Friday, October 31, 2025

সম্পর্কের আবেগ না বাস্তবের অধিকার, নিখাদ বাঙালিয়ানায় ‘স্বার্থপর’ সময়ের কথা বললেন অন্নপূর্ণা

Date:

শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী
সম্পর্ক বনাম অধিকারের যদি লড়াই বাধে তাহলে কে জিতবে! বলাটা ভীষণ কঠিন কারণ ইট, কাঠ, পাথরের শহরে সম্পর্ক আবেগ আঁকড়ে থাকলে লোকসানটাই বারবার হবে তাই হয়তো বেশিরভাগ বাস্তববাদীরা অধিকারকেই বেছে নেবেন। সম্পর্কের পাল্লা হালকা সেখানে। দ্বিমত যদিও আছে তবে তা খুব কম। আচ্ছা, অধিকার ছেড়ে দেওয়া কি সত্যি কোনও মুখের কথা? সম্পর্ককে যে মূল্য দেয়, স্নেহ, মমতা ভালবাসাকে যে মূল্য দেয় সে কি তার আপনজনের অধিকার কেড়ে নিতে পারে? কোনটা ঠিক কোনটা ভুল! কে আসলে স্বার্থপর! এমন এক অদ্ভুত, অস্বস্তিকর প্রশ্নের ওপর দাঁড়িয়ে পরিচালক অন্নপূর্ণা বসুর (Annapurna Basu) ছবি ‘স্বার্থপর’ (Swarthopor)। সহজ দাবি যেখানে কঠিনভাবে এসে দাঁড়িয়েছে দর্শকদের সামনে। সেখানে এমন একটা গল্প যা আমাদের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে জুড়ে রয়েছে। অথচ সেই গল্প আমরা আজও বলে উঠতে পারিনি। সেই ছকভাঙা এক লড়াইয়ের গল্প বলেছেন পরিচালক অন্নপূর্ণা বসু। দীর্ঘদিন সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার পর বড়পর্দায় পরিচালক হিসেবে ডেবিউ করলেন ‘স্বার্থপর’ ছবির মাধ্যমে। এই প্রসঙ্গে পরিচালক অন্নপূর্ণা বসু বললেন, নিজে পরিচালনা করব এই ইচ্ছে বহুদিনের তবে শুধুই পরিচালক হব এমনটা ভাবিনি। আমার সিনেমার সঙ্গে রিলেটেড প্রতিটা ক্ষেত্র খুব পছন্দ ছিল। এই গল্পটা আমার মনের মধ্যে ঘুরপাক খেত সেই কোন ছোটবেলা থেকে। গল্পটা বলতে চেয়েছি সব সময়। আমার হাজব্যান্ড চিত্রনাট্যকার সদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে কাজের সূত্রেই পরিচয় ছিল। নানারকম গল্প নিয়ে কথা বলতাম ওর সঙ্গে। তখন একদিন আমাকে বলল ঠিক এরকমই একটা গল্প ও লিখতে চায়। ইনফ্যাক্ট দুজনে একসঙ্গেই ভেবেছি একই কথা। তখন বুঝলাম আমাদের জেনারেশনের ছেলেমেয়েদের অনেকেরই এই গল্পটা বলার আছে। আমি এবং আমার হাজব্যান্ড দুজনেই মা-মাসিদের খুব কাছ থেকে দেখেছি তাই দুজনেই এই বিষয়টাকে খুব ফিল করেছি।

ছবির গল্প এক দাদা আর বোনের। অপর্ণা (কোয়েল মল্লিক)এবং সৌরভ (কৌশিক সেন)। যাঁদের মধ্যে সম্পর্ক খুব গভীর। তাঁরা একে অপরকে চোখে হারায়। বোনের বিয়ে হয়ে দূরে চলে যাওয়া সত্ত্বেও তাঁদের ভাই-বোনের মধ্যে দূরত্ব আসেনি কখনও, সম্পর্কে ভাটা পড়েনি। আসা-যাওয়া সব রয়ে গিয়েছে। হঠাৎই একদিন দাদা সৌরভ বোন অপর্ণাকে বলেন, তাঁদের যে পৈতৃক ভিটে রয়েছে সেটা তিনি নিজের মতো করে কাজে লাগাতে চান। আর সেটা করতে হলে বোন অপর্ণাকে সেই পৈতৃক ভিটেতে তাঁর নিজের অংশটা সম্পূর্ণ ছেড়ে দিতে হবে দাদাকে। অর্থাৎ দাদা পুরো বাড়ির স্বত্বাধিকার চেয়ে বসেন। এমন ক্ষেত্রে হয়তো অনেকেই ছেড়ে দেবে অধিকার কিন্তু সম্পর্কটা খুব সুন্দর হওয়া সত্ত্বেও অপর্ণা খুব নম্রভাবেই বেঁকে বসেন। আর সেখান থেকেই তৈরি হয় সংঘাত। পরবর্তীতে তা আইনি লড়াইয়ে গিয়ে পৌঁছয়। আইনি মারপ্যাঁচ, উকিলদের তর্কযুদ্ধর সবকিছুর উপরে ঠিক ভুলের যে দ্বন্দ্ব সেটাই উঠে আসে এই ছবিতে। ভাইবোনের সম্পর্কে সম্পত্তি-সংক্রান্ত বিরোধ কোনও নতুন ঘটনা নয়। এই ছবির মৌলিকতা হল এখানে ভাই-বোনের সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ নয়, পরিচালক তুলে ধরতে চেয়েছেন সম্পত্তির সমান অংশীদার যে বোন তাঁর অনুমতি না নিয়ে এক দাদার পৈতৃক ভিটে বিক্রি করে দেওয়ার মতো মানসিক ধৃষ্টতাকে। চিরাচরিত পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা যে কত দিক থেকে নারীর সম্মান ক্ষুণ্ণ করে এটাই দেখিয়েছেন পরিচালক। এখানেই তার সার্থকতা।

