বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফা চমকে দিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। প্রথম দফার নির্বাচনে ভোটদানের হার এক লাফে এতটা বেড়েছে, যা অনেক নির্বাচনী অঙ্ক গুলিয়ে দিয়েছে কার্যত। নির্বাচনের দুদিন পরে ভোটদানের সম্পূর্ণ হার প্রকাশ করে কমিশন (Election Commission) জানিয়েছে সর্বশেষ ভোটদানের হার (voter turnout) ৬৫.০৮ শতাংশ। আর এই অঙ্ক এক লাফে বেড়ে যাওয়ার যুযুধান দুই প্রতিপক্ষই হঠাৎ আশার আলো দেখা শুরু করেছে। একদিকে বিরোধী জোটের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ তেজস্বী যাদব (Tejashwi Yadav) দাবি করছেন, অপশাসনের বিরুদ্ধে মত গিয়েছেন বিহারের মানুষ। অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) দাবি করছেন, এই ৬৫ শতাংশ ভোটদান বিহারে (Bihar) ৬৫ ভোল্টের ঝটকা।

দেশে প্রায় ২৩ বছর পরে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনী (SIR) শুরু হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনের মুখে বিহার। ২০০২ সালে যখন দেশের এসআইআর প্রক্রিয়া চলেছিল তখন আঞ্চলিক দলগুলি থেকে রাজ্যগুলির শাসকদল সর্বোতভাবে সমর্থন করেছিল এসআইআর প্রক্রিয়াকে। বহু রাজ্য থেকে লক্ষ লক্ষ নাম বাদ পড়েছিল ভোটার তালিকা থেকে। কিন্তু কোনও প্রতিবাদের ঝড় ওঠেনি। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিহারেই ভোটার তালিকা (voter list) থেকে নাম বাদ গিয়েছে ৬৫ লক্ষ। তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে কড়া ধমক সুপ্রিম কোর্টের। তার জেরে ফের রিভিউ করে পূর্ণাঙ্গ তালিকা (final list) প্রকাশ করার সময়ও সেই সংখ্য়াটা একই থেকে গিয়েছিল। এতেই কমিশনের অদক্ষতা ফের একবার প্রমাণিত হয়েছে।

বিহারের মানুষ যে কমিশনের কারচুপির কড়া জবাব দিতে প্রস্তুত, তা-ই কার্যত ৭ নভেম্বরের প্রথম দফার নির্বাচনের পরে প্রমাণিত। ২০০০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিহারে সামগ্রিক ভোটদানের হার ছিল ৬২.৫৭ শতাংশ, যা বিহারের ভোটদানের হারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। কিন্তু এবার তা বেড়ে ৬৫.০৮ শতাংশ। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে বিরাট লাইন দিয়ে ভোট দিতে দেখা গিয়েছে বিহারের মহিলা ভোটারদের। বাস্তবে এসআইআর করে বিহারে সবথেকে বেশি ক্ষতির মুখে মহিলারা। যে ৬৫ লক্ষ মানুষের নাম বাদ গিয়েছে তার মধ্যে ২৩ লক্ষ মহিলা ভোটার (female voter)। সেই জবাব দিতেই ভোটদানে লম্বা লাইন দিয়েছিলেন মহিলা ভোটাররা, দাবি রাজনীতিকদের।

ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে ভোটদানের হার অত্যধিক বাড়লে তা চলতি শাসনযন্ত্রের বিরুদ্ধেই যায়, যদিও এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। তবে এই আপ্তবাক্যকেই পাথেয় করে এগোচ্ছে আরজেডি (RJD)। তেজস্বী যাদবের দাবি, বিপুল পরিমাণ ভোটদানে বিহারে জ্বলতে চলেছে পরিবর্তনের আলো। গোটাটাই মহাজোটের (Mahagatbandhan) পক্ষে।

একই রকম দাবি কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধীরও (Priyanka Gandhi)। তিনি দাবি করেন, যেভাবে ভোটদানের হার বেড়েছে, সেভাবেই প্রতিটি জনসভায় মানুষের যোগদান বেড়েছে। সভায় আমি যত কথা বলি, তার থেকে বেশি বলেন সাধারণ মানুষ। তাঁরা নিজেদের সুরক্ষিত ভবিষ্যতের দাবি জানাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: বিহারে প্রথম দফায় অতিরিক্ত ভোটদানে নতুন সমীকরণ! চিন্তায় শাসক শিবির

যদিও শনিবার বিহারের সীতামার্থির জনসভা থেকে আবার এই ভোটদানের হার বাড়াকে নিজেদের পক্ষে টানতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। তাঁর দাবি, ৬৫ শতাংশ ভোটদান, বিহারের জঙ্গলরাজের বিরুদ্ধে ৬৫ ভোল্টের ঝটকা। যদিও তিনি জঙ্গলরাজ বলতে কোন দলতে টার্গেট করলেন, তা অস্পষ্ট। কারণ বিহারে ক্ষমতায় এনডিএ জোট। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের আমলে খুন খারাপি ও দুষ্কৃতীমূলক কাজ যদি বেড়ে থাকে তবে তার শরিক উপমুখ্যমন্ত্রী বিজেপির সম্রাট চৌধুরীও, তা বলাই বাহুল্য। সেক্ষেত্রে ভোটদানের হারে বৃদ্ধি আখেরে কার ঝুলিতে লাভের অঙ্ক ঢোকাতে পারবে, জানা যাবে ১৪ নভেম্বর।

–

–

–

