নির্বাচন কমিশনের একের পর এক সিদ্ধান্তকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ও আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি সংবিধান ও আইনের নানা দিক তুলে ধরে কমিশনের পদক্ষেপের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন।

সাংসদের বক্তব্য, ২০০৯ সালে বাংলায় ডিলিমিটেশন বা সীমা পুনর্নির্ধারণ হয়েছে। আইন অনুযায়ী, তার আগের ভোটার তালিকা এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। কিন্তু ২০০২ সালের ভোটার তালিকাকে ভিত্তি করে ২০২৫ সালের বিশেষ সংশোধনী (SIR) করা হচ্ছে— যা তিনি ‘অবৈধ ও অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেন।

তিনি বলেন, “এখন নির্বাচন কমিশন যে এন্যুমারেশন ফর্ম বিলি করছে, তা না ভরলে ভোটার তালিকায় নাম থাকবে না— এই যুক্তি সংবিধানবিরোধী। কেউ যদি এত বছর ধরে ভোট দিয়ে আসেন, তাঁকে নতুন করে ফর্ম পূরণ করতে বলা মানে প্রথমে তাঁকে ভোটার হিসেবে বাতিল করা, তারপর আবার নাম তুলতে বাধ্য করা। এটা আইন অনুযায়ী কোনওভাবেই সম্ভব নয়।”

কমিশনের সাম্প্রতিক নির্দেশিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। আগে নিয়ম ছিল, যে ভোটার কোনও নির্দিষ্ট বুথের, তিনি সেখানেই বিএলএ-২ (বুথ লেভেল এজেন্ট) হতে পারেন। কিন্তু নতুন নিয়মে যেকোনও জায়গার ভোটারকে অন্য এলাকায় বিএলএ-২ হিসেবে নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কল্যাণবাবুর দাবি, “এই সিদ্ধান্ত বিজেপিকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য নেওয়া হয়েছে। বাংলার প্রায় সব বুথে তৃণমূল কংগ্রেসের এজেন্ট রয়েছে, দু-এক জায়গায় সিপিএমও আছে। কিন্তু বিজেপির প্রতিনিধিদের দেখা যায় না। তাই বাইরে থেকে লোক এনে ফাঁক পূরণের চেষ্টা চলছে।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “নির্বাচন কমিশন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী সেটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন। এটা প্রমাণ করে কমিশন বিজেপির ইশারাতেই চলছে।”

নন্দীগ্রাম ও তমলুকের ভোটার তালিকা নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর সাম্প্রতিক পদক্ষেপকেও কটাক্ষ করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, “যে ব্যক্তি নিজে এসবের সঙ্গে যুক্ত, তার এখন নাটক করে কমিশনে দৌড়ঝাঁপের কোনও মানে নেই। দায় ও দায়িত্ব তো ওরই।”

তৃণমূলের এই বর্ষীয়ান সাংসদের মতে, নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক উদ্যোগ রাজ্য রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং ভোট প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

আরও পড়ুন – এশিয়ার প্রথম মহিলা হিসেবে ডি-লিট মমতাকে, জানাল ওকায়ামা বিশ্ববিদ্যালয়

_

_
_