এই ছবির চরিত্রায়ণ সম্পর্কে পরিচালক অন্নপূর্ণা বসু জানালেন, ছবিটা করব ঠিক করার পর প্রথমেই কোয়েলদির (কোয়েল মল্লিক) কাছেই গিয়েছিলাম। উনি তখন গল্পটা শুনেই অবাক হয়ে বলেছিলেন এটা নিয়ে এখনও কোনও ছবি হয়নি! এক কথায় রাজি হয়ে যান। এর সঙ্গে দরকার ছিল এই সমাজে বোনের পাশে প্রতিমুহূর্তে দাঁড়িয়ে থাকা একজন দায়িত্ববান পুরুষকে যে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারবে সেই দাদার চরিত্রকে। তখন কৌশিক সেনের (Kaushik Sen) কথাই মনে আসে। মনে হয়েছিল সৌরভের চরিত্রটা ওঁর চেয়ে ভাল কেউ করতে পারবে না। এই ছবির অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আইনজীবী গোবিন্দকুমার লাহার যে চরিত্রে রঞ্জিত মল্লিক অভিনয় করেছেন, সেই চরিত্রের যে গঠন, যে আদর্শবাদ, যেভাবে তিনি কথা বলেন, যেভাবে জীবনযাপন করেন সেটার সঙ্গে অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিকের (Ranjit Mallick) ভীষণভাবে মিলে রয়েছে। অপর্ণা এবং সৌরভের মাঝে সেতুর মতো একটা চরিত্র হল অপর্ণার স্বামী। যে-চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী। এইভাবে একটা পর একটা সুতোয় গাঁথার মতো করেই চরিত্রগুলো নির্বাচন করেছি। চেষ্টা করেছি, কতটা সফল সেটা দর্শক বলবে। তবে হল-ভিজিটে গিয়ে আমার যা অভিজ্ঞতা হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। সেটা ভাল-খারাপের ঊর্ধ্বে।

দীর্ঘদিন পরে একটি পারিবারিক ছবিতে কাজ করলেন কোয়েল মল্লিক (Koel Mallick)। অপর্ণার ভূমিকায় তিনি অনবদ্য। অভিনেত্রীসুলভ গ্ল্যামার ঝেড়ে ফেলে কোয়েল এই ছবিতে অনেক বেশি ঘরোয়া, মধ্যবিত্ত সংসারের বউ হয়ে উঠেছেন। এছাড়া এই ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ দুটি চরিত্রে রয়েছেন অনির্বাণ চক্রবর্তী ও শাঁওলি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। ছবির চিত্রনাট্য, সংলাপ সদীপ ভট্টাচার্য। এই ছবিতে তিনটে গান রয়েছে যার সুরকার জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, গেয়েছেন রূপঙ্কর বাগচী, লগ্নজিতা চট্টোপাধ্যায় ও ইমন চক্রবর্তী। ছবির ক্যামেরা করেছেন অনুপ সিং। সুরিন্দর ফিল্মসের ব্যানারে এই ছবির প্রযোজক নিশপাল সিং (Nispal Singh)।

Related articles

পাঁচবার যান: তালিকায় ন্যায্য পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নিশ্চিত করতে নির্দেশ অভিষেকের

বিহার নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের সব পদক্ষেপেই স্পষ্ট হয়েছে ন্যায্য ভোটারদের বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়ায় সবথেকে বেশি...

যুদ্ধবিরতি! অরূপ মধ্যস্থ, কুণালকে ফুল দিলেন দেব

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেব-কুণাল যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস (Arup Biswas)। শুক্রবার টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে...

ফর্ম ফিলাপ পর্বে চা শ্রমিকদের বাড়ি যান: বিশেষ নির্দেশ অভিষেকের

জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে ভোটাদের ন্যায্য ভোটার হিসাবে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছানোর পথ। একদিকে ভোটার তালিকায় নাম থাকা নিয়ে নথি...

গোল করতে ব্যর্থ দুই দলই, মোহনবাগানকে টেক্কা দিয়ে সুপার কাপের সেমিতে ইস্টবেঙ্গল

সুপার কাপের ডার্বি ড্র। খেলার ফল ০-০। গোল পার্থক্যে এগিয়ে থেকে (Super CUP)সেমিফাইনালে চলে গেল ইস্টবেঙ্গল। বিদায় নিল...
Exit mobile version