মহাকাশের বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে মানুষের পাঠানো মহাকাশ-দূত, দেখা মিলল কি ‘তাদের’! এক, দুই, তিন, চার করতে করতে প্রায় পাঁচ দশক পেরোলো। তবু দুনিয়ার সবথেকে চর্চিত প্রশ্নটার উত্তর মিলল না এখনও। পৃথিবীর বাইরে সত্যিই কি অন্য কোথাও কোন প্রাণ আছে (Aliens existence)? কল্পবিজ্ঞানের সব ভাবনাদের সেলুলয়েডই আটকে থাকাটা আর মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরেই তাই মহাকাশ দূত পাঠিয়ে রহস্য সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। অবশেষে সৌরজগতের সীমান্তে পৌঁছে গেল ভয়েজার (Voyager)। তাহলে কি এবার সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ? দেখা হবে তাদের সঙ্গে? কী ভাবে কথোপকথন শুরু হবে? কল্পনার মতোই কি তাদের বাস্তবের রূপ নাকি…. এই এতগুলো প্রশ্নের মূল উপজীব্য ভিনগ্রহীরাই। যাদের সন্ধান চলছে সুদূর অতীত থেকে। আর এই খোঁজ করতে করতে মানুষের স্বপ্নযান ভয়েজার ১ ও ভয়েজার ২ এখন সৌরজগতের ইন্টারস্টেলার ফেজে। কী আছে ওই দুই মহাকাশযানে?


অচেনাকে চেনা, অদেখাকে দেখা আর অজানাকে জানার আগ্রহ মানুষের চিরকালের। নিজের লক্ষ্য সফল করতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে একের পর এক অসাধ্য সাধন সম্ভব করতে পেরেছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী। কিন্তু এখনও অনেকটা বাকি। হয়তো এমন কেউ কোথাও আছে যে বা যারা মানুষের থেকেও অনেকটা উন্নত। তাদের খুঁজে চলেছে ভয়েজার। ১৯৭৭ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু করেছিল ভয়েজার ২ ও ভয়েজার ১। ২০১২ সালে ভয়েজার ১ ইন্টারস্টেলার স্পেসে ঢুকে পড়েছিল। ভয়েজার ২ আরও কয়েক বছর পরে ২০১৮ সালে সেই জগতে প্রবেশ করে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসেব ধরলে আমাদের নীল রঙের গ্রহ থেকে সে চলে এসেছে ২৪৯০ কোটি কিলোমিটার দূরে। এই দুই মহাকাশযানের সৌজন্যেই জানা গেছে ইন্টারস্টেলার স্পেসে ভেসে বেড়ায় লক্ষ লক্ষ বছর আগে মৃত নক্ষত্র থেকে নির্গত মহাজাগতিক পদার্থ। এই ভয়ে যার একের পর এক তথ্য দিয়ে গেছে পৃথিবীতে।দুটি যানেই রয়েছে এক খণ্ড ইউরেনিয়াম যার ভিতরে অবস্থিত তেজস্ক্রিয় ঘড়ি সঙ্গে ১২ ইঞ্চির রেকর্ডে সৌরজগতের মানচিত্র।সারা বিশ্বের সুরের নমুনা থেকে শুরু করে মানুষের পাঁচহাজার বছরের সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞান রয়েছে সেখানে।


১৯৯০ সালে ভয়েজার ১ একটা বিশেষ ছবি তুলেছিল যেখানে নীল বিন্দু নজর কাড়ে বিজ্ঞানীদের। ‘পেল ব্লু ডট’ নামের সেই ছবিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কার্ল সাগান একই নামের বই লিখে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এই একটা বিন্দু বুঝিয়ে দেয় সুবিশাল ব্রহ্মাণ্ডে মানুষের অবস্থান কত ক্ষুদ্র। বছরের পর বছর কাজ করতে করতে ২০২৩ সালে আচমকা বিগড়ে ভয়েজার। এমন কিছু তথ্য পাঠাতে শুরু করে যা বিজ্ঞানীদের ভাষায় অর্থহীন। যদিও পৃথিবীর সংকেত রিসিভ করতে তার কোনও সমস্যা হয়নি। অনুসন্ধান করে জানা যায় চিপের গোলমালের কারণেই এই ঘটনা যা পরবর্তীতে সারিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? মোটামুটি ২০৩৬ সালের মধ্যেই আর ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যাবে ভয়েজার ১ ও ২। হয়তো তখন দেখা হবে ভিনগ্রহীদের সঙ্গে যা পৃথিবীর মানুষ জানতে পারবেনা। কিন্তু আজ যা কল্পনায় কোনও একদিন তা সত্যি হয়ে অনেক দূরে থাকা কোনও প্রাণ জানবে আমাদের গ্রহের কথা। সংস্কৃতির আদান-প্রদানের মাধ্যম হয়ে উঠবে এই ভয়েজার। অন্য কোনও জগতের বাসিন্দারা হয়তো মানুষের স্বপ্নযানে সমৃদ্ধ সংকেত পড়ে জানতে পারবে নক্ষত্রের পরিবারের এক গ্রহের কথা। উল্লেখ থাকবে আমাদেরও। পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা হয়তো জানতে পারবেন না কিন্তু স্বপ্নটা বেঁচে থাকবে, দূরে অনেক দূরে যেখানে নীল বিন্দুর নাগালটুকুও পাওয়া যায় না।

–

–

–

–

–

–

–


