এসআইআর(SIR) আতঙ্কে ফের মৃত্যু রাজ্যে। আগরপাড়া, ইলামবাজার, বারাকপুর, পূর্ব বর্ধমানের পর এবার হুগলির ডানকুনিতে আত্মঘাতী হলেন এক মহিলা। মৃতার নাম হাসিনা বেগম, বয়স ৬০।

জানা গিয়েছে, তিনি ডানকুনির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। প্রতিবেশী সূত্রে খবর, গত কয়েক দিন ধরে এসআইআর নিয়ে এলাকায় গুজব চলছে আর তার ফলেই মারাত্মক মানসিক চাপে ভুগছিলেন তিনি। সোমবার সকালে পরিবারের লোক তাঁকে অচৈতন্য অবস্থায় দেখতে পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনার খবর ছড়াতেই স্বাভাবিকভাবেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।

খবর পাওয়া মাত্রই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্থানীয় নেতৃত্বকে পরিবারের সদস্যদের পাশে থাকতে এবং প্রয়োজনীয় সবরকম সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে মৃতের পরিবারের সাথে দেখা করার জন্যও জানিয়েছেন। আজ, সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পরিবারের সাথে দেখা করবেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

বৃদ্ধার মৃত্যুর পর পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এসআইআর আতঙ্কে রাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল পাঁচ। SIR চালু হওয়ার পর থেকেই গোটা ঘটনায় রাজ্যজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। যদিও প্রশাসনের তরফে বার বার কোনরকম গুজবে কান না দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।

তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ”এসআইআর ইস্যুতে আর একটি মৃত্যুর খবর এসেছে। হাসিনা বেগম, ৬০ বছর বয়স, তিনি এসআইআর জনিত চাপ সহ্য করতে না পেরে, চিন্তায় উদ্বেগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়।” এই ইস্যুতে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ শানান। বলেন, ”এসআইআর যে প্যানিক বিজেপি তৈরি করেছে অর্থাৎ ধরে বার করে দেব, নাম কেটে দেব, বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেব এই চাপে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে যাচ্ছে। কেউ আত্মহত্যা করেছেন, কেউ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, কেউ উদ্বেগজনিত চাপে অসুস্থ হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।” এর পূর্ণাঙ্গ সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে বলে জানান কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, বিপজ্জনক দিকে আমজনতাকে ঠেলে দিয়েছে বিজেপি এবং তাঁদের দ্বারা প্রভাবিত জাতীয় নির্বাচন কমিশন। আতঙ্ক সৃষ্টি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক চক্রান্তের তীব্র নিন্দা এবং বিরোধিতা করছি, মন্তব্য তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত হাসিনা বেগম ডানকুনি পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। কিন্তু বয়সের কারণে মেয়ের সঙ্গে ২০ নম্বর ওয়ার্ডেই থাকতেন তিনি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ওই এলাকায় এসআইআর সংক্রান্ত একটি মিটিং হয়। এরপর থেকেই চিন্তায় ছিলেন ষাটোর্ধ্ব প্রবীণ ওই মহিলা। এর মধ্যেই তিনি জানতে পারেন তাঁর ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম নেই। পরিবারের দাবি, শনিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন হাসিনা বেগম। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়।

৪ নভেম্বর, মঙ্গলবার থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনিউমারেশন ফর্ম পূরণের কাজ শুরু হচ্ছে। তার আগে SIR আতঙ্কের জেরে এখনও অবধি পাঁচটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে এল। প্রসঙ্গত, মৃতার বাড়িতে যান ডানকুনি পুরসভার পুরপ্রধান হাসিনা শবনম। তিনি জানান, ‘‘এসআইআর নিয়ে রীতিমত আতঙ্কিত মানুষ। বিশেষ করে যাঁদের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম নেই। হাসিনা বেগমেরও নাম ছিল না বলে তিনি রীতিমত আতঙ্কে ছিলেন। এলাকায় আরও একজন এই চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’’

–

–

–



