। বুধবার সকাল থেকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং গোটা এলাকা জুড়ে বিক্ষোভ-পথ অবরোধ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা ভাঙা কালীমূর্তি নিয়ে জাতীয় সড়কের উপর হাজির হন। এরপরেই মূর্তি বিসর্জনের উদ্যোগ নেয় পুলিশ। প্রিজন ভ্যানে নিয়ে যাওয়া হয় ভাঙা কালী মূর্তি। সুযোগ বুঝে বিজেপি এই ঘটনায় ধর্মীয় রঙ লাগিয়ে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করে।

আজ, এই ঘটনা প্রসঙ্গে বিবৃতি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানায়, গতকাল, বিকেল ৫:৩০ নাগাদ সূর্যনগর জিপির একটি মা কালী মন্দিরে গোলমালের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পূজা কমিটির সদস্যদের সাথে কথা বলে। তারা জানিয়েছে যে প্রতিমা বিসর্জনের পরে তারা অভিযোগ দায়ের করবে এবং অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হবে। তবে, কিছুক্ষণ পরেই, বহিরাগতদের একটি দল এলাকায় প্রবেশ করে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে আসা লোকজন তাদের যোগ দেয়। তারা মূর্তিটি জাতীয় সড়কে নিয়ে যায় এবং রাস্তাটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ দ্রুত বাহিনী মোতায়েন করে আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু রাস্তা অবরুদ্ধ থাকায় যানবাহন এবং অ্যাম্বুলেন্স আটকে ছিল। বিক্ষোভকারীদের রাস্তা খালি করার অনুরোধ করা হলেও তারা উত্তেজিত হয়ে পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। সেই সময়ে, মা কালীর মূর্তি এবং এর সাথে সম্পর্কিত পবিত্রতা রক্ষা করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তাই মূর্তিটি সরিয়ে সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এটি একটি পুলিশ ভ্যানের ভেতরে রাখা হয়। পাথর ছোঁড়ার সময় মূর্তির কোনও ক্ষতি আটকাতেই ভ্যানের ভেতরে এটি সুরক্ষিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর এলাকাটি পরিষ্কার করে টহলদারি বাড়ানো হয়। এই ঘটনায় নির্দিষ্ট মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করা হয়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে, ভূপতি হালদারের ছেলে নারায়ণ হালদার নামে একজনকে জড়িত বলে শনাক্ত করা হয়। একটি দল পাঠানো হয় এবং নারায়ণ হালদারকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সে তার অপরাধ স্বীকার করে এবং তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চায়। প্রতিমার অবমাননার ঘটনায় তাকে মদ্যপ অবস্থায় পাওয়া যায়। আরও পড়ুন: পাঞ্জাবের প্রাক্তন মন্ত্রী-ডিজিপির ছেলের মৃত্যুতে নয়া মোড়! অবশেষে মুখ খুললেন ডিজিপি

পুলিশের তরফে আরও জানানো হয়েছে গোটা বিষয়ের তদন্ত চলছে, এবং বিষয়টি আদালতে তোলা হবে। এই ঘটনায় জড়িত অন্যদের সনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এখনও পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে, ঘটনাটি স্থানীয় বিষয় বলে মনে করা হচ্ছে। মা কালীর পবিত্রতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এরপরেই জনসাধারণকে সচেতন করে জানান হয়, ”আমরা সকলকে অনুরোধ করছি ভুল তথ্য ছড়াবেন না বা কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না। মা কালীর পবিত্রতা রক্ষার জন্য পুলিশ প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেবে। মোট দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একটি রাস্তা অবরোধের জন্য এবং অন্যটি ভাঙচুরের জন্য। রাস্তা অবরোধের ঘটনায় এখনও কোনও গ্রেফতার করা হয়নি, তবে তদন্ত চলছে। আমরা এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখছি। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক, এবং শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।”

–

–

–

–

–

–